হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাবা গৃহের সংস্কার
পবিত্র কা’বাগৃহ তখন ছাদবিহীন একটি ঘর ছিল। চারপার্শ্বের ভূমি হতে তা নিচু থাকায় চতুর্দিকে বৃষ্টির পানি ঘরের ভিতর প্রবেশ করত। এভাবে কা’বাগৃহের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। অপরদিকে কা’বাগৃহের মধ্যে একটি গর্ত ছিল যেখানে মানুষের আমানতের মাল এবং কা’বাগৃহের হাদীয়া ইত্যাদি দাফন করে রাখা হত। একদা জনৈক দুওয়াইক নামক ব্যক্তি সেখান হতে বহু মূল্যবান বস্তু চুরি করে নিয়ে যায়। কোরাইশগণ তার হাত কেটে দিল এবং খানায়ে কাবাকে মজবুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। কিন্তু দুটি বিষয় তাদের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করতে অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছে।
একটি হল, তাদের নিকট উপযুক্ত আসবাবপত্রের অভাব ও দ্বিতীয়টি হল, খানায়ে কাবার ভিতরে যে গর্ত ছিল সে গর্তের মধ্যে একটি বৃহৎ বিষধর সর্প বাস করত। দিবাভাগে তা দেয়ালের উপর এসে রৌদ্র পোহাত। লোক দেখলে তা ফনা ধরে ফোঁস ফোঁস করত এবং দংশন করার চেষ্টা করত।
আল্লাহর পক্ষ হতে উভয় বাধাই দূর হয়ে গেল। সে সময় জিদ্দায় সওদাগরের একটি বাণিজ্য জাহাজ বন্দরে আঘাত লেগে বিধ্বস্ত হয়। কোরাইশগণ ওলীদ বিন মূগীরাকে পাঠায় উক্ত জাহাজের তক্তা ক্রয় করে আনল। এভাবে প্রথম বাধাটি দূর হয়ে গেল।
এদিকে একদিন সর্পটি যখন রৌদ্র পোহাবার জন্য দেয়ালে উঠেছিল তখন একটি পাখি এসে তাকে চোঁ মেরে নিয়ে গেল। এভাবে দ্বিতীয় বাধাটিও দূর হয়ে গেল। কোরাইশগণ দেখল যখন তাঁরা আল্লাহর ঘর পুনঃনির্মাণের সংকল্প করল তখনই বাঁধাগুলি দূর হয়ে গেল। তাতে তাদের মনে আশার সঞ্চার হল। তাতে আনন্দে বলতে লাগল, আল্লাহ আমাদের সংকল্পে রাজী আছেন। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর ঘর মেরামত করতে হল তা প্রথমে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। কে তা ভাঙ্গার সাহস করবে। আল্লাহর তরফ হতে কোন আযাব আসে কিনা এ ভয়ে কেউই সাহস করল না। অবশেষে ওলীদ বিন মুগীরা রাত্রে তা ভাঙতে উদ্যত হল। কোরাইশগণ সারা রাত্র অপেক্ষা করছিল যে, সকাল পর্যন্ত ওলীদ বেঁচে থাকে কিনা। সকাল বেলায় দেখল ওলীদ ছহীহ ছালামতে দেয়াল ভেঙ্গে অবসর হল। তাতে তাদের সাহস বাড়ল। তাঁরা কা’বাগৃহের পুনঃ নির্মাণ কাজ সমাধা করল। তবে খরচের অভাবে উত্তর পার্শ্বের দেয়াল কিছু ভিতরে এনে ঘরটি ছোট করে উঠাল এবং কিছু অংশ বাদ দিয়ে রাখল। যা বর্তমান হাতীম নামে পরিচিত।
কা’বা ঘরের বৃষ্টি হলে চতুর্দিকের পানি এসে কা’বা ঘরে ঢুকত তাই তারা ভিটা খুব উঁচু করে নির্মাণ করল। তাতে তাদের আর একটি উদ্দেশ্যে ছিল যে, সাধারণ লোক যেন ইচ্ছানুযায়ী তাতে প্রবেশ করতে না পারে। পরিশেষে হজরে আসওয়াদ নিয়ে ঝগড়া বাঁধল। কে তা তার স্ব স্থানে রাখবে। প্রত্যেক গোত্রের সরদারই তার দাবীদার। কিন্তু পাথর একটি। অবশেষে কোরাইশদের সরদার আবু ঊমাইয়া বলল, আগামীকাল ভোর বেলায় সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি এখানে উপস্থিত হবে তাকেই সালিশে নিযুক্ত করা হবে। তিনি যে ফয়সালা দিবেন সকলেই তা মেনে নিতে হবে। এ প্রস্তাব সকলে মেনে নিল। আল্লাহর মহিমা, পরদিন ভোরে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম উপস্থিত হলেন তিনিই ছিলেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কোরাইশগণ তাঁকে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হল। সকলেই বলল, আমরা তার মীমাংসা বিনা দ্বিধায় মেনে নিব।
নবীজী ফয়সালা দিলেন একটি বড় চাদর আন। প্রত্যেক গোত্রের সর্দারগণ ঐ চাদরের কোণ ধরবে। তাঁর মীমাংসা অনুযায়ী তারা এটা করল। তখন তিনি নিজ হাতে পাথরটি উঠায়ে চাদরে রাখলেন। তারা চাদরের চার কোণ ধরে তা যথা স্থানে নিয়ে গেল। তখন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজ হাতে পাথরটি উঠায়ে তা স্থাপন করলেন। এভাবে
একটি বিরাট ঝগড়ার মীমাংসা হয়ে গেল। তাতে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে। আল্লাহর দ্বীনের বালাখানায় পূর্ণতার শেষ প্রান্ত তাঁর হাতে স্থাপিত হবে তা তারই ইঙ্গিত বহন করে।
মোটকথা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অসাধারণ বুদ্ধির প্রভাবে আসন্ন মহাযুদ্ধের অগ্নিশিখা নির্বাপিত হল। নবীজীর বয়স তখন পঁয়ত্রিশ বছর। খানায় কা’বার নির্মাণে নবীজীও সকলের সঙ্গে পাথর বহন করে আনতেন। কোরাইশগণ উলঙ্গ হয়ে পরনের কাপড় কাঁধে রেখে তাঁর উপর পাথর বহন করত। কিন্তু তিনি শূন্যস্কদ্ধে পাথর বহন করতেন তাতে তাঁর খুব কষ্ট হত। তা দেখে চাচা আব্বাস বলল, তুমি কাপড় খুলে কাঁধের উপর দাও। সে মুহূর্তে হযরত জিব্রাইল (আঃ) এসে তাঁকে বাঁধা দিলেন তিনি আর উলঙ্গ হলেন না। এভাবে তাঁর জাহেরী আব্রু ইজ্জতও সকলের উপর স্থান পেল।