হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১২

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

কথামত দরবেশ সত্যিই সেখানে গেলেন। গুহার মধ্যে ঢুকতে যাবেন, একটি বিশাল বিষধার সাপ ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করে তাঁর দিকে তেড়ে এল। কোন রকম প্রাণ নিয়ে তিনি ফিরে এলেন। আর হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি আমাকে মেরে ফেলার যোগাড় করেছিলেন আর কী!! খুব বেঁচে গেছি। তখনও আতঙ্কে ভয়ে তিনি ঠক ঠক করে কাঁপছিলেন। হযরত বায়েজীদ (রঃ) তাঁর অবস্থা দেখে বললেন, সামান্য একটি প্রাণী দেখেই আপনার এত ভয়! আল্লাহ্‌র সামনে গিয়ে যেদিন দাড়াবেন, না জানি সেদিন আপনি কী করবেন।

আত্নাভিমানী সাধকের সব অহংকার গুড়িয়ে গেল। একদিন আবু সাঈদ সাইখোরানী নামে একজন সাধক এলেন হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর অলৌকিক শক্তি পরখ করে দেখতে। আর তিনি তা বুঝেও ফেললেন। তাই বললেন, আপনি আমার শিষ্য আবু সাঈদ রায়ীর কাছে যান। আপনার উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

আবুও সাঈদ রাজী তখন ধ্যান-মগ্ন। সাধক সাইখোরানী এলেন। উপাসনা শেষ করে তিনি দরদেশের আগমনের হেতু জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আমি কিছু আঙ্গুর খেতে চাই। আবু সাঈদ রাযীর হাতে ছিল একখানি কাঠের ছড়ি। সেটিকে দু’টুকরো করে এক টুকরো তাঁর সামনের মাটিতে পুঁতলেন। আরেক টুকরো দিলেন আগন্তুক দরবেশের হাতে। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল-দু’খন্ড ছড়িই দু’টি ফলন্ত আঙ্গুর গাছে পরিণত হয়েছে। থোকা থোকা আঙ্গুর ঝুলছে। তবে দরবেশের হাতে যে খণ্ডটি ছিল, যে গাছের আঙ্গুর কালো। আর তিনি যেটি মাটিতে পূতেছিলেন, সে গাছটির আঙ্গুর সাদা।

অভিমানী দরবেশ এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আবু সাঈদ রাযী বললেন, এর কারণ হল নিয়ত। আমি খোলা মনে আল্লাহ্‌র কাছে এই অলৌকিক শক্তি কামনা করেছি। আর আপনি এটা দেখতে চেয়েছেন আমাকে পরীক্ষা করতে। যেকোন কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। আপনার নিয়ত ছিল কালো। অতএব আঙ্গুরও হয়েছে তাই। তারপর তিনি তাঁকে একখানি সাদা কম্বল দিয়ে খুব সাবধানে রাখতে বললেন। কম্বলখানা নিয়ে ঐ দরবেশ গেলেন হজ্জ করতে। তিনি খুব সামধানেই রেখেছিলেন। তবুও আরাফাতের ময়দানে তা হারিয়ে গেল। এরপর তিনি যখন আবার বোস্তামে এলেন, দেখলেন কম্বলখানা রয়েছে আবু সাঈদ রাযীর কাছেই।

হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর মুরশিদ বা পীর ছিলেন এক বৃদ্ধা মহিলা। একবার এক বনের

পাশে তাঁর সঙ্গে বায়েজীদ (রঃ)-এর দেখা হয়। মাথায় আটার বস্তা নিয়ে তিনি পথ চলছিলেন খুব কষ্ট করে। বায়েজীদ (রঃ)-কে দেখে তাঁকে সেটি তাঁর বাড়ী পৌঁছে দিতে বললেন। আর ঠিক ঐ সময় বন থেকে বেরিয়ে আসে একটি বাঘ।

বায়েজীদ (রঃ) বাঘটিকে কাছে ডেকে তাঁর পিঠে আটার বস্তা তুলে দিয়ে বৃদ্ধার বাড়ীতে দিয়ে আসতে বলেন। বাঘ রাজি হয়। তিনি মহিলাকে জিজ্ঞেস করেন, পাড়ায় গিয়ে তিনি লোকজনকে কি বলবেন?

বৃদ্ধা জবাব দেয়; বলব যে, আজ এক আত্নভিমানী অত্যাচারীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, সে কি! আমি আবার আত্নভিমানী হলাম কিভাবে?

বৃদ্ধা বললেন, বাঘ কখনও বোঝা বয় না। অথচ তুমি তার পিঠে বোঝা চাপিয়ে দিলে। এটা কি বাঘের ওপর জুলুম করা হল না? আর তোমার মনের ইচ্ছাটা এই যে, তোমার অলৌকিক শক্তির কথা আমাদের পাড়ায় প্রচারিত হোক। আর সবাই তোমার স্তুতি প্রশংসা করুক। এটা কি আত্নম্ভরিতা নয়?

হযরত বায়েজীদ (রঃ) তাঁর কথা উল্লেখ করে বলতেন, ঐ বৃদ্ধাকে আমি আমার শ্রেষ্ঠ মুরশিদ হিসেবে গণ্য করেছি।

হযরত বায়েজীদ (রঃ) উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। হযরত আহমদ খাযরুইয়া (রঃ) স্বপ্নযোগে আল্লাহ্‌ পাকের পবিত্র জ্যোতির সাক্ষাত লাভ করেন। তিনি তখন বায়েজীদ (রঃ)-এর মর্যাদা সম্বন্ধে প্রশ্ন করেন। আল্লাহ্‌ জানান, তোমরা শুধু নিজেদের প্রয়োজনের কথা বল। কিন্তু বায়েজীদ শুধু আমাকেই খোঁজে। তার মধ্যে অন্য কিছু নেই। সুতরাং আল্লাহর দরবারে তাঁর মর্যাদা কতখানি উন্নত ছিল, এ থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়।

একবার হযরত শাকীক বলখী (রঃ) তাঁর শিষ্য আবু তুরাবকে নিয়ে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর দরবারে আসেন। সেখানে আরও অতিথি ছিল। যথাসময়ে অভ্যাগতদের নিয়ে হযরত বায়েজীদ (রঃ) খেতে বসলেন। হযরত শাকীক (রঃ) ও তাঁর শিষ্য সেদিন রোজা রেখেছিলেন। তবুও দাওয়াত রক্ষা ও হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর প্রতি সৌজন্য প্রদর্শনের জন্য শাকীক বলখী (রঃ) নফল রোজা তরক করে আহারে অংশগ্রহণ করলেন। কিন্তু আবু তুরাব খেতে রাজি হলেন না।

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।