হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৮
আপনি আমাদিগকে যাইবার অনুমতি দান করুন। নাজাশী বলিলেন, ঠিক আছে এবং আমাদিগকে সহিত যে ব্যবহার করিয়াছি তাহা তোমার নবী (সাঃ)কে বলিও, আর আমরা এই প্রতিনিধি তোমাদের সঙ্গে থাকিবে। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবুদ নাই এবং তিনি (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)) আল্লাহর রাসূল। তাঁহাকে বলিও, তিনি যেন আমার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন।
হযরত জাফর (রাঃ) বলেন, আমরা সেখান হইতে রওয়ানা হইয়া মদীনায় পৌঁছিলে রাসূল (সাঃ) আমাকে স্বাগত জানাইলেন এবং আমার সহিত গলাগলি করিলেন। তারপর বলিলেন, জানি না আমি খাইবার বিজয়ে অধিক আনন্দিত হইয়াছি, না জাফরের আগমনে অধিক আনন্দিত হইয়াছি? হযরত জাফর (রাঃ) খাইবার বিজয়ের সময় ফিরিয়া আসিয়াছিলেন। রাসূল (সাঃ) বসিয়া পড়িলেন। নাজাশীর দূত বলিল, এই জাফর! তাহাকে জিজ্ঞাসা করুন, আমাদের বাদশাহ তাহার সহিত কীরূপ ব্যবহার করিয়াছেন। হযরত জাফর (রাঃ) বলিলেন, জ্বী, হ্যাঁ, তিনি আমাদের সহিত
এই এই করিয়াছেন এবং আসিবার সময় আমাদিগকে সওয়ারী ও সফরের সামানপত্র দিয়াছেন। তিনি কালেমায় শাহাদাত পড়িয়াছিলেন যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবুদ নাই আর আপনি আল্লাহর রাসূল। আর তিনি আমাকে বলিয়াছিলেন যে, হুজুর (সাঃ)-এর নিকট আরজ করিও, যেন তিনি আমার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন। এইকথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উঠিয়া ওযু করিলেন এবং তিনবার এই দোয়া করিলেন- اللهم اغفرللنجاشي
অর্থঃ আয় আল্লাহ, নাজাশীকে মাফ করিয়া দিন।
মুসলমানগণ ‘আমীন’ বলিলেন। অতঃপর হযরত জাফর (রাঃ) নাজাশীর দূতকে বলিলেন, তুমি যাও এবং রাসূল (সাঃ)কে যাহা করিতে দেখিয়াছ তোমার বাদশাহকে উহার সংবাদ দিবে। (বিদায়াহ)
উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে আবি হাসমা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা হাবশা যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করিতেছিলাম এবং আমার স্বামী হযরত আমের (রাঃ) আমাদেরই কোন প্রয়োজন বাহিরে গিয়াছিলেন, এমন সময় হযরত ওমর (রাঃ) আমার সামনে আসিয়া দাঁড়াইলেন। তিনি তখন মুশরিক ছিলেন এবং আমরা তাহার পক্ষ হইতে নানা রকমের কষ্ট-যাতনা সহ্য করিতেছিলাম।
হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, হে উম্মে আবদুল্লাহ, তোমরা চলিয়া যাইতেছ? হযরত উম্মে আবদুল্লাহ বলিলেন, হ্যাঁ, তোমরা যখন আমাদিগকে কষ্ট দিতেছ এবং আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করিতেছ, অতএব আমরা চলিয়া যাইতেছি। আল্লাহর জমিনের কোন এক স্থানে যাইয়া থাকিব, যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য (এই সকল মুসিবত হইতে) মুক্তির পথ করিয়া দেন। হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, আল্লাহ তোমাদের সঙ্গী হউন।
হযরত উম্মে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হযরত ওমর (রাঃ) এর মধ্যে আমি তখন এমন বিগলিতভাব লক্ষ্য করিলাম যাহা ইতিপূর্বে কখনও তাহার মধ্যে দেখি নাই। অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) চলিয়া গেলেন। আমার ধারণা হয় যে, আমাদের দেশ ছাড়িয়া চলিয়া যাওয়াতে তাঁহার অন্তরে ব্যথা লাগিতেছিল।
হযরত আমের (রাঃ) আমাদের প্রয়োজন সমাধা করিয়া ঘরে আসিলে আমি বলিলাম, হে আবু আবদুল্লাহ, তুমি যদি একটু পূর্বে আসিতে তবে দেখিতে আমরা চলিয়া যাইব কারণ হযরত ওমর (রাঃ)এর মধ্যে কেমন বিগলিতভাব সৃষ্টি হইয়াছিল এবং তাহাকে কেমন ব্যথিত দেখাইতেছিল। হযরত আমের (রাঃ) বলিলেন, তুমি কি তাঁহার ইসলাম গ্রহণের আশা করিতেছ? আমি বলিলাম, হ্যাঁ।
হযরত আমের (রাঃ) বলিলেন, যতক্ষণ না খাত্তাবের গাধা মুসলমান হইয়াছে ততক্ষণ তুমি যাহাকে দেখিয়াছ সে (অর্থাৎ হযরত ওমর (রাঃ) ) মুসলমান হইবে না। হযরত উম্মে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ইসলামের ব্যাপারে হযরত ওমর (রাঃ)এর কঠোর বিরোধিতার কারণে নিরাশ হইয়া হযরত আমের (রাঃ) এই কথা বলিয়াছেন। হযরত উম্মে আবদুল্লাহ (রাঃ)এর নাম ছিল লায়লা।
হযরত খালেদ ইবনে সাঈদ ইবনে আস ও তাঁহার ভাই হযরত আমর (রাঃ) উভয়ে হাবশাগামী মুহাজির ছিলেন। হযরত খালেদ (রাঃ) বলেন, বদর যুদ্ধের এক বৎসর পর যখন হাবশাগামী মুহাজিরগণ রাসূল (সাঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলেন তখন তাহারা নিকতবর্তী হইলে রাসূল (সাঃ) তাহাদেরকে স্বাগত জানাইবার জন্য আগাইয়া গেলেন। তাহারা বদরে অংশগ্রহণ করিতে না পারার দরুন মনক্ষুন্ন হইতেছ? লোকেরা এক হিজরত করিয়াছে আর তোমরা দুই হিজরত করিয়াছ। একবার তোমরা হিজরত করিয়া হাবশার বাদশাহের নিকট গিয়াছ। পুনরায় তোমরা তাহার নিকট হইতে হিজরত করিয়া আমার নিকট আসিয়াছ।
হযরত আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় সংবাদ পাইলাম যে, নবী কারীম (সাঃ) হিজরত করিয়া মদীনা চলিয়া গিয়াছেন। অতএব আমি ও আমার দুইভাই, আমরা তিনজন নবী কারীম (সাঃ)-এর নিকট হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলাম। আমি সবার মধ্যে ছোট ছিলাম। আমার অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন হযরত আবু বুরদা (রাঃ) ও অপরজন হযরত আবু রুহম (রাঃ) ছিলেন।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা