হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – ২য় পর্ব

হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

একদিন আবু বকর আইয়াশ তাঁর বাড়ীতে গিয়ে দেখেন, একখানি রুটি হাতে নিয়ে তিনি চুপচাপ কাঁদছেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রুটি হালাল না হারাম তা জানা নেই। তাই ইতস্ততঃ করছি। একদিন অন্য একজন দেখেন, একটা পানির পাত্র রোদে রেখে দিয়েছেন। তিনি বললেন, পানি রোদে রেখে দিয়েছেন। তিনি বললেন, পানি রোদে রেখেছেন কেন? গরম হয়ে যাবে যে! হযরত দাউদ (রঃ) বললেন, যখন পানি রাখি তখন ওখানে ছায়া ছিল। পরে রোদ এসেছে। কিন্তু এখন পাত্রটি তুলে নিয়ে ছায়ায় রাখতে আমার লজ্জা হয়। কেননা আল্লাহ মনে করতে পারেন, তাঁর ধ্যান বন্ধ রেখে আরামের তাগিদে আমি সেটি অন্যত্র সরিয়ে রেখেছি।

হযরত আবু দাউদ (রঃ)-এর পৈতৃক বাড়িটি ছিল পুরাতন, কিন্তু বৃহৎ। বাড়ীর এক অংশ ভেঙ্গে পড়ায় তিনি অন্য অংশে বাস করতে থাকেন। কিছুদিন পর সে অংশটিও ধ্বসে যায়। তিনি আশ্রয় নেন বাড়ীর দরজায়। কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, বাড়িটা মেরামত করছেন না কেন? তিনি জবাব দেন, আমি আল্লাহর কাছে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ, পার্থিব জগতে আমি কোন বাড়ী নির্মাণ করব ধরে এ বাড়ীর দিকে আমার নজর নেই। আমার খেয়াল দৃষ্টি অন্য দিকে।

একবার কয়েকজন লোক তাঁকে বলল, আপনি এভাবে মানুষের সংস্রব সংসর্গ ছেড়ে দিয়েছেন কেন? তিনি বললেন, কার সংস্রবে যাব বল? যদি আমি আমার চেয়ে কম বয়সী লোকের কাছে যাই, বয়োজৈষ্ঠ বলে তারা আমাকে ধর্মোপদেশ দেবে না। আর যদি বড়দের কাছে যাই, তাহলে তারা দোষত্রুটি শুধরে না দিয়ে আমার সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করবে, আমাকে নির্দোষ-নিখুঁত মনে করবে। অতএব লোকের সংস্রবে আমার কী লাভ! তাঁকে আবারও জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি এখনও শাদী করছেন না কেন?

তিনি বললেন, আমি একটি মহিলার সঙ্গে প্রতারণা করতে পারব না।

কী রকম? শাদীর পরে তার খোরপোষের দায়িত্ব নিতে হবে। সেটা আমার দ্বারা হবে না।

আপনি দাড়িতে চিরুনি ব্যবহার করেন না কেন?

তার উত্তরঃ আমার সময় কই?

জ্যোৎস্নার আলো ভরা এক রাত। বাড়ীর ছাদে উঠে তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন আর আকাশের অসংখ্য গ্রহ-তারার বিষয়ে চিন্তা করছেন। হঠাৎ দেখা গেল, তিনি কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। পড়ার শব্দে আশপাশের লোকেরা ভাবল, হয়ত ছাদে চোর উঠেছে। তড়িঘড়ি ছাদের উপরে উঠে এসে তারা দেখে, হযরত দাউদ (রঃ) পড়ে রয়েছেন। তারা বলল, আপনাকে এভাবে কে ফেলে দিল? তিনি বললেন, তা তো বলতে পারি না। কেননা, আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।

শোনা যায়, তিনি একাধারে রোজা রাখতেন। এক গ্রীষ্মের দুপুর রোদে বসে তিনি এবাদত করছেন। মা তাঁকে ছায়ায় বসতে বললেন। কিন্তু তিনি বললেন, আত্মার আরামের উদ্দেশ্যে স্থান পরিবর্তনের করতে তাঁর লজ্জা হয়।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।