হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৪

হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

ছিন্ন-বস্ত্র এই মানুষটির অন্তর্জ্যোতি উপলব্ধি করে হযরত ওমর (রাঃ) অভিভূতঃ ও ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়লেন। সামান্য একটি লোক-অথচ কী অসামান্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি। সাধারণ একটি মানুষ-অথচ অসাধারণ। এর তুলনায় তুচ্ছ তাঁর খিলাফত, তাঁর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য। বিতৃষ্ণায় মন ভরে উঠল তাঁর। বললেন, এমন কি কেউ আছ যে, একখানি রুটির বিনিময়ে খেলাফতের দায়িত্ব নিতে পার?

তাঁর এই স্বগতোক্তি শুনে ওয়ায়েস (র:) বললেন, যে বোকা, শুধু সে-ই তা নেবে। শুনুন, সত্যিই যদি মন না চায়, তাহলে ওটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেই তো হয়। যার মন চায় সে কুড়িয়ে নেবে। ওসব বিনিময়ের কথা কি বলছেন?

এই কথা বলে তিনি এবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রদত্ত পোশাক পরম ভক্তিভরে পরলেন। তারপর বললেন, আল্লাহ এ অধমের প্রার্থনায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাবী ও মোজার কবিলার ছাগ লোমের তুল্য নবীজীর উম্মতকে মার্জনা করবেন।

হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এই মহাতাপসের আত্নিক শক্তির পরিচয় পেয়ে তাঁরা বিষ্ময়-বিহবল হলেন উভয়ে নির্বাক।

কিছুক্ষণ পরে ওমর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি আপনার এমন গভীর ভালোবাসা, অথচ আপনি একবার গিয়ে তাঁকে দর্শন করেননি কেন?

ওয়ায়েস (রঃ) এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললেন, আচ্ছা, আপনারা তো তাঁকে দেখেছেন, তাই না?

হ্যাঁ। দেখেছিই তো।

মনে হয় আপনারা কেবল তাঁর জোব্বাই দেখেছেন। তাঁকে ঠিক দেখননি। বলুন তো, তাঁর পবিত্র ভুরু দুটি জোড়া ছিল, না আলাদা?

প্রশ্ন শুনে তাঁরা অপ্রস্তুত। আশ্চর্যের কথা, দু’জনের কেউই ওয়ায়েস (রঃ)-এর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি আরও একটি প্রশ্ন করলেন। আচ্ছা, মনে হয় প্রিয় নবীর ওপর আপনাদের গভীর ভালোবাসা ছিল, তাই না? নিশ্চয়ই। আর সে ভালোবাসা এখনও অটুট। তাই যদি হয়, ওয়ায়েস (র:) বললেন, তাহলে আপনাদের দুজনের মুখে এখনও দাঁতগুলো রয়েছে কিভাবে?

ওহোদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহর দাঁতগুলি ভেঙে গেল, অথচ সমব্যথী হয়ে আপনাদের দাঁতগুলি ভেঙে ফেলতে পারলেন না। অথচ এখনও দাবী করেন, তাঁর প্রতি আপনাদের ভালোবাসা এখনও অটুট। আর শুনুন। আমি তাঁকে চোখে কোন দিন দেখিনি। ওহোদের যুদ্ধে তাঁর কোন দাঁতটি ভেঙে পড়ে, তাও দেখিনি।

কিন্তু যখন শুনলাম যুদ্ধে নবীজীর দাঁত ভেঙে গেছে, তখন ভাবলাম তাঁর মুখে তো এখন দাঁত নেই, তাহলে আমি আমার দাঁত রাখি কোন মুখে? মনে হওয়া মাত্র একটি দাঁত উপড়ে দিলাম। পরক্ষণে মনে হল, তাঁর ঠিক কোন দাঁতটি ভেঙে গেছে তা তো আমি জানি না। হয়তো সে দাঁতটি এখনও রয়েছে আমার মুখে। এই সংশয় দূর করার জন্য আমি তাই সব দাঁতই তুলে ফেলেছি।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।