হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ১
এই আলোকিত পুরুষ হযরত হাসান বসরী (রঃ)-এর সমসাময়িক। তিনিও একজন প্রথম সারির সাধক। তাঁর পিতা একজন দাস ছিলেন। তাঁর নামের শেষে ‘দীনার’ কথাটি কিভাবে যুক্ত হয়, তার একটি ইতিহাস আছে।
একবার হযরত মালেক (রঃ) একখানি খেয়া নৌকায় নদী পার হচ্ছিলেন। মাঝ নদী পেরিয়ে আসার পর মাঝি পারের পয়সা চাইল। কিন্তু হযরত মালেক (রঃ)-এর কাছে কোন পয়সা ছিল না। কাজেই খুব বিনীতভাবে তিনি তাঁর অক্ষমতা জানালেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মাঝি বেশ নাছোড়বান্দা। পয়সার জন্য পীড়াপীড়ি করতে শুরু করল। মালেক (রঃ) নিরুপায়। আরও বিনীত কন্ঠে তিনি বললেন, ভাই, আমার কাছে এক কানাকড়িও নেই। দয়া করে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আর যায় কোথায়! মাঝি উত্তেজিত, ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। অশ্লীল ভাষায় বলল, ব্যাটা, তোর যদি পয়সা নেই তো নৌকায় উঠতে কে বলল? বলতে বলতে মাঝি তাঁকে মারধর শুরু করল। মারের চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষন পরে জ্ঞান ফিরল। কিন্তু আবার সেই পয়সা চাওয়া। আবার সেই পয়সা না থাকার করুণ স্বীকৃতি। সেই কাকুতি-মিনতি, ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি। কিন্তু মাঝির তখন জেদ চেপেছে।
পয়সা না নিয়ে কিছুতেই সে লোকটাকে পার করে দেবে না। সে আরও নির্মম হয়ে উঠল। ঠিক করল, ব্যাটার হাত-পা বেঁধে নদীতে ছুঁড়ে ফেলা হবে। এ উদ্দেশ্যে সে একগাছি দড়ি হাতে নিয়ে তাঁকে বেঁধে নদীতে ফেলার উদ্যেগ নিচ্ছে, এমন সময় দেখা গেল, নদীর সব মাছ মুখে করে এক একটি দীনার নিয়ে নৌকার চারপাশে ভেসে উঠল। তখন হযরত মালেক (রঃ) একটি মাছের মুখ থেকে এক দীনার নিয়ে মাঝির হাতে দিল।
মাঝি ও অন্যান্য যাত্রীরা এই অদ্ভুত ঘটনায় তাজ্জব বনে গেল। বিশেষ করে মাঝির মনে দারুণ ভীতির সঞ্চার হল। লোকটির প্রতি সে যা ব্যবহার করেছে, তা এখন অতিমাত্রায় উৎকট হয়ে তার কাছে ধরা পড়ল। আর সে লুটিয়ে পড়ল হযরত মালেক (রঃ)-এর পায়ে হযরত তাকে ক্ষমা করে তখন নৌকা থেকে নেমে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে তীরে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। সেই থেকে তাঁর নামের সঙ্গে দীনার কথাটি জুড়ে গেল চিরদিনের মতো।
তাঁর চেহারা ছিল খুবই চমৎকার। তিনি অনেক ধন-সম্পত্তিরও অধিকারী ছিলেন। তিনি দামেশক শহরে বাস করতেন। এ শহরে হযরত মুয়াবিয়ার তৈরী খুব বড় একটি মসজিদ ছিল হযরত মালেক (রঃ) মনে মনে এক ফন্দি আঁটলেন। ঠিক করলেন, ঐ মসজিদে তিনি পুরো বছর ধরে
এতেকাফ করবেন আর এবাদতে মশগুল থাকবেন। তাঁর ওপর মানুষের নজর পড়বে। সকলের আস্থাভাজন হবেন তিনি। তাহলে মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন ভূমির মুতাওয়াল্লী পদ পেয়ে যাবেন।
যেমনি ভাবনা তেমনি কাজ। তিনি মসজিদে ঢুকে পড়লেন। সব সময় নফল নামাজ পড়তে থাকলেন আর মোরাকাবায় মগ্ন রইলেন। অবশ্য মনে মনে জানতেন তিনি কপট। এক রাত্রে মসজিদের বাইরে যেতে তিনি এক আকাশবাণী শুনলেন, মালেক! আল্লাহর দরবারে তুমি এখনও তওবা করছ না কেন? একথা শুনে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন।
নিজের ভুল বুঝতে দেরী হল না। তিনি তো পবিত্র হৃদয়ে আল্লাহর এবাদত করেননি। স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধুতার ভান করছেন মাত্র। লোককে প্রতারণা করার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর, আল্লাহকে খুশী করা নয়। একথা মনে হওয়া মাত্র সত্যিই তিনি আল্লাহর দরবারে তওবা করে পবিত্র সরল মনে আল্লাহর এবাদতে রত হলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া