হযরত মুসা (আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৬ষ্ঠ পর্ব

হযরত মুসা (আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

একদা নীল নদের পানি কমে গেল। যাতে মানুষ ভীষণ দুর্ভোগের সম্মুখীন হল। তখন তারা দল বেধে ফেরাউনের নিকট এল এবং নীল নদের পানি বৃদ্ধির জন্য আবেদন করল। সকলে বলল, তুমি আমাদের খোদা। আমাদের খাদ্য দান কর এখন পানির সমস্যা আমাদের মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিচ্ছ। অতএব এ বিপদ থেকে তুমি আমাদের রক্ষা কর। ফেরাউন বলল, আজকে তোমরা যাও আগামি দিন নীল নদের তীরবর্তী আমার প্রমোদ কাননে তোমরা ও দেশবাসি সকলে সমবেত হও। আমি সেখানে তোমাদের সকল অভাব পুরণ করে দেব। প্রমোদ কাননে ছিল বিরাট অট্টালিকা, বাগান, উচু মিনার, অতি সুন্দর সজ্জিত একটি মহল। পরের দিন ফেরাউন সাত লক্ষ সৈন্য নিয়ে বিশাল এক ময়দানের অপর “পাশে, মাদুল আলো” নামক স্থানের দিকে রওয়ানা করল। পথে প্রতি তিন কিলোমিটার দূরত্ব সে লক্ষ্য করে সৈন্য মোতায়ন রেখে সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগল।

যখন একুশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম হল  তখন সে একাকী সম্মুখে অগ্রসর হল। কিছু দূর গিয়ে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন এক গুহায় ঢুকে পড়ল। গুহার অনেক ভিতরে ঢুকে সে  সিজদায় পড়ে সে চিৎকার দিয়ে বলতে আরম্ভ করল, হে মহান আল্লাহ তায়ালা ! তুমি সত্যি সত্যি অপর করুণা ময় মহাপ্রভু! তুমি জমিন এবং আসমানে মালিক এতে কোন সন্ধেহ নেই। তোমার প্রতি আমার গভির মনের অবস্থা ও বিশ্বাস অত্যান্ত দৃঢ়। এ মুহুর্তে এক আমি এক ক্ষুদ্র পরিবেশে খোদায়ী দাবি করছে। এ দাবিতে রমার বিশাল সৃষ্টির কোন ক্ষতি হবে না অতএব তোমার বিরাট গৌরবের সামান্য লোকসান হবে না।

অতএব তুমি আমার এই দাবিকে অপরাধ মনে কর না করে আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং এই দাবি টুকু কবুল করে নাও, যাতে আমি আমার রাজ্যের সম্মনা অক্ষত রাখতে পারি। আমার জীবনে যত ভাল কাজ আছে তার বিনিময়ে  আমাকে এ দাবির স্বার্থকতা দান কর। আমি পরকালে বেহেস্ত চাই না। এখন শুধু এখানে আমার দাবি টিকিয়ে মর্যাদার অধিকারি হতে চাই। হে রহমান রহীম! তুমি নীল নদ কে আমার অধীন করে দাও যেন উহার পানি আমার কথায় বাড়ে কমে। মানুষের রোগ মুক্তির সমস্যা দূরীভুত করার মত শক্তি দান কর। আমার এ ক্ষুদ্র দাবি পুরণ করলে তোমার বিশাল সৃষ্টি ও অসীম ক্ষমতার বিন্দু মাত্র ক্ষতি সাধিত হবে না। হে দোয়ার আধার! আকাশ ও পৃথিবীতে তোমার যে সমস্ত পুণ্যবান ব্যক্তি রয়েছে তাদের নামের বরকতে তুমি আমার ক্ষুদ্র প্রার্থনা পুরণ কর। তোমার তরফ থেকে কোন কোন সংবাদ না পেলে আমি সেজদা থেকে মাথা তুলব না। এ অবস্থায় তার দুচোখ পানিতে ভিজে গেল। এমন সময় একটি লোক এসে তার গুহার দরজায় বসে চিৎকার দিয়ে বলেতে লাগল। হে বাদশা ফেরাউন!

তুমি আল্লাহ তায়ালার দরবার থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিলে। এখন তুমি একজন শক্তি শালী বাদশাহ রুপে প্রতিষ্ঠিত হলে। এখন তুমি ইচ্ছা করলে আল্লাহ তায়ালার উপযুক্ত দাস হতে পার আর ইচ্ছা করলে বড় না ফরমানও হতে পার। সেটা অবশ্যই তোমার বিবেকের উপর নির্ভর। যা হোক আমি এ সমস্ত কথা বলার জব্য আসেনি। আমি একটি বিচার নিয়ে আমি তোমার কাছ এসেছি। তুমি একবার আমার কথা গুলো শোন এই একই কথা চিৎকার দিয়ে লোকটি বার বার বলতেছিল। ফেরাউন খুব বিরক্ত  হল। ওদিকে দীর্ঘ সময় তার সৈন্যরা তাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ করতে করতে একদল এখানে পৌছাল। ফেরাউন তখন বাধ্য হয়ে গুহা থেকে বের হল।

প্রথমে গুহার দরজার দন্দয়মান লোকটিকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার কি নালিশ বল। লোকটি বলল, হুজুর! যদি কোন অকৃতজ্ঞ গোলাম তার প্রভুর নিকট কিছু দাবি করে এবং তার প্রভু তাকে পুরণ করে দেয় তার পর যদি গোলাম প্রভুর পুনারায় নাফরমানি আরম্ভ করে তাকে কি শাস্তি  হওয়া উচিত। ফেরাউন বলল  তাকে নীল নদে ডুবিয়ে মারা উচিৎ। লোকটি বলল দোয়া করে আপনার এই রায়টি আমাকে লিখে দিন। ফেরাউন বলল এখানে কাগজ কলম নেই। আমার দরবারে এস সেখানে বসে লিখে দিব। তখন লোকটি পকেট থেকে কাগজ কলম বের করল।

ফেরাউন তার রায়টি লিখে লোকটির হাতে দিয়ে চলে গেল। এ লোকটি ছিল হযরত জিব্রাইল (আঃ) অতপর গুহার বাইরে অপেক্ষমান সৈন্যরা ফেরাউন কে দেখে বলল, হে প্রভু! আপনার দয়ায় নীল নদ পানিতে ভরে গেছে। দেশের মানুষ আপনাকে ধন্যবাদ জানবার জন্য আপনার প্রমোদ কাননে সমবেত হয়েছে। এখনই সেখানে চলুন, আমরা দীর্ঘ সময় পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে খুঁজে ছিলাম। অবশেষে গুহার দরজায় লোকটিকে দেখে দন্ডায়ামান দেখে তার নিকট আপনার খবর জানতে পারেছি। এখন আর বিলম্ব করা উচিৎ নয়। ফেরাউন সৈন্যদের সাথে  রওয়ানা হল। অনেক সময় পর সে প্রমোদ কাননে পৌঁছে দেখল হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছে এবং নীল নদ পানিতে পরিপূর্ণ হয়েছে। তখন ফেরাউন সকলের অভিবাদন গ্রহণ করল।

সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।