হযরত মূসা (আঃ)-এর সত্তর জন প্রতিনিধির সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে প্রত্যাবর্তন
বনী ইস্রাইলের সত্তর জন প্রতিনিধিসহ হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন। তারা তাদের জাতির লোকদের সামনে তূর পাহাড়ে গমনের পর যা যা ঘটেছে তার সবই একে একে বর্ণনা করল। অতঃপর তারা এ কথাও বলল যে, হযরত মূসা (আঃ) যা কিছু বলছেন তার সবই সত্য এবং বাস্তব। তার কথায় এবং কাজে বিন্দু মাত্র সন্দহের কোন অবকাশ নেই। তিনি আমাদের কাছে যে গ্রন্থ নিয়ে এসেছেন তা নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলার কিতাব। তবে তারা নিজেদের পক্ষ হতে একটু বাড়িয়ে বলে দিল যে, তোমরা এ কিতাবে উল্লেখিত নির্দেশ অনুযায়ী যতটুকু পালন করতে পার তা করবে। আর যা করতে পারেব না তা ক্ষমা করে দেয়া হবে।
যাদের স্বভাব নির্মল ও নৈতিকতাপূর্ণ তাদের স্বভাবের চাহিদা হল যে, এমন সময় আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করা। তার রহমত ও অনুগ্রহের প্রকাশ দেখে তার দাসত্বের প্রতি নিজকে পরিপূর্ণ সোপর্দ করে দেয়া। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য তারা তা না করে নিজেদের অতীত ইটধর্মিতার স্বভাবের উপরই অটল রইল। প্রতিনিধি দল কর্তৃক হযরত মূসা (আঃ) এর এবং তার কাছে মওজুদ কিতাব আল্লাহ তাআলার কিতাব হওয়ার সত্যতার সাক্ষ্য দেয়ার পরও তারা তার কাছে মওজুদ কিতাব আল্লাহ তাআলার কিতাব হওয়ার সত্যতার সাক্ষ্য দেয়ার পরও তারা একে সহজভাবে গ্রহণ না করে বনী ইসরাইলের চিরাচরিত বক্রস্বভাবের পরিচয় দিল। তাদের বক্তব্য হল যে, এ কিতাবের আহকামসমূহ খুব কঠিন। এ গুলোর উপর আমল করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে নির্দেশ দিলেন তুর পাহাড়টি এনে বনী ইসরাইলের মাথার উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দিতে। দেখলে যেন মনে হয় পাহাড় এখনই বুঝি তাদের উপর পতিত হয়ে তাদেরকে নিষ্পেষিত করে ফেলবে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
অর্থঃ স্মরণ কর যখন আমি পাহাড় তাদের উপরে উঠিয়ে ছিলাম। দেখলে মনে হত যে তা একটি ঝুলন্ত ছাদ। তারা ধারণা করেছিল যে এ তারা তাদের উপর পতিত হচ্ছে।
আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে বলা হল যে, আমার তরফ থেকে অবর্তীণ তৌরাত কিতাব খুব মজবুতির সাথে গ্রহণ কর। আর এতে আহকাম রয়েছে তা স্মরণ কর। এতে তোমরা পরহেযগার হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
অর্থঃ তখনকার তুর পাহাড় স্মরণ কর যখন আমি তোমাদের থেকে ওয়াদা নিয়েছিলাম এবং তোমাদের উপর তুর পাহাড় উত্তোলন করেছিলাম তখন আমি বলেছিলাম যে, তোমাদেরকে আমি যে কিতাব প্রদান করেছি তা খুব মজবুতির সাথে ধর এবং এতে যে সব আহকাম রয়েছে তা স্মরণ কর। যাতে তোমরা পরহেযগার হতে পার।
বনী ইস্ররাইলীরা তখন গগন বিধারী চিৎকার করে উঠল। তারা দেখল যে এখন আর কোন উপায় নেই। তৌরাত গ্রহণ করতেই হবে। না করলে আর রেহাই নেই। অগ্যতা তারা তৌরাত কিতাব গ্রহণ করার পরিপূর্ণ ওয়াদা প্রদান করল। তৌরাতের সমস্ত আহকাম মেনে চলবার পাক্কা ওয়াদা করল। তখন আল্লাহ তাআলা পুনরায় জিব্রাইল (আঃ) কা আদেশ নিলেন তাদের উপর হতে পাহাড় সরিয়ে নেওয়ার জন্য। হযরত জিব্রাইল (আঃ) পাহাড় সরিয়ে পুনরায় যথাস্থানে রাখলেন। বনী ইস্রাইলরা বিপদমুক্ত হল। কিন্তু তাদের ওয়াদা পালনের সুবিধার্থে তাদের বার গোত্রের বার জন নিয়োগ করা হল। প্রত্যেক গোত্র প্রধানকে বল হল সে নিজেও আল্লাহ পাকের কাছে প্রদত্ত ওয়াদা করবে এবং স্বীয় গোত্রের লোকেরা যাতে যথার্থেভাবে পালন করে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।
অর্থঃ এবং আমি বনী ইস্রাইল থেকে ওয়াদা গ্রহণ করেছিলাম আর তাদের মধ্যে হতে বার জন সর্দার নির্ধারতি করেছিলাম।
আল্লাহ তাআলা যে কেবল তাদের মধ্যে বার জন গোত্রের প্রধান নিযুক্ত করে এবং তাদের উপর স্ব স্ব গোত্রের দায়িত্ব ক্ষান্ত হয়েছেন তা বরং তাঁদেরকে ওয়াদা পালনের উৎসাহ প্রদানার্থে তাঁদেরকে সুসংবাদও দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করলেন, যদি তোমরা আমার কাছে প্রদ্দত ওয়াদা যথাযথভাবে পালন কর এবং স্ব স্ব গোত্রকে পালন করতে উৎসাহীত কর তা হলে জেনে রাখ যে, আমার সাহায্য ও সহযোগিতা তোমাদের সাথে সাথে থাকবে। তাই আল্লাহ তাআলা পরিষ্কারভাবে ঘোষনা করেন যে, আমি তোমাদের সাথে আছি।
আয়াতাংশ দিয়ে আল্লাহ পাক তাঁদেরকে বলে দেন যে, আমার কাছে দেয় ওয়াদা যদি তোমরা পালন কর তবে আমার সাহায্য সর্বদা তোমাদের সাথে থাকবে। তোমাদের মন ও চিন্তা স্পর্কে আমি সম্পূর্ণ জ্ঞাত রয়েছি। তোমাদের কোন কাজ, কোন চিন্তা, কোন ইচ্ছা আমার জানার বাইরে নয়। তোমাদের হৃদয়ের গহীন কোণের সুক্ষ্মাতি ইচ্ছাটিও আমার কাছে সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল। আমার কাছে তোমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতির পরিপন্থি কোন কাজ করে আমার ধরপাকড় হতে বাচবার কোন উপায় নেই।
অনন্তর আল্লাহ তাআলার তাঁদেরকে কতগুলো বিশেষ কর্মের নির্দেশ দেন যেগুলো পালন করা তাদের ওয়াদা পালনের দলীল হিসেবে গণ্য হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
অর্থঃ তোমরা নামাযের পাবন্দী করতে থাকলে, আর যাকাত আদায় করতে থাকলে, আমার সমস্ত রাসূলের প্রতি ঈমান আনলে, তাদের সাহয্য করতে থাকলে এবং আল্লাহকে উত্তমরুপে কর্জ দিতে থাকলে আমি অবশ্যই তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেব এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাত প্রবেশ করাব যার তলদেশে নিয়ে ধর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে।
অতঃপর যে ব্যক্তি এর পরও কুফুরী করল সে সোজা সরল পথ হতে দূরে সরে পড়ল।
বনী ইস্রাইল যেন হিদায়েতের পথে থাকতে পারে রজ্জন্য আল্লাহ তাআলা সমস্ত বিষয়সমুহ পৃথক পৃথক বর্ণনা করার পরও তাদের ঐতিহ্যগত বক্রস্বভাবের কারণে তারা বার বার আল্লাহ তাআলার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়েছে এবং তার কাছে প্রদত্ত ওয়াদা ভঙ্গ করেছে।
পুণঃ পুণঃ তাদের উপর আযাব নাযিল হয়েছে। আবার আল্লাহ তাআলা মাফ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলার এত রহমত ও অনুগ্রহের পরও বনী ইসরাইলীরা অকৃতজ্ঞ বান্দাহ হিসেবে নিজেদেরকে প্রকাশ করেছে।
অর্থঃ অনন্তর তোমরা তোমাদের প্রতিশ্রুতি হতে ফিরে গিয়েছ। তোমাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও রহমত না হলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হয়ে যেত।