হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নবুয়াতী পরীক্ষা-পর্ব ৭

হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নবুয়াতী পরীক্ষা-পর্ব ৬

তখন আমি প্রহরীদেরকে ডেকে বিবরণ বললাম, তারা তাকে এখান থেকে নিয়ে যায়।  পরবর্তী সময় নাকি তাকে শহরের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।  কে আসল কে নকল বাদশা তা আমি আদৌ বুঝতে পারি নি।  তবে বর্তমান শাহান শাহ নিজ হাতে আংটি নেয়ার পরে আর সে আমার নিকট জমা রাখে নি।  তাই আমার মনে কিছুটা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।  এমতাবস্থায় আমি গত দিন অতি গোপনে তাঁর গোছলের সময় হাম্মামখানার একছিদ্র দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম।  তাঁর সারা শরীরে পশম বোঝাই।  যা মানুষের শরীরে সাধারণত থাকে না।  তখন থেকে আমার সন্দেহ আরও বেড়ে গেল যে, বর্তমান শাহান শাহ আসল শাহান শাহ নন। 

সে কোন দৌত্য নিজ চেহারা পরিবর্তন করে শাহান শাহের রুপ গ্রহন করে আমার নিকট থেকে ধোঁকা দিয়ে আংটি হস্তগত করে সমগ্র রাজ্য, শক্তি ও সিংহাসন অধিকার করে নিয়েছে।   মন্ত্রী আসফ দাসীর বক্তব্য শুনে তাঁর বুঝতে তাঁর বাকি থাকল না।  তখন তিনি চল্লিশ জন তৌরাত কিতাবের হাফেজ একত্রিত কতে সিংহাসনের চতুর্দিকে সজোরে তৌরাত তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করলেন।  আল্লাহর বানি সজোরে উচ্চারণ আরম্ভ করার শকরা জীনের শরীরে জ্বালা আরম্ভ হল।  তাঁর শরীরের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল।  তখন সে অসহ্য হয়ে সিংহাসন ছেড়ে বাইরে চলে গেল।  তাঁর পরিষদবর্গ তাকে সিংহাসনে বসার অনুরোধ জানাল।

 কিন্তু সে কার কথায় কোন জবাব দিতে সক্ষম হল না।  এমন কি ধীরে ধীরে তাঁর চেহারা পরিবর্তন হয়ে  এক দুর্ধর্ষ দৌত্যের চেহারা ধারণ করল।  তখন অন্যান্য জীনেরা দেখল সে শকরা দৌত্য।  প্রধান মন্ত্রী তাঁতক্ষাণাৎ তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করলেন এবং বললেন শাহান শান ফিরে এলে তাঁর কঠোর বিচার হবে।  শকরাকে জেল হাজতে প্রেরণের পূর্বে তাকে জিজ্ঞেস করা হল তুই শাহান শাহের আংটি চুরি করে এযাবত আংটির বদৌলতে বাদশাহী করেছ এখন সে আংটি কোথায়? শকরা বলল, আমি যখন দেখলাম আংটি আমার ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।  তখন সহজে ছোলায়মান কে উহা ভোগ করতে দেওয়া আমার সহ্য হবে না।  এ কথা ভেবে আমি কিছুক্ষন পূর্বে আংটিটা সমুদ্রে ফেলে দিয়েছি।  প্রধানমন্ত্রী শকরার কথা শুনে বললেন, আংটি সমুদ্রে ফেলে কি হবে।  যদি হযরত ছোলায়মান (আঃ) আল্লাহর খাটি নবী হয়ে থাকেন তবে আংটি অবশই তাঁর হস্তগত হবে।  আর তোমার কপালে নেমে আসবে অশেষ দুঃখ কষ্ট ও যাতনা এবং পরিণাম হবে ভীষণ যন্ত্রনাদায়ক।  যা ইতোপূর্বে কোন জীন এনসানের জন্য আর বরাদ্দ করা হয়নি।  ওদিকে হযরত ছোলায়মান (আঃ) ধীবর কন্যাকে  নিয়ে ঘর সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন।  একদা তিনি বন্টনে তিনটি মাছ পেলেন।  দুটি মাছ বাজারে বিক্রয় করে আটা ও অন্যান্য সওদা করলেন।  বাকি একটি মাছ ঘরে নিয়ে আসলেন।  স্ত্রীকে মাছ কেটে রান্না করেতে বললেন,  স্ত্রী মাছ কাটতে গিয়ে  তাঁর পেটের মধ্যে একটি আংটি দেখতে পেল। 

তখন সে ছোলায়মান (আঃ) কে ডেকে বলল, দেখ দেখ মাছের পেটে কি এক আশ্চার্য জিনিস।  তখন হযরত ছোলায়মান (আঃ) বললেন, আমি  এখন জাল বুনার কাজ করছি আমাকে বিরক্ত কর না।  ওটাকে রেখে দাও, পরে দেখব এক কথায় তাঁর স্ত্রী আসস্থ হল না  সে চিৎকার দিয়ে বলল, খোদার দোহাই একবার দেখে যাও, মাছের পেটে আশ্চার্য এক আংটি পেয়েছি।  যাতে আমাদের ঘর উজ্জ্বল হয়ে গেছে।  এর উপরে কি যেন লেখা রয়েছে।

 আমি ধরতে সাহস হচ্ছে না।   তখন হযরত ছোলায়মান (আঃ) বিরক্ত হয়ে মাছের কাছ এসে দেখলেন, এটা তাঁর সেই স্বর্গীয় আংটিটি।  তখন তিনি স্ত্রী কে বললেন, একটু অপেক্ষা কর।  তিনি তড়িৎ গতিতে অজু করে দুরাকাত নামাজ আদায় করে এসে আংটি তুলে হাতে পড়লেন।  হযরত ছোলায়মান (আঃ) আংটি পরার সাথে সাথে তাঁর চতুর্দিকে থেকে জীন পরি, দৌত্য-দানবেরা এসে তাকে অভিবাদন জানাল।  পশু-পক্ষী এসে আনুগত্যতা প্রকাশ করল।  বাতাস তাঁর সিংহাসনে বহন করে জেলে পাড়ায় নিয়ে আসল। 

দেখতে দেখতে সেখানে হাজার হাজার জনতার ভিড় জমে গেল।  এলাকাটি একটি শহরে পরিণীত হল।  সিংহাসনের উজ্জ্বলতায় সারা এলাকা পরিষ্কার হয়ে গেল।  মুহূর্তের মধ্যে এত সমস্ত ঘটনা ঘটে গেল।  যার মধ্যে ধীবর কন্যা মাছটি কেটে ধুয়ে আনতে পারল না।   অবস্থা ও পরিস্থিতি দেখে সমস্ত জেলে পাড়ার মানুষ হতবাক হয়ে গেল।  ভেবে চিন্তে কেউ স্থির করতে পারল না।  হযরত ছোলায়মান (আঃ) তাঁর শ্বশুরের দিকের সমস্ত আত্নীয়- স্বজন ও পাড়া-পড়শীকে সিংহাসনে এনে বসালেন।  এবং শাহীখানা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন।  এতে তাঁরা আরো অধিক আশ্চার্যন্বিত হল।  তাদের বুদ্ধি আসার হয়ে গেল। 

যা তাঁরা দেখছে তা কি সত্যি না স্বপ্ন তা কল্পনা করতে পারল না।  দেখতে দেখতে নিকটস্থ বাজার, শাহরের মানুষ এসে ভিড় জমাল।  হযরত ছোলায়মান (আঃ) সকল মানুষকে ভুড়ী ভোজ দিয়ে আপ্যায়ন করল।   কিছু লোক এসে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নিকট তাঁর দীনহীন অবস্থায় অত্র আলাকায় আগমের কারণ জিজ্ঞেস করল।  এবং পরিচয় জানতে চাইল।  তখন তাঁর সিংহাসনের পরিষদবর্গের একজনে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নাম শুনেছে কিন্তু তাকে কোন দিন দেখে নি।  এবার আকস্নিক ভাবে তাঁর দর্শন লাভ করে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেল এবং তাঁর নিকট দোয়া গ্রহন ও সকল মুসকিল আছানের পরামর্শ গ্রহন করতে আরম্ভ করল। 

হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নবুয়াতী পরীক্ষা-শেষ পর্ব

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।