হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শোক বর্ষ-১ম পর্ব
নবুয়তের দশম বর্ষে শাওয়াল মাসে শেয়াবে আবি তালেব হতে বনী হাশেমের মুক্তি হয়েছিল। আল্লাহর রাসূল এবং মুসলমানগণ সাময়িকভাবে কাফেরদের অত্যচার হতে অব্যাহতি পেলেন। কিন্তু এ বছর রাসূল (সাঃ)-এর জন্য জীবনের সবচেয়ে অধিক বেদনার বছর হয়ে দাঁড়াল। তাঁর জীবন সঙ্গিনী হযরত খাদীজা (রাঃ) এবং পরম হিতৈসী চাচা আবু তালেব উভয়ে চিরদিনের মত তাঁকে ছেড়ে যান।
উপত্যকা হতে বের হয়ে আশার পরই আবু তালেব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং জিন্দেগী হতে নিরাশ হয়ে যান। কোরাইশগণ মনে করল, আবু তালেব বিদায় হওয়ার পথে, যদি আমাদের মধ্যে এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রের মধ্যে একটা মীমাংসা করে যেত অনেক ভাল হত। এ উদ্দেশ্যে কোরাইশ সর্দারগণ আবু তালেবের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আবু তালেব! তুমি আমাদের মধ্যে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। তোমার মৃত্যু সম্মুখীন। মুহাম্মাদের সাথে আমাদের একটা মীমাংসা করে যাও। আমাদের এখন দাবী আর কিছু নয়। শুধু এ দাবী করছি যেন সে আমাদের বিরুদ্ধে কিছু না বলে। আমার ও তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলব না। আবু তালেব নবীজীকে ডেকে প্রস্তাব পেশ করলে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেন, আমি তাদের সকল প্রস্তাব মেনে নিব। আপনারা আমার একটি কথা রক্ষা করুন। সমগ্র আরব আযম আপনাদের পদানত হবে। আবু জাহেল বলল, হ্যাঁ। তা অবশ্যই করব। আপনার কথা কি বলুন। রাসূল (সাঃ) বললেন, আপনারা বলুন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এ কথা শুনা মাত্র তারা চিৎকার করে উঠল এবং বলল, দেখ! মুহাম্মাদ সমস্ত মাবূদকে এক মাবুদ করতে চায়-তা আমরা কখনও বরদাশত করতে পারি না। এ বলে তারা প্রস্তান করল।
আবু তালেবের অবস্থা ক্রমাগত মন্দের দিকে চলল। জীবনের শেষ মুহূর্তে উপস্থিত হল। রাসূল (সাঃ) আবু তালেবের শিহরে উপস্থিত হয়ে অতি করুন স্বরে নম্র ভাষায় তাকে বলতে লাগলেন, হে চাচা। আপনার জীবনের শেষ সময়। দুনিয়ার কাজ করার সব আপনার জন্য চিরতরে বদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আখেরাতের কঠিন মঞ্জিল আপনার সম্মুখে আসছে যেখানে স্থায়ী সুখ-দুঃখের মুয়ামেলা। শয়তান এবং আপনার দুশমনগণ আপনাকে ঈমান হতে বিরত রাখার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু আপনি আমার জীবনে যে উপকার করেছেন তার বিনিময়ে আপনার সামান্য উপকারও যদি করতে পারি তা হলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।
আপনি দোযখের অগ্নিশিখায় জ্বলে পুড়ে মরবেন, দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করবেন, আমি তা দেখে কিভাবে মনকে প্রবোধ দিব? আপনি অন্ততঃ চুপে চুপে আমার কানে কানে একবার কালেমা পড়ুন। তা হলে আপনার জন্য সুপারিশ করার সুযোগ লাভ করতে পারব। এমন সময় আবু জাহেল ও অন্যান্য সর্দারগণ আবু তালেবকে দেখার জন্য উপস্থিত হল। তারা রাসূল (সাঃ)-এর কথা শুনে আবু তালেবকে বলল, খবরদার আবু তালেব; মৃতুকালে বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে বে-ঈমান হইও না। মুহাম্মাদের কথায় ভুল কর না। আবু তালেব বলল, হে ভাতিজা! আমি এখন কালেমা পড়লে লোকজন বলবে আবু তালেব মরণকালে ভাতিজার নিকট হার মেনেছে। তাই আমি আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। এ কথার পর আবু তালেবের প্রাণ বের হয়েছে। কুফরের উপরই আবু তালেবের মৃত্যু হয়েছে। রাসূল (সাঃ) ব্যতিত অন্তরে সেখান হতে প্রস্থান করলেন এবং বললেন, হে চাচা! আপনি দুনিয়ায় আমার সঙ্গে সর্ব প্রকারে আশাতীত সদ্ব্যবহার করলেন কিন্তু আখিরাত হতে ষোল আনা মাহরুম রইলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শোক বর্ষ ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন