হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বক্ষ বিদারণ
হালিমার নিকট হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দু’বছর রইলেন। যখন দু’বছর অতিবাহিত হল একদিন তাঁর দুধ ভাইদের সাথে তিনি ময়দানে মেষ চরাতে যান। তিনি পশুগুলির মধ্যে ঘোরা ফেরা করছেন, এমন সময় দু’জন ফেরেস্তা এসে তাঁকে শোয়ায়ে ফেলল, এবং তাঁর বক্ষ-বিদারণ করল। তাঁর দুধ ভাই আবদুল্লাহ দৌড়ায়ে বাড়ীতে গেল এবং মাতা পিতাকে বলল, আজ আমার দুধ ভাইকে দু’জন সাদা পোশাক পরিহিত অপরিচিত ব্যক্তি এসে মাটিতে শোয়ায়ে তাঁর বক্ষ বিদারণ করেছে। তাঁকে ঐ অবস্থায় রেখে এসেছি।
বিবি হালিমা এবং তাঁর স্বামী হারেছ বিন আবদুল উজ্জা অধিরে হয়ে ছুটে গেলেন। দেখতে পান বালক মুহাম্মাদ (সাঃ) ভীত অবস্থায় দণ্ডায়মান আছেন। হযরত হালিমা তাঁকে টেনে কোলে তুলে নিলেন এবং ঘটনা জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, দ’ব্যক্তি এসে আমার বক্ষ ফেড়ে ভিতর হতে কি যেন বের করে নিয়েছে। আবার আমার বুক সেলাই করে দিয়েছে। এতে হযরত হালিমা ও তাঁর স্বামী ভীত হয়ে গেলেন এবং তাঁর উপর জ্বীনের আছর হয়েছে বলে আশঙ্কা করতে লাগলেন। তাই স্বামী হারেছ বলল, কোন দুর্ঘটনা ঘটার পূর্বেই তাঁকে তাঁর মাতার নিকট পৌঁছেছে দেয়া দরকার। এ ঘটনা তারা নবীজীকে তাঁর মাতার নিকট গিয়ে যান। মাতা আমেনা আশ্চর্য হয়ে বললেন, তোমরা তাঁকে রাখার অনেক আগ্রহ দেখায়েছ। এখন এত তাড়াতাড়ি কেন কি নিয়ে আসছে? তারা ঘটনা খুলে বলল। হযরত আমেনা জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আমার ছেলের উপর জ্বীনের আছর হয়েছে বলে আশঙ্কা কর? তারা বলল হ্যাঁ। হযরত আমেনা বললেন, কখনও নয়। আমার ছেলের উপর জ্বীনের কোন আছর হতে পারেনা। তারপর তিনি গর্ভকালীন অলৌকিক ঘটনাবলী তাদিগকে শুনালেন। হযরত রাসুলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, বিবি হালিমার নিকট থাকা অবস্থায় দু’বছর বয়সে যখন প্রথম বক্ষ বিদারণ হল তখন একজন ফেরেস্তা অপরজনকে বলল, মুহাম্মাদকে তাঁর উম্মতের দশ ব্যক্তির সঙ্গে ওজন কর। যখন ওজন করা হল তখন আমার ওজন বেশী হল। এভাবে একশত জনের সাথে ওজন করা হলেও আমার ওজন ভারী হয়েছে। তখন ঐ ফেরেস্তা বলল, তাঁকে ছেড়ে দাও, তাঁর মূল্য আল্লাহর দরবারে এত অধিক যে, যদি সমস্ত উম্মতের সাথে তুলনা কর তাহলেও তাঁর ওজন বেশী হবে। এ ঘটনার মধ্যে তিনি নবী হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। হযরত রাসূল (সাঃ) গৌরবের সাথে বলতেন, আমি তোমাদের সকলের চেয়ে বিশুদ্ধ ভাষী, আমি কোরাইশী, আমি বনু ছায়াদ কবিলার দুগ্ধপোষ্য শিশু।
হযরত হালিমা একবার মহানবীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য মদিনায় আসলে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে মা মা বলে ডাকতে আরম্ভ করলেন। নবুয়্যত প্রাপ্তির পর হালিমা তাঁর স্বামী হারেছ এবং দু’কন্যা সকলে মুসলমান হয়ে ছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দ্বিতীয়বার বক্ষ বিদারণ ঘটনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন