হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ২

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আমর ইবনে আস ও আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাবীআহ নাজাশীর নিকট পৌঁছিয়া প্রত্যেক সেনাপতির নিকট গেল এবং প্রত্যেককে উপঢৌকন পেশ করিয়া বলিল, আমরা আমাদের কতিপয় নির্বোধ লোকের ব্যাপারে এই বাদশাহের নিকট আসিয়াছি। তাহারা আপন কওমের ধর্ম ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু আপনাদের ধর্মও গ্রহণ করে নাই। আমাদিগকে তাহাদের কওমের লোকেরা প্রেরণ করিয়াছে, যেন বাদশাহ তাহাদিগকে কওমের নিকট ফেরত পাঠাইয়া দেন।

আমরা যখন বাদশাহের নিকট এই ব্যাপারে কথা বলিব তখন আপনারাও তাহাকে পরামর্শ দিবেন যেন তিনি এইরূপে করেন। সেনাপতিগণ প্রত্যেকেই (সম্মত হইয়া) বলিল, হ্যাঁ, আমরা এইরূপ করিব। তারপর তাহারা নাজাশীর নিকট উপঢৌকন সামগ্রী পেশ করিল। মক্কার উপঢৌকন সামগ্রীর মধ্যে পাকা চামড়া তাহার নিকট অধিক পছন্দনীয় ছিল। উপঢৌকন পেশ করিবার পর তাহারা নাজাশীকে বলিল, হে বাদশাহ, আমাদের কতিপয় নির্বোধ যুবক আপন কওমের ধর্ম ত্যাগ করিয়াছে। তাহারা আপনার ধর্মও গ্রহণ করে নাই বরং অজ্ঞাত এক মনগড়া ধর্ম গ্রহণ করিয়াছে। এখন তাহারা আপনার দেশে আসিয়া আশ্রয় লইয়াছে।

তাহাদের খান্দান, পিতা-মাতা, চাচাগণ এবং তাহাদের কওমের লোকেরা আমাদিগকে আপনার নিকট পাঠাইয়াছে যেন আপনি তাহাদিগকে নিজ কওমের নিকট ফেরত পাঠাইয়া দেন। কারণ, আপনার অপেক্ষা কওমের লোকেরাই তাহাদের বিষয়ে ভাল জানিবে। উপরন্ত তাহারা যেহেতু আপনার ধর্ম কখনও গ্রহণ করিবে না, সেহেতু আপনি কেন তাহাদের সাহায্য বা রক্ষণাবেক্ষণ করিবেন? নাজাশী (ইহা শুনিয়া) রাগান্বিত হইয়া বলিল, না। আল্লাহর কসম, তাহাদেরকে না ডাকিয়া, কথাবার্তা না শুনিয়া এবং তাহাদের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা না করিয়া আমি তাহাদিগকে ফেরত দিতে পারি না। তাহারা আমার দেশে আসিয়া আশ্রয় লইয়াছে এবং অন্য কাহারো প্রতিবেশী না হইয়া আমার প্রতিবেশী হওয়াকে পছন্দ করিয়াছে।

যদি তাহারা এমনই হয় যেমন ইহারা বলিয়াছে তবে তাহাদিগকে ফেরত দিব। অন্যথায় আমি তাহাদের হেফাজত করিব, তাহাদের ও মক্কাবাসীদের মধ্যে আমি পড়িব না এবং (তাহাদিগকে ফেরত প্রেরণ ডাকিল।) মুসলমানগণ নাজাশীর দরবারে হাজির হইয়া সালাম করিলেন কিন্তু তাহাকে সিজদা করিলেন না।

নাজাশী জিজ্ঞাসা করিল, হে (মুহাজিরীনের) দল, তোমরা কেন তোমাদের স্বজাতীয়দের ন্যায় আমাকে সিজদা করিয়া সালাম করিলে অভিমত কি? তোমাদের দ্বীন কি? নাজাশী জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা কি ইহুদী? তাহারা বলিলেন, না। বাদশাহ জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা কি তোমাদের কওমের দ্বীনের উপর আছ? তাহারা বলিলেন, না।

বাদশাহ জিজ্ঞাসা করিল, তবে তোমাদের দ্বীন কি? তাহারা বলিলেন, ইসলাম। বাদশাহ জিজ্ঞাসা করিল, ইসলাম কাহাকে বলে? তাহারা উত্তর দিলেন, আমরা আল্লাহর এবাদত করি, তাঁহার সহিত কাহাকেও অংশীদার করি না। বাদশাহ করিল, এই দ্বীন তোমাদের নিকট কে লইয়া আসিয়াছেন? তাহারা বলিলেন, আমাদের মধ্যেকার একজন এই দ্বীন আমাদের নিকট লইয়া আসিয়াছেন যাহাকে আমরা উত্তমরূপে জানি।

তাঁহার ও তাঁহার বংশ সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছি। আল্লাহ তায়ালা যেরূপ অন্যান্য নবীগণ আমাদের পূর্ববর্তী লোকদের নিকট প্রেরণ করিয়াছেন, সেরূপ তাহাঁকে আমাদের নিকট প্রেরণ করিয়াছেন। তিনি আমাদিগকে নেককাজ করা, দান-খয়রাত করা, অঙ্গীকার পালন করা ও আমানত পরিশোধ করার আদেশ করিয়াছেন। মূর্তিপূজা করিতে নিষেধ করিয়াছেন। এক আল্লাহ যাঁহার কোন অংশীদার নাই তাঁহার এবাদত করিতে আদেশ করিয়াছেন।

আমরা তাঁহাকে সত্য বলিয়া স্বীকার করিয়াছি, আল্লাহর কালামের পরিচয় লাভ করিয়াছি এবং তিনি যাহা কিছু আনিয়াছেন তাহা আল্লাহর পক্ষ হইতে আসিয়াছি বলিয়া করিয়াছি। এই সকল কারণে আমাদের কওম আমাদের ও এই সত্য নবীর শত্রু হইয়াছে। আমাদের দ্বারা মূর্তিপূজা করাইতে চাইয়াছে। আমরা নিজেদের দ্বীন ও প্রাণরক্ষার খাতিরে আপন কওমের নিকট হইতে আপনার নিকট পলায়ন করিয়া আসিয়াছি। সেই একই নূরের তাক হইতে বাহির হইয়াছে যেখান হইতে মূসা (আঃ)-এর দ্বীন বাহির হইয়াছিল।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।