হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি জেনার তোহমত -২য় পর্ব
হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি জেনার তোহমত -১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একটি হযরত মুছা (আঃ) আর একটি কারুনের। কারুন কি পরিমান অর্থ সম্পদ এর মালিক ছিল তার হিসাব কর যায় না। তবে কথিত আছে তার ধন সম্পদ এর গুদাম এর চাবি সত্তর টি উটের বহন যোগ্য ভারি ছিল। প্রতিটি চাবির ওজন নাকি একতোলা, তুই তোলার বেশি না। এই মর্মে তার ধন-সম্পদ অনুমান করা যায় কিন্তু ধারনা করা যায় না। কারুন নিজের অর্থ সম্পদ দ্বারা নিজ এলাকায় একটা শহর গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে নিজের জন্য বহু সুরম্য অট্টলিকা তৈরি করেছিল। সে তার এলাকায় সত্তরটি প্রমোদ মহল তৈরি করেছিল। সকল মহলে বহু কক্ষবিশিষ্ট বহুতলা ইমারাতের সংখ্যা ছিল অনেক।
কোন কোন প্রমোদ মহলে নাচঘর, খাস মহল ও অন্দর মহল ছিল। অন্দর মহলের অট্টলিকার দরজা ছিল স্বর্ণের আস্ত্রর করা। কোন কোন দরোজার পালঙ্ক ছিল রুপার। সমস্ত মহলের আতর দান, গোলাপ দান ও আগর দান ছিল স্বর্ণ ও মণিমুক্তা খচিত। একদা কারুন তার স্ত্রী কে নিয়ে ভ্রমনে বের হলেন তার স্ত্রীর সর্বত্র শরীর ছিল
স্বর্ন ও হীরার অলঙ্কারিতে পরিপূর্ণ। তার সম্মুখে ছিল স্বর্ণের তাজ জরির পোশাক পরিহিতা ও সত্তর জন সেবিকা একবার দৃষ্টি নিরক্ষেপ করলে অন্যদিকে আর ফিরানোর উপায় ছিল না। কারুনের কোষাগার রক্ষীর সংখ্যা ছিল তিন হাজার। তার মহলসমূহের পরিচর্যার জন্য কর্মচারির সংখ্যা ছিল সত্তর হাজার। তার দাসদাসী ছিল অসংখ্য। এক কথায় সে ছিল অঘোষিত রাজা বাদশা।
আল্লাহ তায়ালা হযরত মুছা (আঃ) কে ওহি মারফত জানিয়ে দিলে, সমস্ত মানুষ যেন তৌরাত কিতাব নিয়মিত পাঠ করে তদনুযায়ী কাজ করে। না হয় তাদের উপর কঠিন আযাব আসবে। বিশেষ করে কারুন যেন তার ধন-সম্পদ এর হাজার ভাগের এক ভাগ অতি সত্তর গবিরদের মাঝে বিতরণ করে। না হয় তাকে ভীষন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তার ধনসম্পদ তাকে রক্ষা করতে পারবে না। কারুনের উদ্ধত্যপনা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আর অধিক সময় প্রদান করা সম্ভব নয়।
হযরত মুছা (আঃ) তার উম্মতদিগনের ডেকে আলাহর নির্দেশের কথা জানিয়ে দিলেন। উম্মতেরা হযরত মুছা (আঃ) এর আদেশ অনুসারে কাজ করার অঙ্গীকার করল। পতপর তিনি কারুনের নিকট গিয়ে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের সংবাদ জানিয়ে দিলেন। কারুন তার উত্তরে বলল, আমার ধন সম্পদ আল্লাহ আমকে দেন নি, ইহা আমি আমার নিজ চেষ্টা ও পরিশ্রম দ্বারা অর্জন করেছি। এতে যাকাতের কোন ভাগ নেই। একান্ত যদি আমি হাজার ভাগের একভাগ হিসাবে যাকাত দেই তাতে আমার বিপুল অর্থ হয়। যার হিসাব করলে, সে অর্থ দ্বারা মিশর রাজত্ব দু বছর অনায়াসে চলতে পারবে।
অতত্রব এ অর্থ আমি কিসের বিনিময়ে খরচ করব। হযরত মুছা (আঃ) তখন বললেন, তোমার অর্থের বিনিময়য়ে আল্লাহ তোমাকে দোজকের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বেহেস্তের শান্তি দান করবেন। তাতে কারুন বলল, আমি যে মহল তৈরি করেছি তা থেকে আমি বেহেস্তের শান্তি আনন্দ লাভ করছি তোমার আল্লাহর বেহেস্তের আমার প্রয়োজন হবে না। আমার দ্বারা যাকাত দেয়া সম্ভব হবে না। আমি যে দল রক্ষী বাহিনী তৈরি করেছি তা মোকাবেলা করার ক্ষমতা তোমার নেই। তুমি দরিদ্র মুটে মজুর নিয়ে থাক। আমার বিরক্ত করতে এসো না। হযরত মুছা (আঃ) বললেন, তোমার চাইতে অধিক শক্তিধর আল্লাহর নির্দেশে ধ্বংস হয়ে গেছে। এ নজির পৃথিবীতে আছে। অতএব তুমি যদি তৌরাত কিতাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না কর এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না কর তাহলে অচিরের তোমার উপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে। কারুন হযরত মুছা (আঃ) এর কথায় বিরক্ত হয়ে চলে গেল এবং রক্ষীদের বলল, লোকটিকে মহল থেকে বের করে দাও। কারুন হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি যথেষ্ট রাগান্বিত হল এবং তাকে অপদস্ত করে দেশান্তরিত করার পরিকল্পনা নিল। তাই সে এক চতুর ও দুষ্টা মহিলাকে প্রচুর টাকা পয়সা দিয়ে হযরত মুছা (আঃ) এর নামে কলঙ্ক প্রচারের ব্যবস্থা করল। মহিলা কে বলে দিল, সে যেন সর্বত্র বলে বেড়ায় যে হযরত মুছা (আঃ) এর সাথে তার দীর্ঘ দিনের প্রণয় ও ভালবাসা ছিল।
সে সুবাদে মুছার সাথে জেনা করেছে।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি জেনার তোহমত -৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন