হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ১ম পর্ব
জন্ম ও পরিচয়ঃ মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) হিজরী ৬৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং হিজরী ৭২৫ সালে এই পৃথিবী হতে চির বিদায় গ্রহণ করেছিলেন। ঈসানী সালের হিসাব মতে তাঁর জন্ম হয়েছিল ১২১৫ খ্রীস্টাব্দে এবং তিনি মৃত্যবরণ করেছিলেন ১৩০৪ খ্রীস্টাব্দে। হিসাবে দেখা যায় যে, তিনি ৮৯ বছর এই জগতের ধুলায় অবস্থান করেছিলেন। এই ৮৯ বছরে তিনি রূহানী জগতের যে নবতর প্রাণ বন্যার জোয়ার এনেছিলেন এবং ধর্মসম্মত কার্যাবলী ও ঈমানের হেফাজতের লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন, তা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয় বরং দুনিয়ার সর্বত্র নতুন অনুরাগের পথ রচনা করতে পেরেছিলেন।
খোদা প্রেমিক ও আশেকানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি তিনি এতই অনুরক্ত হয়েছিলেন যে, তিনি দিবারাত্রি আল্লাহ রাসূলের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন এমন কি দ্বীন ও ইসলামের ব্যাপারেও জীবন উৎসর্গীকৃত করতে বিন্দুমাত্র অবহেলা করতেন না।
হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) যে একজন নির্বাচিত জীবন সন্ধানীই ছিলেন তা নয়, তিনি এবাদতে বন্দেগীর দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্যও লাভ করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি জনসেবা ও ঐশী প্রেমের ক্ষেত্রে তৎকালীন জগতে তিনি ছিলেন এক বিশিষ্ট মর্যাদার অধিকারী। জাতি ধর্ম- গোত্র নির্বিশেষে অগণিত মানুষের অহরহ ব্যাপৃত থাকতেন। সুতরাং ভারতীয়বাসীদের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে।
শিক্ষা গ্রহণঃ জনক জননী ও আত্মীয় স্বজনদের আদর স্নেহে প্রতিপালিত হতে লাগলেন তিনি, ছেলে বেলায় কিশোর নিজামউদ্দিন অন্য ছেলে পিলেদের চেয়ে একটু অন্য ধরণের বলে মনে হতে লাগল। শৈশব থেকে তাঁর মন মানসিকতা থেকে পিতামাতা বুঝতে পেরেছিলেন এই ছেলে একদিন জগতের পুজনীয় ব্যক্তিরূপে পরিনীত হবে। তিনি ছোট বেলা থেকেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর পিতা হযরত সাইয়্যেদ আহমদ (রঃ) দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে যখন চির বিদায় নিলেন।
তখন নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) এর বয়স মাত্র ৫ বছর বয়স। তিনি পিতৃহারা বালক রূপে জীবন যাপন করিতে লাগলেন। মাতা জোলায়খা বিবি একটা সমস্যার মধ্যে পড়ে গেলেন। ঘর সংসারের কাজকর্ম সমাধা প্রিয়পুত্রের লেখাপড়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। যেভাবে হউক তিনি পুত্রের এলমে দ্বীন শিক্ষা দিবেনই। তিনি ছেলেকে প্রাথমিক মক্তবে ভর্তি করে দিলেন। সর্ব প্রথমে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করলেন এবং নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) উমুলীর নিকট ফিকাহ শাস্ত্রের প্রাথমিক কিতাবসমূহ অধ্যায়ন করেন। একই সাথে মক্তবের অনু্যায়ী আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়সমূহের জ্ঞানও অর্জন করেন।
মক্তবের লেখাপড়া সমাপ্তি করার পর মায়ের আদেশেনুসারে তাঁকে পাঠানো হল প্রখ্যাত কামিল ও শিক্ষাবিদ হযরত মাওলানা শামসুদ্দিন দামাগানী (রঃ) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করার জন্য।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন