হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১২
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) – পর্ব ১১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
৩৪. ভালবাসার পাত্র যদি বস্তু বা ব্যক্তি হয় তাহলে ঐ বস্তু বা ব্যক্তির বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসাও বিলুপ্ত হয়।
৩৫. যতক্ষণ না প্রেম ভালবাসা কায়েম হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে বিলীন করা হয় না। আর প্রেমিকের বহু কথাবার্তা সাধারণ মানুষের কাছে ধর্মবিরোধী বলে মনে হয়।
৩৬. কোন বস্তু নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করা ও তার সত্তাকে পাওয়ার নামই হল মোশাহাদ।
৩৭. মোরাকবা ও লজ্জা- এ দুয়ের মধ্যে পার্থক কি?
উত্তরঃ অদৃশ্য বস্তু লাভ করার উদ্দেশ্যে প্রতীক্ষা করা হল মোরাকাবা। আর লজ্জা হল উপস্থিতির ক্ষেত্রে পরম প্রদর্শন করা।
৩৮. দরবেশগণের পক্ষে তাঁদের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি লক্ষ্য রাখা অপেক্ষা কঠিন আর কোন কাজ নেই।
৩৯. পার্থিব কাজে নিমজ্জিত না হওয়াই প্রকৃত দাসত্ব।
৪০. দাসত্ব দু’টি স্বভাবের মধ্যে নিহিত। (ক) ভিতরে-বাইরে আল্লাহ্র সঙ্গে সততা রক্ষা করা। (খ) সব কাজে রাসূলুল্লাহর অনুগামী হওয়া।
৪১. স্বাদে তৃপ্তি আর চেষ্টায় বিশ্বাস – এ দু’টি ত্যাগ করতে পারলেই দাসত্বের হোক আদায় হয়।
৪২. নিজেকে নেয়ামতের অনুপযুক্ত বলে ধারণা করাই হল কৃতজ্ঞতা।
৪৩. যেখানে মিথ্যা না বললে রক্ষা পাওয়া মুশকিল, সেখানেও মিথ্যা না বলা হল প্রকৃত সত্যনিষ্ঠা।
৪৪. প্রকৃত আল্লাহ্ প্রেমিকের প্রতিদিন চল্লিশবার ভাবান্তর হয়। অথচ কপট ধার্মিক ব্যক্তি চল্লিশ বছর একইভাবে জীবন কাটায়।
৪৫. প্রকৃত ফকিরের লক্ষণ হল, সে কারও কাছে কিছু চায় না। কারও সঙ্গে ঝগড়া করে না। কেউ ঝগড়া করতে চাইলেও চুপ করে থাকে।
৪৬. আন্তরিক ঈমান ক্রমবর্ধ্মান। মৌখিক ঈমান স্থির, বাড়েও না, কমেও না। কিন্তু রোকনসমূহ বাড়ে-কমে।
৪৭. ধৈর্যের চূড়ান্ত সীমা নির্ভরতা।
৪৮. ধৈর্য মানুষকে বিনা প্রার্থনায় ও মিনতি ছাড়াই আল্লাহ্র সাথে যুক্ত রাখে।
৪৯. তিক্ত জিনিস আহার করেও মুখ বিকৃত না করার নাম ধৈর্য আর আহার না করেও আহার করার মতো ভাব প্রকাশ করাকে বলে তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতা।
৫০. রুজি-রোজগার না করার নামও নির্ভরতা।
৫১. দোজাহানের কারও চেয়ে নিজেকে উত্তম বা শ্রেষ্ঠ মনে না করে একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কারও মুখাপেক্ষী না হওয়াই নম্রতা।
৫২. চারটি বস্তুর নাম সৎ স্বভাব। (১) বদান্যতা, (২) ভালোবাসা। (৩) উপদেশ, (৪) অনুগ্রহ।
৫৩. মন্দ স্বভাবের আলেম অপেক্ষা সৎ স্বভাবের মূর্খের সাহচার্য উত্তম।
৫৪. আল্লাহর নিয়ামত ও সেই সঙ্গে নিজের অপরাধের কথা চিন্তা করলে যে অবস্থায় সৃষ্টি হয়, তারই নাম লজ্জা।
৫৫. নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহ্র ইচ্ছার ওপর নিজেকে ছেড়ে দেওয়াই হল রেজা।
৫৬. তওবার অবস্থা তিনটি। যথাঃ (ক) আল্লাহ্র নিকট লজ্জিত হওয়া, (খ) পাপ কাজ বর্জন করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা এবং (গ) জুলুম ও ঝগড়া-কলহ থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা।
৫৭. সাধারণ শিষ্যের পক্ষে শয়তানের বা রিপুর প্রতারণা থেকে নির্ভর থাকা কবীরা গুনাহ। আর আল্লাহ্র প্রেমে মশগুল তাপসের পক্ষে শয়তান পক্ষে শয়তান বা রিপুর প্ররোচনা থেকে নিশ্চিন্ত হওয়া কুফরী।
৫৮. সাধনার মূল কথা কি?
উত্তরঃ সৃষ্টিজগত থেকে মনকে সরিয়ে নেওয়া, স্বভাব ও রিপুর অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকা, মানবীয় গুণ থেকে রিপুকে সংহার করা, রিপুর কামনা-বাসনা থেকে দূরে অবস্থান করা, মারেফাতের গুণবৈশিষ্ট্যের ওপর নিজেকে সু প্রতিষ্ঠিত রাখা, আল্লাহ্র তত্ত্বজ্ঞানে দৃঢ় হওয়া, যেসব বস্তু রোজ কিয়ামতে উপকার দেবে, সে সব বস্তুর কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া সবাইকে উপদেশ দান করা, আল্লাহ্র হক যথারীতি আদায় করা ও শরীয়তের মধ্যে প্রতিটি বিষয়ে রাসূলুল্লাহর অনুসরণ করা।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া