হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৭

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তবে শেষাংশে এরূপ বলা হইয়াছে যে, (নাজাশী বলিলেন,) যদি আমার উপর বাদশাহীর দায়িত্ব না হইত তবে আমি তাঁহার খেদমতে হাজির হইয়া তাঁহার জুতা মোবারক চুম্বন করিতাম। (মুসলমানদেরকে বলিলেন) তোমরা আমার দেশে যতদিন ইচ্ছা হয় অবস্থান কর। এই কথা বলিয়া নাজাশী আমাদের খাওয়া-দাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করিবার আদেশ দিলেন।

হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বলেন, কোরাইশগণ আমর ইবনে আস ও ওমারাহ ইবনে ওলীদকে আবু সুফিয়ানের পক্ষ হইতে উপঢৌকন সামগ্রী দিয়া নাজাশীর নিকট প্রেরণ করিল। আমরা তখন নাজাশীর দেশে অবস্থান করিতেছিলাম। তাহারা নাজাশীকে বলিল, আমাদের কতিপয় নীচ প্রকৃতির নির্বোধ লোক আপনার এখানে চলিয়া আসিয়াছে।

আপনি তাহাদিগকে আমাদের হাতে তুলিয়া দিন। নাজাশী বলিলেন, তাহাদের বক্তব্য না শুনিয়া আমি তাহাদিগকে তোমাদের হাতে তুলিয়া দিতে পারি না। হযরত জাফর (রাঃ) বলেন, নাজাশী আমাদিগকে লোক পাঠাইয়া ডাকাইলেন। অতঃপর আমরা দরবারে উপস্থিত হইলে আমাদিগকে বলিলেন, ইহারা অর্থাৎ আমর ইবনে আস ও ওমারাহ ইবনে ওলীদ (রাঃ) কি বলিতেছে? হযরত জাফর (রাঃ) বলেন, আমরা বলিলাম, ইহারা মূর্তিপূজা করে।

আল্লাহ তাঁহার উপর ঈমান আনিয়াছি এবং তাঁহাকে সত্য বলিয়া স্বীকার করিয়াছি। নাজাশী আমর ইবনে আস ও ওমারাহ ইবনে ওলীদকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহারা কি তোমাদের গোলাম? তাহারা বলিল, না। নাজাশী জিজ্ঞাসা করিলেন, তবে কি তাহাদের উপর তোমাদের কোন পাওনা ঋণ রহিয়াছি? তাহারা বলিল, না। নাজাশী বলিলেন, তোমরা তাহাদের পথ ছাড়িয়া দাও। অতঃপর আমরা তাঁহার দরবার হইতে বাহির হইয়া আসিলাম।

আমরা দরবারে হইতে বাহির হইয়া আসিবার পর আমর ইবনে আস বলিল, আপনারা হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে যাহা বলিয়া থাকেন ইহারা তাহার বিপরীত বলিয়া থাকে। নাজাশী বলিলেন, যদি তাহারা হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে আমি যেরূপ বলি সেরূপ না বলে তবে আমি তাহাদিগকে আমার দেশে এক মিনিটের জন্য অবস্থান করিতে দিব না।

অতঃপর আমাদিগকে ডাকিবার জন্য লোক পাঠাইলেন। দ্বিতীয় বারের তলব আমাদের জন্য প্রথম বার অপেক্ষা অধিক কঠিন মনে হইল। আমরা পুনরায় তাহার দরবারে উপস্থিত হইলাম। নাজাশী বলিলেন, তোমাদের নবী হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে কি বলেন, আমরা বলিলাম, তিনি বলেন যে, হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট রূহ এবং তাঁহার সেই কালেমা যাহা কুমারী ও পুরুষের সংশ্রব হইতে পৃথক বসবাসকারিণী (হযরত মারইয়াম (আঃ)) এর নিকট প্রেরণ করিয়াছেন।

হযরত জাফর (রাঃ) বলেন, নাজাশী লোক পাঠাইয়া বলিলেন, অমুক অমুক বড় পাদ্রী ও সন্ন্যাসীকে আমার নিকট ডাকিয়া আন। তাহাদের মধ্য হইতে কিছু লোক উপস্থিত হইলে তিনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে কি বল? তাহারা জবাব দিল, আপনি আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আলেম আপনি কি বলেন, নাজাশী মাটি হইতে কোন ছোট একটি জিনিস উঠাইয়া বলিলেন, হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে এই সকল মুসলমানগণ যাহা বলিয়াছে তাহা অপেক্ষা তিনি এই ছোট জিনিস পরিমাণও অতিরিক্ত নহেন।

তারপর নাজাশী মুসলমানদেরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদেরকে কি কেহ কষ্ট দেয়? তাহারা জবাব দিলেন, হ্যাঁ। অতএব নাজাশীর আদেশে একজন ঘোষণাকারী এই মর্মে ঘোষণা করিয়া দিল যে, যে ব্যক্তি এই মুসলমানদের কাহাকেও কষ্ট দিবে তাহার নিকট হইতে চার দেরহাম জরিমানা আদায় করিবে। অতঃপর নাজাশী মুসলমানদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই পরিমাণ জরিমানা তোমাদের জন্য যথষ্ট হইবে কি? আমরা বলিলাম, না। অতএব নাজাশী জরিমানা দ্বিগুণ অর্থাৎ আট দেরহাম করিয়া দিলেন।

হযরত জাফর (রাঃ) বলেন, তারপর যখন রাসূল (সাঃ) মদিনায় হিজরত করিলেন এবং সেখানে তিনি বিজয় লাভ করিলেন তখন আমরা নাজাশীকে বলিলাম যে, রাসূল (সাঃ) বিজয়লাভ করিয়াছেন এবং তিনি হিজরত করিয়া মদীনা চলিয়া গিয়াছেন। যে সকল কাফেরদের অত্যাচার সম্পর্কে আমরা আপনার নিকট আলোচনা করিতাম, তিনি তাহাদিগকে কতল করিয়া দিয়াছেন। অতএব আমরা এখন তাঁহার নিকট চলিয়া যাইতে চাহিতেছি।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।