হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৫ম পর্ব
হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাদশাহের আমীর প্রদত্ত টাকা নিয়ে ফিরে গেলেন এবং টাকা পয়সা ও অর্থ কড়ির প্রতি হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) এর বীতশ্রদ্ধ ভাবের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। দিল্লীর সম্রাট এতে মোটেও বিরক্ত ভাব প্রকাশ করলেন না। বরং সহাস্য আনন্দে প্রেরিত রৌপ্য মুদ্রার তোড়া সযত্নে রাখলেন।
খাজা সাহাবের উপদেশাবলীঃ (ক) অহংকার ধ্বংসের মূলঃ এ বিশ্ব জগতে যতগূলো ধ্বংসকারী উপাদান আছে তন্মধ্যে অহংকার ও গর্ব সবচেয়ে ক্ষতিকর। তাঁর কারণ স্বরূপ মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআন অহংকার বর্জনের জন্য বার বার তাকীদ করেছেন। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহ পাক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। হাদীস শরীফে আছে নবী কারীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, অহংকার মানুষকে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করে। কাজেই এ অহংকার ও গর্ব করা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারলে কোন ব্যক্তি আধ্যত্ম সাধনায় যেমন উন্নতি লাভ করা যায় না তেমনি তাঁর পতনও হয় অনিবার্য।
আল্লাহপাকের আজাব এবং গজব অহংকারীর উপর অবশ্যই পতিত হয়ে থাকে। ফেরাউনের কাহিনী নমরুদ ও সাদ্দাদের কাহিনী এবং তাদের সমূলে বিনাশ হওয়ার যে কারণ লক্ষ্য করা যায় তা ছিল অহংকার।
একান্ত ভাবেই মানুষের পক্ষে অহংকার ও অহমিকা নানা ভাবে প্রকাশ পেতে পারে। ধনবল, জনবল, হাহুবল এবং বুদ্ধি চাতুরতার তীক্ষ্ণতা অধিকাংশ সময় মানুষকে অহংকারি করে তোলে। যাহা হউক, অহংকার এর ছোয়া হতে বেঁচে থাকা বড়ই দুঃসাধ্য ব্যাপার। (খ) আল্লাহকে পাওয়া খুবই কঠিন, অথচ আবার একেবারেই সোজাঃ এখন বান্দা শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে দাস বা গোলাম। গোলামের উচিত আল্লাহ পাকের অশেষ বরকত ও রহমতের ধারা বর্ষিত হতে থাকে। ফলে বিনয়ী বান্দাহ তাঁর মহামানব আল্লাহ পাকের রহমতে ও বরকতে লাভে ধন্য হয়। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছিলেন, তোমরা বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন কর। কেননা, বিনয় এবং নম্রতার মাঝে পরিপূর্ণ সফলতা বিদ্যামান। দুনিয়ার জীবনে আমরা যে সকল লক্ষ্য উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য মহস্থ করে থাকি এগুলো যতখানি সহায়তা স্থান করতে পারে, তাঁর চেয়ে সঠিক উপকারি সহায়ক বিনয় শত্রুতা সাধনের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়। সুতরাং ইহ-লৌকিক ও পরলৌকিক যাবতীয় কর্মকাণ্ডে সফলতা অর্জন করতে হলে বিনয় ও নম্রতাঁর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা একান্ত দরকার।
(গ) অনিষ্টের মূল কারণ সমূহ হচ্ছে রিপুর তাড়নায় গর্হিত কাজের ভিত্তমুল রচনায় কাম, ক্রোধ, মোহ, লোভ ও মাৎসর্য্যঃ এ বিশ্ব ভ্রামান্ডের মাঝে মানব দেহের যে সকল ইন্দ্রিয় রয়েছে তন্মধ্যে ছয়টি ইন্দ্রিয় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকি, ইন্দ্রিয়গুলো হচ্ছেঃ (১) চোখের দৃষ্টি শক্তি (২) কানে শ্রবণ শক্তি (৩) নাকের ঘ্রাণ শক্তি (৪) জিহবার আস্বাদন শক্তি (৫) ত্বকের স্পর্শ শক্তি ও (৬) দেহের জৈবিক শক্তি তাড়না শক্তি। উপরোক্ত ছয়টি শক্তি হতে যে সকল কুরিপ মানুষের মাঝে আত্মা প্রকাশ করে তা হলো কাম, ক্রোধ, লোভ , মোহ মৎসয্য। এ রিপুগুলো যখন কোনও মানুষের মাঝে শাখা প্রশাখা ও পত্রপল্লবে পরিব্যক্ত হয়ে উঠে, তখন তাঁর স্বাভাবিক মানবীয় গুনাবলী লোপ পায় এবং সে ক্রমে ক্রমে পশু স্বভাব ধারণ করে। তজ্জন্য মানুষ রূপে জন্মগহণ করেও সে আর মানবীয় সত্তারূপে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে পারে না। এ জন্য কাম ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ এবং মাৎসর্য্যকে কঠোর সাধনার মাধ্যমে অবদমিত করে তুলতে পারে। তা না হলে সমূহ ক্ষতির সম্ভবনা দেখা দেয়া মোটেই বিচিত্র নয়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন