হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-১ম পর্ব

যুগ যুগ ধরে জমজম কূপ অনাবাদ অবস্থায় পড়েছিল। যার কোন নিশানা মানুষের জানা ছিল না। এ কূপ হযরত আদম (আঃ) এরও পূর্বে পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয়। কারণ কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে হযরত আদম (আঃ)-এর জন্য আল্লাহ পাক এ কূপ প্রকাশ করেছিলেন। সৃষ্টির রহস্য আল্লাহ পাক ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন বিবি হাজেরা ও সদ্যজাত পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে জনমানব শূন্য মক্কার বালুকারাশিতে গাছপালা বিহীন মরু প্রন্তরে নীল আকাশের নীচে রেখে যান তখন দুগ্ধপোষ্য শিশুর করুন ক্রন্দনে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে আল্লাহর আদেশে জিব্রাইল (আঃ) হযরত ইসমাইল (আঃ) এর পায়ের নিচে ঐ কূপের প্রকাশ করেন।

ইয়ামনের জারহাস একবার শাম দেশে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় মক্কার মরু অঞ্চলে পাখি উড়তেছে দেখে সেদিকে অগ্রসর হল। সেখানে যাওয়ার পর তারা অতি উত্তম পানির সন্ধান পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হল। বিবি হাজেরার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে তারা জমজম কূপের আশপাশে বসবাস আরম্ভ করল। পরে জারহাস কবিলার জনৈকা মহিলার সাথে ইসমাইলের বিবাহ হয়। কালক্রমে সেই জারহাস কবিলা খানায়ে কাবার সাথে খুব বেয়াদবী করে। এর খেদমতে উদাসীন হয়ে যায়। পবিত্র কাবা গৃহের সন্ধানের কথা ভুলে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। কিন্তু তাদের সর্দার মেজাজ অথবা ওমর বিন হারস খানায়ে কাবার ইজ্জত ও হুরমত সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং এর বেহুরমতি ও বেয়াদবীর পরিণাম কত জঘন্য তাও তার পুরাপুরি জানা ছিল।

তাই তিনি জারহাস কবিলাকে কঠোর উচ্চারণ করেন। কিন্তু তারা তা আদৌ কর্ণপাত করল না। তাই আল্লাহ পাকের আযাব ও গজবের ভয়ে তিনি কওম হতে সরে যাওয়া অপরিহার্য মনে করলেন।

কাবা গৃহের অভ্যন্তরে একটি গর্ত ছিল। কাবা গৃহের জন্য হাদিয়া স্বরুপ যে সব মূল্যবান বস্তু আসত ঐ সব দ্রব্যাদি তাতে সংরক্ষিত হত। কাবার খাজানা নামে তা পরিচিত ছিল। তাতে দুটি স্বর্ণের হরিণী, অনেক মূল্যবান তরবারী, বর্ম ও অন্যান্য বহু জিনিস ছিল। এ সমস্ত জিনিস লুণ্ঠিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মেজাজ ঐ সব জিনিস রাত্রে শুষ্ক জমজম কূপটি খনন করে তাতে পুতে রাখেন। তারপর তিনি ঐ দেশ ছেড়ে চলে যান। কওমে জারহাসের উপর আল্লাহ পাকের আযাব নাযিল হয়ে গেল। মেজাজ সর্দার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কিছু দিন পরেই খোজায়া নামক এক শক্তিশালী কওম মক্কার উপর হামলা চালায় এবং মারাত্মক আঘাত হেনে দুর্দান্ত জারহাস কবিলাকে হেরেম শরীফ হতে বহিষ্কৃত ও বিতাড়িত করে দেয়। এ সময় হতে প্রায় পাঁচশত বছর অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিবের যুগ পর্যন্ত। কূপটি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ণ ও অজ্ঞাত অবস্থায় ছিল। দীর্ঘকাল পর জমজম কূপের পুনঃখননের সৌভাগ্য আবদুল মুত্তালিবেই অর্জন করেছিলেন।

আবদুল মুত্তালিব ছিলেন হাশেমের পুত্র এবং হাশেম ছিলেন আবদে মন্নাফের পুত্র। আবদুল মুত্তালিবের প্রকৃত নাম ছিল শায়বা।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের পূর্বে জমজম কূপের পুনঃখনন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।