হযরত ফোজায়েল (রঃ)- পর্ব ৫

হযরত ফোজায়েল (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত ফোজায়েল (রঃ)-এর তত্ত্ব-পূর্ণ উপদেশ বাণীঃ

১. সেই নির্জনবাস শ্রেয়- যেখানে আমি কাউকে দেখতে পাই না এবং আমাকেও কেউ দেখে না।

২. যে আমার পাশ দিয়ে চলে যায় অথচ আমাকে সালাম জানায় না, ব্যাধিগ্রস্থ হলে যে আমাকে দেখতে আসে না, জানব, সেই আমার প্রতি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল।

৩. রাতের আগমনই খুশীর কারণ। কেননা, তখন নীরবে আল্লাহ্‌র ধ্যানে মগ্ন হওয়া যায়। আর দিনের আমন দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে। কেননা তখন জনসমাগমে আল্লাহ্‌র ধ্যান-এবাদতে বিঘ্ন ঘটে।

৪. যে নির্জনতা পছন্দ করে না, বরং মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ভালোবাসে, সে প্রকৃত শান্তি থেকে দূরে থাকে।

৫. যে আমল সম্পর্কিত কথা বলে কিন্তু আমল করে না, তার কথাবার্তা কোন কাজে আসে না।

৬. আল্লাহকে যে ভয় করে তার বাকশক্তি লোপ পায়।

৭. আল্লাহ্‌ যাকে ভালোবাসেন তার ওপর নানা রকম আপদ-বিপদ আসে। আর তিনি যাকে শত্রু বলে মনে করেন, সে সুখে-শান্তিতে বাস করে।

৮. সব কিছুর যাকাত আছে। জ্ঞানের যাকাত চিন্তা-ভাবনা। রাসূলে করীম (সঃ)-এই জন্য গভীর চিন্তায় ও ধ্যানে রত থাকতেন।

৯. মনে যার আল্লাহ-ভীতি, তার মুখে অর্থহীন কথা রেব হয় না। আল্লাহ-ভীতি তার কাম-প্রবৃত্তি ও আসক্তি নষ্ট করে। তার পরনিন্দা-পরচর্চার স্বভাবও দূর হয়।

১০. পৃথিবীর সব কিছু যদি আমার জন্য সিদ্ধ বৈধ করে দেওয়া হয়, তবুও গলিত শব মনে করে আমি তা গ্রহণ করতে লজ্জা ও ঘৃণা বোধ করব। সংসারে প্রবেশ করা কঠিন কাজ নয়, কঠিন হল তা থেকে বেরিয়ে আসা।

১১. পৃথিবী একটি পাগলা গারদ-স্বরুপ, আর তার অধিবাসীরা পাগলের মত। বন্দীরা যেমন বন্দি-শালায় শৃঙ্খল-বদ্ধ, তারাও তেমনি দুনিয়ার মায়া-মমতায় আবদ্ধ।

১২. মনে রেখো, পারলৌকিক সম্পদের ঘটতি না করে পৃথিবীতে কাউকে সম্পদ দান করা যায় না। জাগতিক জীবনে তুমি যা অর্জন করেছ, পরকালে তাই কাটা যাবে। এখন এ জীবনে কম বা বেশী উপার্জন করা তোমার অভিরুচি।

১৩. পার্থিব জীবনে দামী পোশাক ও সুস্বাদু খাদ্যের প্রতি আসক্ত হয়ো না। কেননা, তাহলে জান্নাতী লেবাস ও সুখাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

১৪. আল্লাহ্‌ পর্বতসমূহকে বললেন, তোমাদের একটি পর্বতে আমি আমার এক নবীর সঙ্গে কথা বলতে চাই। একমাত্র তুর পর্বত ছাড়া সবাই দর্পভরে তা অস্বীকার করল। কিন্তু তুরের নম্রতায় খুশী হয়ে আল্লাহ্‌ সেখানে মূসা (আঃ) নবীর সঙ্গে বাক-বিনিময় করেন, তাতে তুর পর্বতের গৌরব বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ্‌র কাছে নম্রভাব প্রকাশ করা, তার আজ্ঞাবহ হওয়া আর তিনি যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকার নামই বিনয়।

১৫. যে নিজেকে নিজে সম্মানিত মনে করে সে বিনয়ী নয়। তোমরা কেউ তিনটি বিষয়ের খোঁজ করো না। কেননা, তা পাওয়া যাবে না যেমন-

(ক) এমন আলেম, যিনি জ্ঞান, বিদ্যা ও আমলে সমান সমান।

(খ) এমন দরবেশ, যার নির্মলতা বা বিশুদ্ধতা কাজের অনুরূপ।

(গ) এমন ভাই, যে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত।

১৬. যে আপন ভাইয়ের সঙ্গে বাহিক্য প্রীতি প্রদর্শন করে কিন্তু অন্তরে বিদ্বেষ ভাবাপন্ন, আল্লাহ্‌ পাক তার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন। এরূপ ব্যক্তি বিচার দিবসে অন্ধ ও বধির হয়ে ওঠাবে।

১৭. পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সৎ কাজের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করা কপটতার নামান্তর। লোক দেখানো সৎ কাজ সম্পাদন শেরেকী হিসাবে গন্য হয়। আল্লাহ্‌ তোমাকে এ দুটি বিষয় থেকে বাচিয়ে রাখলেই তোমার মাঝে খাঁটি আল্লাহ্‌ প্রেম সৃষ্টি হবে।

১৮. আল্লাহ্‌ যখন যে অবস্থায় রাখেন তাতে সন্তুষ্ট থাকার নামই ত্যাগ।

১৯. আল্লাহ্‌ সম্পর্কে যিনি যত বেশী জ্ঞান লাভ করেন তিনি তত বেশী তার ইবাদাত করেন। দুনিয়ার কারও কাছে সাহায্যের প্রত্যাশা না করাই বীরত্ব।

২০. যিনি আল্লাহ্‌র প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসী, তিনিই তার প্রতি নির্ভরশীল হন। আর যিনি আল্লাহ্‌র প্রতি দোষারোপ করেন, তিনি কখনই আল্লাহ্‌র ওপর নির্ভরশীল নন।

২১. কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, তুমি কি আল্লাহকে ভালোবাস? তো চুপ করে থাকাই ভালো। কেননা, যদি বল ভালোবাসি না, তাহলে তা হবে অধর্ম। আর যদি বল ভালোবাসি, তাহলে তা হবে মিথ্যা। কেননা তোমার কাজ তার বিপরীত।

২২. কেউ কোন চতুষ্পদ জন্তুকে অভিশাপ দিলে সে এর উত্তরে আমীন বলে। তারপর এই বলে প্রার্থনা করে, আমার ও এই ব্যক্তির মধ্যে যে তোমার বেশী অবাধ্য- এই অভিশাপ তার ওপর আপতিত হোক।

২৩. দুটি জিনিস হৃদয় ধ্বংস করে-

(ক) অধিক ভোজন,

(খ) বেশী শয়ন।

২৪. অজ্ঞতা-প্রসুত অবস্থায় অনেকের মধ্যে কিছু কিছু স্বভাব দেখা যায়। যেমন-

(ক) বিশ্ময়কর কিছু না দেখেও হাসা

(খ) লোককে উপদেশ প্রদান কিন্তু নিজে তদনুরূপ আমল না করা

(গ) রাত্রি জাগরণে আলস্য করা।

২৫. আল্লাহ্‌ তাঁর এক নবীকে নির্দেশ দেন, আপনি পাপীদের আশ্বাস দিন, তারা যদি তওবা করে, আমি তা কবুল করব। আর পুণ্যবানদের এই বলে ভয় দেখান যে, আমি ইচ্ছা করলেই সবাইকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ফোজায়েল (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।