এক ছিল বিধবা…তার ছিল দুই মেয়ে…বড় মেয়েটি ছিল রগচটা আর ঝগড়াটে…পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করে বেড়াত সে…তাই সহজে কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে চাইত না, মিশত না পর্যন্ত…তাকে দেখলেই সবাই মুখ ঘুরিয়ে রাখত… আর ছোট মেয়েটি আচার-আচরণে, কথা-বার্তায় ছিল যেমন নম্র তেমনি ভদ্র… দেখতেও ছিল সে অপূর্ব সুন্দরী। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, ওদের মা কিন্তু বড় মেয়েটিকেই ভালোবাসত…কেন যেন ছোট মেয়েটিকে দেখতে পারত না বিধবা…বড় মেয়েটির ছিল অনেক মজা। সারাদিন কোনো কাজ করতে হয় না তাকে। কেবল খায়-দায় আর ঘুমায়। অথচ ছোট মেয়েটি সারাদিন কাজ করে…রান্না থেকে শুরু করে ঘরের যতো কাজ- সব একাই তাকে সামলাতে হয়…এমনকি প্রতিদিন প্রায় আধা মাইল হেঁটে দূরের ঝরণা থেকে বালতি ভরে পানিও আনতে যেতে হয় তাকে…দুবার করে। একদিন ঝরণা থেকে পানি আনতে গেছে…এমন সময় এক বৃদ্ধা এসে বলল, খুব তেষ্টা পেয়েছে…আমাকে খানিক পানি দেবে মা? দেরি না করেই ছোট মেয়েটি বলল, এক্ষুণি দিচ্ছি…বলেই ঝরণার সবচেয়ে পরিষকার জায়গা থেকে পানি এনে বৃদ্ধার হাতে তুলে দিল..শুধু তাই নয়, সঙ্গে আনা জগটিও পানিতে ভরে উঁচু করে রাখল- যাতে বৃদ্ধাটি সহজেই আরো পানি পান করতে পারে…আসলে ওই বৃদ্ধাটি ছিলেন একজন পরী.. একটি ভালো মেয়ে কতটুকু ভালো হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্যই ওই দরিদ্র গ্রামটিতে তার আসা… পানি পান শেষ করে পরী বললেন…তুমি দেখতে কী সুন্দর! কেবল তাই নয়, বেশ ভদ্র আর নম্রও তুমি… আমি তোমার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি… তোমাকে কিছু উপহার দিতে চাই..অবশ্য তোমার জন্য একটা উপহার আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছি। তুমি যখন কথা বলবে, তখন প্রতিটি শব্দের জন্য তোমার মুখ থেকে একটি করে ফুল অথবা দামি পাথর বেরুবে… এদিকে পানি নিয়ে ঘরে ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। কাজেই মায়ের বকুনি থেকে বাঁচার জন্য এক প্রকার দৌড়ে বাড়ি ফিরল ছোট মেয়েটি। মাকে বলল, আসলে আমার অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে…আমি ক্ষমা চাইছি… মাকে এসব কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে বেরোল তিনটি গোলাপ, তিনটি মুক্তো আর তিনটি হীরে। বিধবা চিৎকার করে বলল, এসব কী হচ্ছে শুনি? তোমার মুখ থেকে হীরে আর মুক্তে বেরোতে দেখলাম মনে হচ্ছে। এর মানে কী আমার নয়নের মণি? কানে কানে বলে রাখি, এর আগে এত মধুর করে কিন্তু কখনো বিধবা তাকে সম্বোধন করেনি..যা যা ঘটেছে তার সবটুকু মাকে খুলে বলল মেয়েটি। বলার সময় তার মুখ থেকে কত যে গোলাপ, মুক্তো আর হীরে বেরিয়েছে, গুণে শেষ করা যাবে না… সব শুনে বিধবা বলল, ঠিক আছে। এবার ওখানে আমি আমার মেয়েকে পাঠাব..বড় মেয়েকেই কেবল নিজের মেয়ে বলে সম্বোধন করে বিধবা.. যাই হোক, বড় মেয়েকে ডাক দিল বিধবা, এখানে একটু এসো তো সোনামণি আমার! দেখে যাও, কথা বলার সময় তোমার বোনের মুখ থেকে কী বেরোচ্ছে..তুমিও কি চাও না তোমার মুখ থেকেও অমন মণিমুক্তো বের হোক? চাইলে শিগগিরই ঝর্ণাটার কাছে যাও..ওখানে এক বৃদ্ধাকে পাবে… সে তোমার কাছে পানি চাইবে… খুব ভালো ব্যবহার করে তাকে পানি দেবে..তারপর দেখবে তোমার মুখ থেকেও ওসব বেরুচ্ছে.. কিন্তু ঝগড়াটে মেয়েটি নাক কুঁচকে বলল, কক্ষণো না…কাউকে পানি খাওয়াতে আমার বয়েই গেছে। তাছাড়া ওখানে এখন যেতে ইচ্ছে করছে না আমার..এবার রেগে গেল বিধবা..চোখ রাঙিয়ে বলল, আমি তোমাকে যেতে বলেছি…এবং এক্ষুণি তুমি সেখানে যাবে… খুব অনিচ্ছার সঙ্গে পানি পান করার সবচেয়ে সুন্দর রুপোর ঘড়াটা নিয়ে রওনা দিল বড় মেয়ে এবং এক সময় পৌঁছে গেল ঝর্ণার ধারে..ওখানেই এক বৃদ্ধাকে বনের দিক থেকে আসতে দেখল সে..আর এসেই পানি চাইল… এই বৃদ্ধাই কিন্তু সেই একই পরী, যে তার ছোট বোনকে উপহার দিয়েছিল…বড় বোন শুনেও এসেছিল পরীর কথা..পরীর বদলে বৃদ্ধাকে দেখে তার মেজাজ তখন চরমে..দাঁত কামড়ে মেজাজি চেহারায় সে তাকাল বৃদ্ধার দিকে.. চোখ রাঙিয়ে বলল, তুমি কি মনে করো তোমাকে পানি পান করানোর জন্যই আমি এখানে এসেছি? তাও আবার এই রুপোর ঘড়া দিয়ে পানি দেব তোমাকে? কোনো দিন নয়..এতই যখন তেষ্টা তখন ওই তো কাছেই ঝর্ণা, মুখ লাগিয়ে যত খুশি পানি পান করো..কে তোমাকে নিষেধ করছে? অমন কথা শুনে পরী খুব আহত হলো..কঠিন গলায় বলল, তুমি মোটেও ভদ্র নও.. ঠিক আছে তোমার অমন আচরণের জন্যও তুমি উপহার পাবে..তুমি যখন কথা বলবে, তখন প্রতিটি শব্দের জন্য তোমার মুখ থেকে একটি করে সাপ অথবা বিচ্ছু বেরোবে.. বাড়ি ফেরার পর বিধবা জানতে চাইল, সব কিছু ঠিক মতো হয়েছে তো মা? পরীকে পেয়েছিলে তো? মায়ের কথায় ক্ষেপে গেল বড় মেয়ে। কর্কশ গলায় বলল, আবার জানতে চাও সব ঠিক আছে কিনা? বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে তিনটা সাপ আর তিনটা বিচ্ছু বেরোল..এটা দেখেই ভয়ে আঁতঙ্কে চিৎকার করে বিধবা বলল, হায় হায়! এ আমি কী দেখছি? তোমার ওই বোনই এসবের জন্য দায়ী..আমি এক্ষুণি ওকে বিদায় করছি..তারপর ছোট মেয়েটাকে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিল বিধবা.. ঘর থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবে ভেবে পেল না মেয়েটি..আশ্রয় নিল বনে..লুকিয়ে রইল ঝোপে..নিজের দুঃখের জন্য কাঁদতে লাগল একা একা.. কিন্তু বেশিক্ষণ কাঁদতে হয়নি তাকে… ওই বনে শিকারে বেরিয়েছিল এক রাজপুত্র..ঝোপের ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে দেখতে গেল কে কাঁদে? দেখতে পেল অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়েকে..জানতে চাইল, কী হয়েছে তার? কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল মেয়েটি, মা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে..রাজপুত্র অবাক হয়ে দেখল কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির মুখ থেকে গোলাপ, মুক্তো আর হীরে পড়ছে। তারপর রাজপুত্রের অনুরোধে নিজের পুরো কাহিনী খুলে বলল মেয়েটি। ততক্ষণে ওই জায়গাটি গোলাপ, মুক্তো আর হীরেতে ভরে গিয়েছে..মেয়েটির দুঃখের কাহিনী শুনে তাকে নিজের দেশে নিয়ে গেল রাজপুত্র…তাকে বিয়ে করল…রাজপ্রাসাদে বেশ সুখেই দিন কাটাতে লাগল ভালো মেয়েটি… আর বড় মেয়ে? ছোট মেয়েকে তাড়িয়ে দেয়ার পর, ঘরের কাজকর্ম বড় মেয়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত বিধবার..বড় মেয়েও মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করত..একদিন বিরক্ত হয়ে বড় মেয়েকেও তাড়িয়ে দিল বিধবা..তারপর তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি..আশপাশের কেউই তাকে দেখেনি কোথাও..কেউ জানেও না সে কোথায় গেল কিংবা তার কী হল…কাজেই বড় মেয়ের কোনো খবর জানানো ছাড়াই আমাদের গল্পটি শেষ করতে হচ্ছে…!! শার্ল পেঁরোর রূপকথা… রূপান্তর: তুহিন সালাফী
দুই মেয়ের গল্প…
এক ছিল বিধবা…তার ছিল দুই মেয়ে…বড় মেয়েটি ছিল রগচটা আর ঝগড়াটে…পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করে বেড়াত সে…তাই সহজে কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে চাইত না, মিশত না পর্যন্ত…তাকে দেখলেই সবাই মুখ ঘুরিয়ে রাখত… আর ছোট মেয়েটি আচার-আচরণে, কথা-বার্তায় ছিল যেমন নম্র তেমনি ভদ্র… দেখতেও ছিল সে অপূর্ব সুন্দরী। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, ওদের মা কিন্তু বড় মেয়েটিকেই ভালোবাসত…কেন যেন ছোট মেয়েটিকে দেখতে পারত না বিধবা…বড় মেয়েটির ছিল অনেক মজা। সারাদিন কোনো কাজ করতে হয় না তাকে। কেবল খায়-দায় আর ঘুমায়। অথচ ছোট মেয়েটি সারাদিন কাজ করে…রান্না থেকে শুরু করে ঘরের যতো কাজ- সব একাই তাকে সামলাতে হয়…এমনকি প্রতিদিন প্রায় আধা মাইল হেঁটে দূরের ঝরণা থেকে বালতি ভরে পানিও আনতে যেতে হয় তাকে…দুবার করে। একদিন ঝরণা থেকে পানি আনতে গেছে…এমন সময় এক বৃদ্ধা এসে বলল, খুব তেষ্টা পেয়েছে…আমাকে খানিক পানি দেবে মা? দেরি না করেই ছোট মেয়েটি বলল, এক্ষুণি দিচ্ছি…বলেই ঝরণার সবচেয়ে পরিষকার জায়গা থেকে পানি এনে বৃদ্ধার হাতে তুলে দিল..শুধু তাই নয়, সঙ্গে আনা জগটিও পানিতে ভরে উঁচু করে রাখল- যাতে বৃদ্ধাটি সহজেই আরো পানি পান করতে পারে…আসলে ওই বৃদ্ধাটি ছিলেন একজন পরী.. একটি ভালো মেয়ে কতটুকু ভালো হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্যই ওই দরিদ্র গ্রামটিতে তার আসা… পানি পান শেষ করে পরী বললেন…তুমি দেখতে কী সুন্দর! কেবল তাই নয়, বেশ ভদ্র আর নম্রও তুমি… আমি তোমার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি… তোমাকে কিছু উপহার দিতে চাই..অবশ্য তোমার জন্য একটা উপহার আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছি। তুমি যখন কথা বলবে, তখন প্রতিটি শব্দের জন্য তোমার মুখ থেকে একটি করে ফুল অথবা দামি পাথর বেরুবে… এদিকে পানি নিয়ে ঘরে ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। কাজেই মায়ের বকুনি থেকে বাঁচার জন্য এক প্রকার দৌড়ে বাড়ি ফিরল ছোট মেয়েটি। মাকে বলল, আসলে আমার অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে…আমি ক্ষমা চাইছি… মাকে এসব কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে বেরোল তিনটি গোলাপ, তিনটি মুক্তো আর তিনটি হীরে। বিধবা চিৎকার করে বলল, এসব কী হচ্ছে শুনি? তোমার মুখ থেকে হীরে আর মুক্তে বেরোতে দেখলাম মনে হচ্ছে। এর মানে কী আমার নয়নের মণি? কানে কানে বলে রাখি, এর আগে এত মধুর করে কিন্তু কখনো বিধবা তাকে সম্বোধন করেনি..যা যা ঘটেছে তার সবটুকু মাকে খুলে বলল মেয়েটি। বলার সময় তার মুখ থেকে কত যে গোলাপ, মুক্তো আর হীরে বেরিয়েছে, গুণে শেষ করা যাবে না… সব শুনে বিধবা বলল, ঠিক আছে। এবার ওখানে আমি আমার মেয়েকে পাঠাব..বড় মেয়েকেই কেবল নিজের মেয়ে বলে সম্বোধন করে বিধবা.. যাই হোক, বড় মেয়েকে ডাক দিল বিধবা, এখানে একটু এসো তো সোনামণি আমার! দেখে যাও, কথা বলার সময় তোমার বোনের মুখ থেকে কী বেরোচ্ছে..তুমিও কি চাও না তোমার মুখ থেকেও অমন মণিমুক্তো বের হোক? চাইলে শিগগিরই ঝর্ণাটার কাছে যাও..ওখানে এক বৃদ্ধাকে পাবে… সে তোমার কাছে পানি চাইবে… খুব ভালো ব্যবহার করে তাকে পানি দেবে..তারপর দেখবে তোমার মুখ থেকেও ওসব বেরুচ্ছে.. কিন্তু ঝগড়াটে মেয়েটি নাক কুঁচকে বলল, কক্ষণো না…কাউকে পানি খাওয়াতে আমার বয়েই গেছে। তাছাড়া ওখানে এখন যেতে ইচ্ছে করছে না আমার..এবার রেগে গেল বিধবা..চোখ রাঙিয়ে বলল, আমি তোমাকে যেতে বলেছি…এবং এক্ষুণি তুমি সেখানে যাবে… খুব অনিচ্ছার সঙ্গে পানি পান করার সবচেয়ে সুন্দর রুপোর ঘড়াটা নিয়ে রওনা দিল বড় মেয়ে এবং এক সময় পৌঁছে গেল ঝর্ণার ধারে..ওখানেই এক বৃদ্ধাকে বনের দিক থেকে আসতে দেখল সে..আর এসেই পানি চাইল… এই বৃদ্ধাই কিন্তু সেই একই পরী, যে তার ছোট বোনকে উপহার দিয়েছিল…বড় বোন শুনেও এসেছিল পরীর কথা..পরীর বদলে বৃদ্ধাকে দেখে তার মেজাজ তখন চরমে..দাঁত কামড়ে মেজাজি চেহারায় সে তাকাল বৃদ্ধার দিকে.. চোখ রাঙিয়ে বলল, তুমি কি মনে করো তোমাকে পানি পান করানোর জন্যই আমি এখানে এসেছি? তাও আবার এই রুপোর ঘড়া দিয়ে পানি দেব তোমাকে? কোনো দিন নয়..এতই যখন তেষ্টা তখন ওই তো কাছেই ঝর্ণা, মুখ লাগিয়ে যত খুশি পানি পান করো..কে তোমাকে নিষেধ করছে? অমন কথা শুনে পরী খুব আহত হলো..কঠিন গলায় বলল, তুমি মোটেও ভদ্র নও.. ঠিক আছে তোমার অমন আচরণের জন্যও তুমি উপহার পাবে..তুমি যখন কথা বলবে, তখন প্রতিটি শব্দের জন্য তোমার মুখ থেকে একটি করে সাপ অথবা বিচ্ছু বেরোবে.. বাড়ি ফেরার পর বিধবা জানতে চাইল, সব কিছু ঠিক মতো হয়েছে তো মা? পরীকে পেয়েছিলে তো? মায়ের কথায় ক্ষেপে গেল বড় মেয়ে। কর্কশ গলায় বলল, আবার জানতে চাও সব ঠিক আছে কিনা? বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে তিনটা সাপ আর তিনটা বিচ্ছু বেরোল..এটা দেখেই ভয়ে আঁতঙ্কে চিৎকার করে বিধবা বলল, হায় হায়! এ আমি কী দেখছি? তোমার ওই বোনই এসবের জন্য দায়ী..আমি এক্ষুণি ওকে বিদায় করছি..তারপর ছোট মেয়েটাকে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিল বিধবা.. ঘর থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবে ভেবে পেল না মেয়েটি..আশ্রয় নিল বনে..লুকিয়ে রইল ঝোপে..নিজের দুঃখের জন্য কাঁদতে লাগল একা একা.. কিন্তু বেশিক্ষণ কাঁদতে হয়নি তাকে… ওই বনে শিকারে বেরিয়েছিল এক রাজপুত্র..ঝোপের ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে দেখতে গেল কে কাঁদে? দেখতে পেল অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়েকে..জানতে চাইল, কী হয়েছে তার? কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল মেয়েটি, মা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে..রাজপুত্র অবাক হয়ে দেখল কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির মুখ থেকে গোলাপ, মুক্তো আর হীরে পড়ছে। তারপর রাজপুত্রের অনুরোধে নিজের পুরো কাহিনী খুলে বলল মেয়েটি। ততক্ষণে ওই জায়গাটি গোলাপ, মুক্তো আর হীরেতে ভরে গিয়েছে..মেয়েটির দুঃখের কাহিনী শুনে তাকে নিজের দেশে নিয়ে গেল রাজপুত্র…তাকে বিয়ে করল…রাজপ্রাসাদে বেশ সুখেই দিন কাটাতে লাগল ভালো মেয়েটি… আর বড় মেয়ে? ছোট মেয়েকে তাড়িয়ে দেয়ার পর, ঘরের কাজকর্ম বড় মেয়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত বিধবার..বড় মেয়েও মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করত..একদিন বিরক্ত হয়ে বড় মেয়েকেও তাড়িয়ে দিল বিধবা..তারপর তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি..আশপাশের কেউই তাকে দেখেনি কোথাও..কেউ জানেও না সে কোথায় গেল কিংবা তার কী হল…কাজেই বড় মেয়ের কোনো খবর জানানো ছাড়াই আমাদের গল্পটি শেষ করতে হচ্ছে…!! শার্ল পেঁরোর রূপকথা… রূপান্তর: তুহিন সালাফী