হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা – পর্ব ১
হযরত খালেদ ইবনে ওলীদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখন আমার মঙ্গলের এরাদা করিলেন তখন আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করিলেন এবং আমার সম্মুখে হেদায়াতের পথ উন্মুক্ত হইয়া গেল। আমি মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম যে, আমি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছি, কিন্তু যুদ্ধ হইতে ফিরিবার পর প্রতিবারেই মনে হইয়াছে যে, আমার এই দৌড়ধাপ একটি নিরর্থক কাজ। মুহাম্মাদ (সাঃ) অবশ্যই বিজয়লাভ করিবেন। তারপর যখন রাসূল (সাঃ) হুদাইবিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলেন তখন আমিও মুশরিকদের একদল ঘোড় সওয়ারের সহিত রওয়ানা হইলেন। রাসূল (সাঃ) ও তাঁহার সাহাবাদের সহিত উসফান নামক আমার মুখামুখী হইল। আমি তাঁহার মোকাবেলায় দাঁড়াইয়া গেলাম এবং তাঁহাকে কিছু উত্যক্ত করিতে চাহিলাম (কিন্তু পারিলাম না)।
তিনি আপন সাহাবীদেরকে লইয়া আমাদের সম্মুখে যোহরের নামাজ আদায় করিতে লাগিলেন। আমরা ইচ্ছা করিয়াছিলাম যে, নামাজরত অবস্থায় তাহাদের উপর আক্রমণ করি, কিন্তু আমরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাইতে পারি নাই বলিয়া আক্রমণ করিতে পারিলাম না। আর এই না পারার মধ্যেই (আমাদের জন্য) কল্যাণ নিহিত ছিল। নবী কারীম (সাঃ) আমাদের এই দূরভিসন্ধির কথা (ওহীর মাধ্যমে) জানিতে পারিলেন। অতএব তিনি সাহাবীগণ সহ আসরের নামাজ সালাতুল খাওফের পদ্ধতিতে আদায় করিলেন। এই ব্যাপারটি আমাদের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করিল। আমি মনে মনে বলিলাম, এই ব্যক্তিকে (গায়েবীভাবে) হেফাজত করা হইতেছে। অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) আমাদের পথ হইতে এক পার্শ্বে সরিয়া গেলেন এবং আমাদের ঘোড়ার রাস্তা ছাড়িয়া ডান দিকের রাস্তা ধরিয়া অগ্রসর হইলেন।
তারপর তিনি যখন হুদাইবিয়াতে কোরাইশদের সহিত সন্ধি করিলেন এবং কোরাইশগণ তাঁহাকে (বিনা যুদ্ধে) ফিরাইয়া দিয়া নিজেদের প্রাণ বাঁচাইলেন তখন আমি মনে মনে বলিলাম, এখন আর কি বাকি রহিল? আমি কোথায় যাইব? নাজাশীর নিকট কি? সেখানেই বা কি করিয়া যাই! নাজাশী তো স্বয়ং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসারী হইয়া গিয়াছে এবং তাঁহার সাহাবীগণ সেখানে নিরাপদ আশ্রয়ে কালাতিপাত করিতেছে। নাকি হেরাকল এর নিকট চলিয়া যাইব? সেখানে গেলে তো নিজের ধর্ম ছাড়িয়া খৃষ্টান নচেৎ ইহুদী ধর্ম অবলম্বন করিতে হইবে এবং অনারব দেশে জীবন কাটাইতে হইবে। আর না অবশিষ্ট যাহারা আছে তাহাদের সহিত নিজ বাড়ীতেই থাকিয়া যাইব? আমি এইরূপ চিন্তা ভাবনা করিতেছিলাম। ইতিমধ্যে রাসূল (সাঃ) গত বৎসরের ওমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশ করিলেন। আমি গা-ঢাকা দিলাম এবং তাঁহার মক্কায় প্রবেশকালে উপস্থিত থাকিলাম না। আমার ভাই ওলীদ (রাঃ) নবী কারীম (সাঃ)-এর সহিত ওমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশ করিয়া আমাকে তালাশ করিলেন। আমাকে না পাইয়া এই মর্মে একখানা চিঠি আমার নিকট লিখিলেন-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, আম্মাবাদ, এখনই ইসলাম গ্রহণে তোমার মত হইল না, ইহা অপেক্ষা বিস্ময়কর বিষয় আমি আর দেখি নাই। অথচ তুমি একজন বুদ্ধিমান লোক। ইসলামের ন্যায় দ্বীন সম্পর্কেও কি মানুষ অজ্ঞ থাকিতে পারে? রাসূল (সাঃ) আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিতে যাইয়া বলিয়াছেন, খালেদ কোথায়? আমি বলিয়াছি, আল্লাহ তায়ালা তাঁহাকে আনিবেন। তিনি বলিয়াছেন, তাঁহার মত মানুষ ইসলাম সম্পর্কে কি করিয়া অজ্ঞ থাকিতে পারে? সে যদি তাহার সকল প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম মুসলমানদের সহিত সংযুক্ত করিত তবে তাহার জন্য অনেক ভালো হইত এবং আমরা তাহাকে অন্যের উপর প্রাধান্য দিতাম। হে আমার ভাই, এ যাবৎ নেক কাজের যে সকল সুযোগ তুমি হারাইয়াছ, এখন তো অন্তত তাহা পূরণ করিয়া লও।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন