হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অপেক্ষায় আবু বকর (রাঃ)
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তির অনেকদিন পূর্ব থেকেই তিনি অনুভব করেছিলেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের হেদায়েতের জন্য ভবিষ্যতে কুরাইশ বংশ হতে যে কোন একজনকে নবুয়্যত দান করবেন।
একদা হযরত আবু বকর (রাঃ) স্বপ্নে দেখলেন, মক্কা অঞ্চলে খুব সুন্দর চাঁদ উদয় হয়েছে, সে চাঁদের জ্যোতি আরবের সকল ঘরে ঘরে দিয়ে পড়েছে। এরপর তিনি আরো দেখেন, ঐ চাঁদের সম্পূর্ণ জ্যোতি হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর কোলে এসে পড়েছে। এ চাঁদের জ্যোতির ব্যাপারে হযরত আবু বকর (রাঃ) জানতে চাইলে ব্যাখ্যাকারকরা বলেন, “অদূর ভবিষ্যতে মক্কা শহরে একজন শেষ নবী প্রেরিত হবেন তখন আপনি ঐ শেষ নবীর অনুসরণ করার সু-খ্যাতি লাভ করবেন।” খুব বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মুখের চেহারার উজ্জ্বল পানে চেয়ে নবুয়্যত প্রাপ্তির আভাস পেলেন।
এ জন্যই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন তাঁকে ইসলামের পয়গাম দিলেন তখন তিনি আর কাল বিলম্ব না করে সাথে সাথে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলেন। মক্কা অঞ্চলের একজন খ্যাতনামা সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রচুর অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছিলেন। মক্কার জনগণ হযরত আবু বকর (রাঃ) কে ধনবান ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে খুব সম্মান করত।
ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পর তিনি তাঁর সকল ধন-সম্পদ ইসলাম প্রচার ও মুসলিম কৃতদাসদের মুক্তির জন্য ব্যয় করলেন। এ জন্যই তাঁর অনেক ধন-সম্পদ আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেল। এ কারণেই তিনি দারিদ্র্যের ক্লেশকে বরণ করে নিয়েছিলেন সানন্দে। হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর এ মহান আত্মত্যাগে তখনকার কুরাইশরা অবাক হয়ে তাঁকে ভর্ৎসনা করতেন।
একদা এক কুরাইশ বিদ্রূপ করে বলে ছিল, হে আবু বকর, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? অনেক ধন-সম্পত্তি, টাকা-পয়সা ছিল তোমার। তোমার খেয়ালের ভুলে তোমার সব ধন-সম্পত্তি অপচয় করে এখন তুমি নিঃস্ব, দরিদ্র। যে শ্রদ্ধা ও মান-মর্যদা তোমার ছিল, এখন তোমার সব শেষ হয়ে গেল। তোমার এ অধঃপতনের একমাত্র কারণ হল তুমি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) – কে সাহায্য করতে গিয়ে তুমি আজ পথের ফকীর।
তাদের এসব কথা শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ) আস্তে আস্তে হাসছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ধন-সম্পদ, যৌবন কোনদিন স্থায়ী হয় না। আল্লাহর রাস্তায় নিজের জীবন সমর্পন করেছি, এখন আর টাকা-পয়সা, ধন-দৌলতের ভরসা করে আমার কি হবে! এ ধরনের টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত নিজের জীবন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে যায়। এ পৃথিবীর টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদের বিনিময়ে যদি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দয়ার পরশ একটু পেতে পারি তাহলে এটাই আমি আমার সৌভাগ্য বলে মনে করব। আমার এ পৃথিবীর টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদের কোন প্রয়োজন নেই।
একদা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কা’বা গৃহের কাছে বসে আল্লাহর ইবাদাত করতে ছিলেন। সে মুহূর্তে কতিপয় কুরাইশ ব্যক্তি বুদ্ধি করল, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবন এ সুবর্ণ সুযোগে শেষ করে ফেলতে হবে। আবু জেহেলও তাদের মধ্যে ছিল। যেমন কথা তেমন কাজ। আবু জেহেল এগিয়ে এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গলায় কাপড় দিয়ে পেচিয়ে হত্যা করে ফেলতে চাইলো। ভাগ্যক্রমে অদূরেই হযরত আবু বকর (রাঃ) সেখানে হাজির ছিলেন। হঠাৎ এ নির্মম কাণ্ড দেখে হযরত আবু বকর (রাঃ) দৌড়ে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে আসলেন এবং আবু জেহেলকে সে স্থান হতে তাড়িয়ে দিলেন।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে তাঁর সাহাবীদের জীবন বিপন্ন করেই ইসলাম ধর্মের প্রচারণার কাজ সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয়েছে।
কাফেরদের হাতে হযরত আবু বকর (রাঃ) বহুবার নির্যাতিত হয়েছিলেন। এরপরও তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারণার কাজে ক্ষান্ত হননি। তিনি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নাম স্মরণ করে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছিলেন।