হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যেকোন সময় তিনি পানি চাইতে পারেন অতএব পানির পাত্র হাতে নিয়ে তিনি সারা রাত মায়ের শিথানে দাঁড়িয়ে রইলেন। শীতের রাত। হিমেল বাতাসে আর কনকনে ঠাণ্ডায় তাঁর হাত-পা অবশ হয়ে এল। ওদিকে দু’চোখ বেয়ে নামছে ঘুম। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে তিনি মায়ের ঘুম ভাঙার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলেন।
রাত শেষ হল। পূর্ব আকাশে ফুটে উঠল আলোর গোলাপ-লাল ফুল। মায়ের চোখ খুলে যেতেই তিনি দণ্ডায়মান পুত্রকে দেখতে পেলেন। বিচলিত হয়ে হয়ে বললেন, এই ঠাণ্ডায় সারারাত ধরে তুমি অত কষ্ট করতে গেলে কেন বাবা! পানির গ্লাসটা শিথানে রেখে দিলেই তো পারতে। বায়েজীদ (রঃ) বললেন, মা গো! আপনার পিপাসার কথা মনে রেখেই আমি আর ঘুমুতে পারিনি। দাড়িয়েই আছি সারা রাত।
পুত্র গর্বে মায়ের বুক ভরে গেল। দু’চোখ বেয়ে নেমে এল আনন্দের আপ্লুত অশ্রুধারা। আল্লাহ্র দরবারে হাত উঠিয়ে তিনি মোনাজাত করলেন, প্রভু গো! আমার ছেলেকে আপনি আপনার বন্ধুদের নেতা বানিয়ে দিন। জননীর এই আকুল প্রার্থনা কি ব্যর্থ হয়?
আর একবার মা বিছানায় শুয়ে পড়েছেন। ঘরের দরজা খোলা। হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। তিনি ছেলেকে একখানি পাল্লা বন্ধ করতে বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু দরজার কোন পাল্লা তিনি বন্ধ করবেন মাকে আর জিজ্ঞেস করা যায় না। কেননা, তাতে তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। আর তা হবে তাঁর পক্ষে কষ্টকর। তাই তিনি এখানা খুলে দিয়ে ওখানা বন্ধ করেন। আরেকবার ওখানা খুলে দিয়ে এখানা বন্ধ রাখেন। আর এভাবে রাত ভোর হয়। দরজার পাল্লা নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন সারারাত।
মায়ের যখন ঘুম ভাঙল তখন ছেলেকে ঐ অবস্থায় দেখে বললেন, তুমি এরূপ করছ কেন বাবা? ছেলে সব কথা খুলে বললেন। ছেলের জন্য তাঁর কষ্ট হল খুব। কিন্তু আনন্দও কম পেলেন না। এমন পুত্র রত্ন পেয়েছেন বলে তিনি আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। আর পুত্রের মঙ্গল কামনা করে আল্লাহ্র দরবারে দোয়া করলেন।
বলাবাহুল্য, মহিমাময় আল্লাহ্ সঙ্গে সঙ্গে মায়ের প্রার্থনা কবুল করেন। ধন্য জননী আর ধন্য পুত্র!
জননীর কাছে বিদায় নিয়ে তিনি সিরিয়া যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছে একটানা তিন বছর নির্জন অরণ্যে আল্লাহ্র ধ্যানে মগ্ন হন। শুধু তাই নয়, এ সময়ে তিনি অন্তত একশ তেরোজন সিদ্ধ পুরুষের সঙ্গে দেখা করে তাদের প্রসন্ন দৃষ্টি ও আশীর্বাদ লাভ করেন। এদের অন্যতম ছিলেন হযরত জাফর সাদেক (রঃ)।