হযরত দাউদ (আঃ) এর পুত্রের দূরদর্শিতা-৪র্থ পর্ব

হযরত দাউদ (আঃ) এর পুত্রের দূরদর্শিতা-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

তখন হযরত দাউদ (আঃ) শাহাজাদা কে দরবারে ডাকলেন, ছোলায়মান পিতার নিকট এসে ছালাম দিলেন। হযরত দাউদ (আঃ) বললেন, তুমি বার বার বৃদ্ধা কে আমার নিকট প্রেরণ করে আমাকে হয়রানি করে তুলছ কেন?

বাতাস কি আমার অধিন যে আমি তাকে এনে বৃদ্ধার সম্মুখে বিচার করব। এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। 

অতএব এ বিষয় বৃদ্ধাকে তুমি পুনঃ পুনঃ কেন পেরণ করেছ

পিতার কথা শুনে হযরত ছোলায়মান (আঃ) বললেন। হে আল্লাহর খলিফা ! আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করলে বাতাস অবশই আপনার নিকট এসে হাজির হবে। 

তখন আপনি তাঁর জবানবন্দী শুনে ন্যায় বিচার করবেন। না হয় আপনি ন্যায় বিচারের গাফিলতি করছেন বলে কিয়ামতের দিন ভীষণ বিপদের সম্মুখীন হবেন। আপনার দোয়ার পরে যদি আল্লাহ বাতাসকে আপনার দরবারে হাজির না করে দেন তখন আপনার আর কৈফিয়ত দিবার মত কথা থাকবে না। কিন্তু বাতাসকে হাজির করার দোয়া না করে আপনি বৃদ্ধাকে বিদায় করতে পারেন না।

বিষয়টি গভীর ভাবে চিন্তা করে হযরত দাউদ (আঃ) ছোলায়মানকে বললেন, হ্যাঁ, তোমার কথা যুক্তিসঙ্গত।  অতএব চল আমরা বাপবেটা মিলে আল্লাহর দরবারে বাতাসকে হাজির করার দোয়া করি। এই বলে দুই জন নবী আল্লাহর দরবারে হাত তুললেন। দুই জন উঁচু পর্যায়ের নবীর দোয়া আল্লাহ তায়ালা বেকার করে দিতে পারেন না। তিনি বাতাস কে একটি আকৃতি করে হযরত দাউদ (আঃ) এর দরবারে হাজির করে দিলেন।

বাতাস নবিদ্বয়কে ছালাম করে তাদের সম্মুখে দন্ডায়মান হয়ে রইল। হযরত দাউদ (আঃ) তখন বাতাস কে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এই বৃদ্ধার আটা কেন উড়িয়ে নিয়েছ? বাতাস উত্তর দিল, হে আল্লাহর খলিফা! বৃদ্ধা যখন আটা নিয়ে বাসায় ফিরছিল তখন গভীর সমুদ্রে একটি জাহাজের তলদেশ ছিদ্র হয়ে যাত্রীরা ও বহু মূল্যবান দ্রব্যাদী  তলিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় যাত্রীরা নিয়ত করে, যদি তাদের জাহাজ এই বিপদ থেকে রক্ষা পায় তাহলে তারা জাহাজের সকল মালামাল গরিব দুঃখীকে দান করবে। 

এ সমস্ত যাত্রীর মধ্যে অনেক নেককার লোক ছিলেন। যাদের দোয়া কবুল করে জাহাজ উদ্ধারের নিমিত্ব আমাকে নির্দেশ প্রদান করেন। আমি তখন বৃদ্ধার আটা উড়িয়ে নিয়ে সে জাহাজের তলদেশর ছিদ্র বন্ধ করে দেই।  ফলে জাহাজ ও যাত্রীরা মৃত্যুর বিপদ থেকে রক্ষা পায়। হযরত দাউদ (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন জাহাজ টি এখন কোথায়? তখন বাতাস বলল, জাহাজটি এই মাত্র শহরের প্রান্তে সমুদ্রতীরে নঙ্গর করেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি তাহলে যেতে পার আমি জাহাজের খবর নিচ্ছি।

হযরত দাউদ (আঃ) সমুদ্র তীরে লোক প্রেরণ করে জাহাজের যাত্রী এবং নাবিকদের ডাকলেন। কিছু সময়ের মধ্যে তারা এসে খলিফার দরবারে এসে পৌঁছাল। তখন তিনি বললেন, তোমরা জাহাজের সমুদয় মালামাল গরীব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ এর অঙ্গীকার করেছ। সে মর্মে এ বৃদ্ধাকে সমস্ত মালামালের অর্ধেক দিবে বাকি অর্ধেক গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করবে।

জাহাজের নাবিক ও যাত্রীরা খলিফার কথা শিরধার্য করে নিল। বৃদ্ধা কে তাদের সঙ্গে নিয়ে গেল এবং জাহাজের সমুদয় মাল খালাশ করে সুষ্ঠ বণ্টন করে অর্ধেক বৃদ্ধাকে দিয়েছিল। বাকি অর্ধেক গরিব-দুঃখীকে দান করল।  

দীর্ঘদিন পরে একদা হযরত দাউদ (আঃ) বৃদ্ধার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি দেখতে পালেন বাড়ির কোন চিহ্ন নেই।  সেখানে বিরাট বিরাট অট্টলিকা চতুর্দিকে ফুলবাগান। সম্মুখে দারোয়ান। চত্তরে ঘোড়ার গাড়ি। তখন হযরত দাউদ (আঃ) সেখানের লোকদের কে জিঙ্গেস করলেন। এখানে এক বৃদ্ধার বাড়ি ছিল।  সে বৃদ্ধা এখন কোথায়? লোকেরা তাঁর কথার উত্তরে বলল, হুজুর! এ প্রাসাদ অট্টলিকা সেই বৃদ্ধা মহিলার।  সে নাকি বাতাসের বীরুধে আপনার কাছে  অভিযোগ করে অনেক ধন-সম্পদের মালিক হয়েছে। এখন তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর। 

হযরত দাউদ (আঃ) এর পুত্রের দূরদর্শিতা-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।