হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে আরবদের সামাজিক অবস্থা

সায়লে আরেমের পর ইয়ামেনের বাসিন্দাগণ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের একটি শাখা ইরাকের হীরায় উপনিবেশ স্থাপন করল। অপর একটি শাখা সিরিয়ায় চলে গেল। প্রথম শাখাটি বনু লখম এবং দ্বিতীয় শাখাটি বনু গাচ্ছান নামে বিখ্যাত হয়েছে। ইয়ারেব কাহতানের আওলাদগণ মক্কায় আরব এবং ইয়াছবের মদিনায় বসতি স্থাপন করে। এ কারণে  ইয়ারেবের নামানুসারে মক্কাকে আরব এবং ইয়াছরেবের নামানুসারে মদিনাকে ইয়াছরেব বলা হত। ইয়ামেনের লোকদের দ্বারাই মক্কা মদিনা তথা আরবদেশ আবাদ হল।

 কালক্রমে তাদের চরিত্রের চরম অবনতি ঘটেছে। সমগ্র আরবদেশে শিরক বিরাজ করতেছিল। অসংখ্য দেব-দেবীর পূজা প্রচলিত হল। অবশ্য তারা সৃষ্টি কর্তাকে স্বীকার করত। জ্বীন-ফেরেস্তা এবং বহু প্রস্তুর নির্মিত মূর্তির পূজা এ উদ্দেশ্যে করতো যেন তাহদিগকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করায়ে দেয়। পবিত্র কাবা গৃহের ৩৬০ টি দেবতা ছিল। এক বছর ৩৬০ দিন। এক এক দিনের জন্য এক এক দেবতার পূজা করত। এ ছাড়াও অসংখ্য কল্পিত মাবুদের উপসনা করত। কিছু সংখ্যক লোক তারকার ও পূজা করত।

তাদের দেবতার সমূহের মধ্যে লাত, উজ্জা, মানাত, হুবল ইত্যাদি প্রসিদ্ধ ছিল। মুশরিকগণ ফেরেশতাগণকে আল্লাহর কন্যা বলে আখ্যায়িত করত। গণকের কথার উপর পূর্ণ আস্থা রাখত। গণকগণ কিছু জ্বীন হাসিল করে তাদের মাধ্যমে বহু কল্পিত মিথ্যা ভবিষ্যৎবানী করে জনসাধারণ হতে বহু অর্থ উপার্জন করত। এভাবে মানুষকে ধোকা দিয়ে টাকা পয়সা লুট করাই ছিল তাদের পেশা।

দারিদ্র্যের ভয়ে অযথা পরের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে জীবিত মেয়েকে দাফন করে দেয়া কিছু সংখ্যক আরবের মধ্যে প্রচলিত ছিল। মদ্যপান, জুয়া, রাহাজানী ও ব্যবিচার তাদের গর্বের বিষয় ছিল।

নতুন বিবাহ করলে, নতুন স্ত্রীকে প্রথম এক সপ্তাহ মহল্লার সর্দারের নিকট রাখতে হত। নতুন স্ত্রীকে এক সপ্তাহ ব্যবহার করার পর স্বামীর নিকট হস্তান্তর করত। উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করত। মক্কার শেষ্ঠ বংশ কুরাইশ বংশের লোকেরা ও এ স্বভাব হতে মুক্ত ছিল না।

মেয়েদেরকে পিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত রাখত। তারা কোন প্রকার ওয়ারিশ হত না, নারীদের কোন মর্যাদা তাদের নিকট ছিল না। কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তারা অত্যন্ত লজ্জাবোধ করত। তাই জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে পিতা নিজ হাতে ঐ কন্যাকে জীবিত কবর দিত। এভাবে আরবের মরু প্রান্তরে যে কত অসহায় শিশুর ক্রন্দন মিশে আছে, তা কে বলতে পারে। এ ধরণের কত যে ঘৃণ্য প্রথা তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, তার কোন ইয়াত্তা নেই। কথায় কথায় যুদ্ধ বেঁধে যেত। পূর্ব পুরুষদের শত্রুতার প্রতিশোধ নেয়ার এক অপূর্ব হিংসাত্মক চেতনা ছিল তাদের মধ্যে। সাধারণ বিষয় নিয়ে দু’গোত্রের দু’ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া কথা কাটাকাটি হলে তা সম্পূর্ণ গোত্রের ঝগড়া বলে বিবেচিত হত এবং উভয় গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যেত। বংশানুক্রমে এ যুদ্ধ চলতে থাকত। এ সকল যুদ্ধকে আরব ঐতিহাসিকগণ “আইয়্যামুল আরব” নামে অভিহিত করেছেন। আরববাসীদের এহন সামাজিক অবস্থার সময় শেষ নবী হযরত মোস্তফা (সাঃ) দুনিয়াতে আগমন করেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।