হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে কাফেরদের ষড়যন্ত্র এবং শয়তানের উপস্থিতি-শেষ পর্ব
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে কাফেরদের ষড়যত্র এবং শয়তানের উপস্থিতি- ২য় পর্ব
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, ওমরকে আসতে দাও, বাঁধা দিও না। হযরত ওমর (রাঃ) সরাসরি গৃহে প্রবেশ করে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নূরানী চেহারা দর্শনে আত্মহারা হয়ে দ্বীধাহীন ভাবে বলে উঠল, আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। হযরত ওমর (রাঃ)-এর কালেমা পড়ার সাথে সাথে মুসলমানদের মধ্যে আনন্দের হিল্লোল উঠল। রাসূল (সাঃ) খুশিতে নারায়ে তকবীর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিলেন। সমবেত কণ্ঠে আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে সমগ্র আরব কেঁপে উঠল। আরবের পর্বতমালায় তার প্রতিধ্বনি উঠল। চতুর্দিকেই হর্ষধ্বনি আর হর্ষধ্বনি। হযরত ওমরের পূর্বে মাত্র ঊনচল্লিশ জন নর-নারী মুসলমান হয়েছিল। হযরত ওমর (রাঃ) সহ চল্লিশ জন হল। এ চল্লিশ জনের ধ্বনিতে সারা আরব মুখরিত হয়ে উঠল।
হযরত ওমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানগণ চুপে চুপে কুরআন পাঠ করত। ঈমান ও ইসলামকে গোপন রাখত। কাফেরদের ভয়ে প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করত না। হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জীবনে মরণে আমরা কি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নই? রাসূল কারীম (সাঃ) বললেন অবশ্যই। হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, তা হলে আমরা কেন গোপনে আল্লাহর নাম নিব।
দ্বীনকে কেন গোপন রাখব? আল্লাহর ঘরে তারা মূর্তির নাম বুলন্দ করবে অথচ ঘরের মালিকের নাম আমরা গোপন রাখব। তা কখনও হতে পারে না। রাসূল কারীম (সাঃ) বললেন, ওমর আমরা সংখ্যায় কম। আমাদের উপর সে উৎপীড়ন ও নির্যাতন চলছে তা তোমার অজানা নেই। হযরত ওমর (রাঃ) ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি কাফেরদের মজলিশে ঈমানের কালেমা বুলন্দ করব। এ বলে হযরত ওমর (রাঃ) সোজা হেরেম শরীফে চলে যান। খানায়ে কা’বার তাওয়াফ করতে লাগলেন, তাঁর উন্মুক্ত তরবারী এখনও পূর্বের অবস্থায়ই রয়ে গেছে। হযরত ওমর (রাঃ) উচ্চঃস্বরে কালেমা পড়তে লাগলেন। আর কোরাইশ সর্দারগণের নাম ধরে ডেকে ডেকে বলতে লাগলেন। তোমাদের মধ্যে কে আছে আমাকে বাঁধা দিবার-আস, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি ঈমানের কালেমা পড়েছি। মুহাম্মদী দ্বীন কবুল করেছি। যদি কেউ তার স্ত্রীকে বিধবা করতে ইচ্ছা রাখ অথবা ছোট শিশুকে এতীম করতে চাও, তা হলে ওমরের সামনে আস। আবু জাহেল, আবু লাহাব প্রমুখ কোরাইশ সর্দারগণ চতুর্দিকে সমবেত হয়ে ওমরের মুখের পানে শুধু তাকিয়ে রইল। কারও সাহস হয় নি ওমরের কথার উত্তর দিতে।
হযরত ওমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ ইসলামে এক নবযুগের সৃষ্টি করেছে। ইসলাম ধর্মে বিরাট বিপ্লব পয়দা হয়েছে। মুসলমানগণ আর গোপনে নামাজ পড়ত না। হক ও বালতের মধ্যে প্রকাশ্য সংগ্রাম শুরু হয়ে গেল।
হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- হযরত ওমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করার পর আসমান হতে হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসূলে পাক (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ওমরের ইসলামে আসমানের অধিবাসী ফেরেশতাগণ সুসংবাদ জ্ঞাপন করেছে।
হযরত ইবন মাসউদ বলেছেন, হযরত ওমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর হতে আমরা সর্বদাই সম্মানিত ছিলাম। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর আমরা প্রকাশ্যে কা’বার চতুষ্পার্শ্বে দলবদ্ধ হয়ে তাওয়াফ করতাম। ইতোপূর্বে তার কোনটিই আমাদের জন্য সম্ভব ছিল না।
সহীহ বোখারী শরীফে আছে, হযরত ওমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণে কাফেরদের মধ্যে এক মহা হাঙ্গামা দেখা দিল। আস বিন ওয়ায়েল জিজ্ঞেস করল, হাঙ্গামার কারণ কি? মানুষ বলল, হযরত ওমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাই সকলে দিশাহারা হয়ে হাঙ্গামা করছে।
হযরত ওমর (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে লক্ষ্য করে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমার নিকট আপনার চেয়ে ঘৃণিত কোন বস্তু এ পৃথিবীতে আর কিছুই ছিল না। এখন আমার নিকট আপনার চেহারা হতে প্রিয় আসমানের নিচে জমীনের বুকে আর কিছু নেই।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে কাফেরদের ষড়যত্র এবং শয়তানের উপস্থিতি-১ম পর্ব