হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে কাফেরদের ষড়যন্ত্র এবং শয়তানের উপস্থিতি-২য় পর্ব
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে কাফেরদের ষড়যত্র এবং শয়তানের উপস্থিতি-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একথা শুনে ওমরের শিরায় আগুন জ্বলে উঠল। উন্মুক্ত তরবারী নিয়ে ভগ্নীর গৃহে প্রবেশ করল। ভগ্নী তখন আল্লাহর কালামের সূরায়ে তোয়াহা তিলাওয়াত করছিলেন। ওমরের আগমনের শব্দ শুনে সে কুরআন শরীফ বন্ধ করে ফেললেন এবং গোপন করে ফেললেন। ওমর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি পাঠ করছিলে? আমাকে বল। ফাতেমা বললেন, কিছুই না। ওমর বললেন, আমি শুনতে পেয়েছি তোমরা নাকি উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছ। এ কথা বলে ওমর তার ভগ্নীপতিকে আক্রমণ করে প্রহার করতে আরম্ভ করলেন। ফাতেমা তার স্বামীর উপর উপুড় হয়ে পড়ল এবং ওমরকে প্রহার বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। কিন্তু ওমর আরও অধিক প্রহার করতে লাগলেন এবং ভগ্নিকে ও প্রহার করলেন। ওমরের প্রচণ্ড আঘাতে ভগ্নী ও ভগ্নীপতি উভয়ের দেহ রক্ত ধারায় পরিণত হল।
ওমরের নির্মম প্রহারে অতিষ্ট হয়ে ভগ্নী বলল, ওমর! আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। তুমি যত ইচ্ছা প্রহার করতে পার। কিন্তু আমরা ইমান ছাড়তে পারব না। আমাদের অন্তরে ঈমানের আলো এত শক্তিশালী ও মজবুত হয়ে বসেছে যে, শত অত্যাচার ও আঘাত তিলমাত্র ঈমানকে স্থানচ্যুত করতে পারবে না। তুমি আমাদের দেহ হতে প্রাণ বের করতে পার কিন্তু অন্তর হতে ঈমান বের করতে পারবে না। ভগ্নীর কথা শুনে ওমরের পাষাণ হৃদয় বিগলিত হয়ে গেল। তাদেরকেও প্রহার বন্ধ করল। একটু পরই ভগ্নীকে বললেন, তুমি যা পড়ছিলে আমাকে তা দেখাও। ওমরের অন্তরে পবিত্র কুরআনের শব্দগুলো আছর করেছিল। ভগ্নি ওমরকে কুরআন দিতে অস্বীকার করলেন। বললেন, তুমি নাপাক, আল্লাহর কালাম পবিত্র লোক ছাড়া অন্য কেহ স্পর্শ করতে পারে না। যদি তুমি কুরআন দেখতে চাও তা হলে পাক পবিত্র হয়ে আস।
অতঃপর ওমর গোসল করে আসলেন। তারপর ভগ্নী তাঁর হাতে কুরআনের অংশগুলো তুলে দিলেন। ওমর সূরায়ে তোয়াহার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে গেলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে বলল উঠল আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। হযরত খব্বাব ফাতেমার গৃহে লুকিয়ে ছিল। এ অবস্থা দেখে সে সামনে এসে বললেন, হে ওমর! হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দোয়া আল্লাহর দরবারে তোমার শানে কবুল হয়েছে।
আমি গতকাল রাসূল (সাঃ)-কে দোয়া করতে শুনেছি। হে আল্লাহ! তুমি আবু জাহেল অথবা ওমরের দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করে দাও। হে ওমর! তুমি আল্লাহকে ভয় কর। ওমর বললেন, আমাকে রাসূল (সাঃ)-এর নিকট নিয়ে চল। তিনি কোথায় আছেন? রাসূল (সাঃ) তখন ছাফা পর্বতের পাদদেশে হেরেমের এলাকায় জায়েদ বিন আরকামের ঘরে অবস্থান করছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) উন্মুক্ত তরবারী নিয়ে সে গৃহের প্রতি ধাবিত হলেন। হযরত হামজা (রাঃ) ঐ গৃহের দরজায় দণ্ডায়মান অবস্থায় ছিলেন। ওমর (রাঃ)-এর আগমনে অনেকেই ভীত হিয়ে গেল। গত রাত্রে দারুন নদওয়ায় মজলিশের ফায়সালা সম্বদ্ধে তারা অবগত ছিল। মনে করল, সে প্রস্তাব অনুযায়ী ওমর নবীজীকে শহীদ করার জন্য আসছে। হযরত হামজা (রাঃ) বললেন, যদি ওমর সৎ উদ্দেশ্যে এসে থাকে তা হলে ভাল কথা আর যদি অসৎ উদ্দেশ্যে এসে থাকে তা হলে তার তরবারী দিয়ে তাকে শেষ করে দিব।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে কাফেরদের ষড়যত্র এবং শয়তানের উপস্থিতি-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন