হযরত ছোলায়মান (আঃ)-এর জন্ম ও রাজত্ব -২য় পর্ব
হযরত ছোলায়মান (আঃ)-এর জন্ম ও রাজত্ব -১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর স্ত্রী ও দাসীর সংখ্যা ছিল এক হাজার। তিনি একই রাত্রে সকল স্ত্রী ও দাসীদের সাথে সহবাস করতে সক্ষম ছিলেন। প্রত্যেক স্ত্রী ও দাসীর জন্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রাসাদ।
তাফসীর কারকগণ হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর সিংহাসনের সৌন্দর্যের বিরাট বর্ণনা দিয়েছে। তাতে তারা উল্লেখ করেছেন যে সিংহাসনের অট্টলিকা সমূহের ইটগুলো ছিল স্বর্ণের, রৌপ্যের তৈরি এবং গাথুনি ছিল ইয়াকুত ও পান্না পাথর মিশ্রিত। কোন অট্টলিকা ছিল স্বর্ণের আস্তরণ করা। আবার কোন টা ছিল মূল্যবান পাথর লাগানো।
সিংহাসনের চারিদিকে মূল্যবান পাথর দ্বারা গাছ পালা তৈরি করে ফুলে সজ্জিত করা হয়েছিল। বাদশার আসনের সম্মুখে অনেক স্বর্ণের চেয়ার ছিল। তাতে বড় বড় আমীর ওমারাহগণ বসতেন। তাঁর পিছনে ছিল জমরুদ ও ইয়াকুত পাথরের তৈরি চেয়ার, যেখানে জিনের নেতাগন বসতেন। তাঁর পিছনে ছিল রৌপ্য নির্মিত চেয়ার যেখানে গন্যমান্য ব্যক্তিগন ও জিনেরা বসতেন। তাঁর পিছনে ছিল শ্বেত পাথরের চেয়ার যেখানে সাধারণ মানুষ ও জিন পরিরা বসতেন। সিংহাসনের সম্মুখে পাথর তৈরি দুটো বাঘের প্রতিকৃতি ছিল। যা অতি মূল্যবান পাথর দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। হযরত ছোলায়মান (আঃ) যখন সিংহাসনে আহরণ করতেন তখন তারা মৃদু ডাক দিয়ে মাথা নত করে তাকে সম্মান প্রদর্শন করত।
বিভিন্ন রকমের যে গাছ সমুহ তৈরি করা হয়েছিল তাঁর ডালে ডালে ময়ুর, বুলবুল ও অন্যান্য পাখির প্রতিকৃতি ছিল। তাদের পেটের মধ্যে মেশকআম্বর ও গোলাপ জাতীয় সুগন্ধি ভোরে দেওয়া হয়েছিল। হযরত ছোলায়মান (আঃ) যখন সিংহাসনে বসতেন তখন পাখিগুলো ডানা মেলে সুগন্ধি ছড়াতে থাকত। এছাড়া আঙ্গুর বেদানা নাসপাতি ও সুস্বাদু অনেক ফলের গাছ ছিল। সেগুলোতে অজস্র ফল ধরত। হযরত ছোলায়মান (আঃ) সকলকে নিয়ে পরিতৃপ্ত সহকারে সেগুলো ভক্ষণ করতেন।
এ সিংহাসন যখন যে এলাকায় গিয়ে থামত সেখানের জীব জানোয়ার, পশু- পক্ষী এসে হযরত ছোলায়মান (আঃ) কে অভিবাদন জানাত এবং নিজেদের সমস্যাবলীর কথা জানাত। হযরত ছোলায়মান (আঃ) তাদের সমস্যাবলীর সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহন করতেন। হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নিজস্ব চেয়ারখানি ছিল হাতির দাঁত, ফিরোজা,জমরুদ ও মারওয়েদ পাথর দ্বারা তৈরি। চেয়ারের দুই পাশে ছিল রৌপ্য নির্মিত কৃত্রিম লতা। যা সুগন্ধিযুক্ত সজ্জিত ছিল। চেয়ারের রং ছিল সাদা ও সবুজ। চেয়ারের উপরের গদি ছিল অনেক মূল্যবান। যা স্বর্ণের কারুকার্য খচিত ছিল। এভাবে বিভিন্ন সাজসজ্জায় সিংহাসন ছিল ভাস্কর মণ্ডিত।
কথিত আছে, হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর এ সিংহাসনের ও রাজমহল তৈরির ক্ষেত্রে জিনদের তৎপরতা ছিল প্রধান। দৌত্য দানবেরা সমুদ্র থেকে মূল্যবান মুক্তা ও পাথর সংগ্রহ করত এবং ভূগর্ভস্থ স্বর্ণ রৌপ্য খুজে বের করে শাহি দরবারে নিয়ে আসত। অতপর শিল্প নিপূন জীনেরা উহা যথাস্থানে লাগিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করত। ভাস্কর কার্যে দক্ষ জীনেরা পাথর খোদাই করে করে সৃষ্টি করে বেহেস্তের অপরূপ।
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর চারিদিকে ছিল ফুলের বাগান, ঝর্না ও ছোট নদী। যাতে সর্বদা পানির সাধারণ স্রোত চলমান থাকত। রাজ মহলের, মধ্যে ছিল বিরাট এবাদত খানা। সেখানে মানুষ সর্বদা এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকত। হযরত ছোলায়মান (আঃ) সপরিবারে সেই ইবাদাত খানায় ইবাদত করতেন দেশবাসির জন্য দোয়া করতেন।
হযরত ছোলায়মান (আঃ)-এর জন্ম ও রাজত্ব -শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন