তিনি যখন দেখিলেন যে, হযরত ওমর (রাঃ) তাহার গর্দানে পেঁচানো তরবারীর রশিসহ ধরিয়া রাখিয়াছেন তখন বলিলেন, হে ওমর, তাহাকে ছাড়িয়া দাও। ওমায়েরকে বলিলেন, হে ওমায়ের কাছে আস। তিনি নিকটে আসিলেন এবং বলিলেন, আনইম সাবাহান (অর্থাৎ সুপ্রভাত)! ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াতের লোকেরা পরস্পর এইভাবে অভিনন্দন করিত। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, হে ওমায়ের! আল্লাহ তায়ালা আমাদিগকে তোমার অভিবাদন অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন দান করিয়াছেন। আর তাহা হইল আসসালাম, যাহা বেহেশতীদের অভিবাদন হইবে। ওমায়ের বলিলেন, খোদার কসম, হে মুহাম্মাদ, আমার জন্য ইহা সম্পূর্ণ নতুন ব্যাপার।
অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) বলিলেন, হে ওমায়ের! কেন আসিয়াছ? ওমায়ের বলিলেন, আপনাদের হাতে আমার এই বন্দীর উদ্দেশ্যে আসিয়াছি। তাহার প্রতি দয়া করুন। নবী কারীম (সাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার গলায় এই তরবারী কেন ঝুলাইয়া আনিয়াছ? ওমায়ের বলিলেন, আল্লাহ এই সকল তরবারীকে বিনাশ করুন, এই তরবারী কোন কাজে আসিয়াছে কি? নবী কারীম (সাঃ) বলিলেন, সত্য কথা বল, কেন আসিয়াছ? ওমায়ের বলিলেন, একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই আসিয়াছি। নবী কারীম (সাঃ) বলিলেন, না, বরং তুমি ও সফওয়ান হাতীমে বসিয়া বদরের কালিব কূপে নিক্ষিপ্ত নিহত কোরাইশদের সম্পর্কে আলোচনা করিতেছিলে।
এক পর্যায়ে তুমি বলিয়াছেলে যে, যদি আমার কিছু ঋণ ও আমার সন্তানদের চিন্তা না হইত তবে আমি যাইয়া মুহাম্মাদকে কতল করিয়া আসিতাম। (তোমার এই ইচ্ছার কথা শুনিয়া) সফওয়ান ইবনে উমাইয়া তোমার ঋণ ও তোমার সন্তানদের দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে, যাহাতে তুমি আমাকে তাহার পক্ষ হইয়া কতল করিতে পার। আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার এই উদ্দেশ্যের মাঝে অন্তরায় হইয়া আছেন। ইহা শুনিয়া ওমায়ের বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল।
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আসমানের যে খবর আমাদের নিকট প্রকাশ করিতেন এবং আপনার নিকট যে ওহী নাযিল হইতে আমরা তাহা অস্বীকার করিতাম। কিন্তু ইহা তো এমন একটি ঘটনা যেখানে আমি ও সফওয়ান ব্যতিত অন্য কেহ উপস্থিত ছিল না। খোদার কসম, আমার একান্ত বিশ্বাস যে, একমাত্র আল্লাহই আপনাকে এই খবর জানাইয়াছেন। সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমাকে ইসলামের প্রতি হেদায়াত দান করিয়াছেন এবং আমাকে এইপথে পরিচালিত করিয়াছেন। অতঃপর তিনি কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করিলেন। রাসূল (সাঃ) সাহাবাদেরকে বলিলেন, তোমাদের ভাই ওমায়ের কে দ্বীনের কথা ও কোরআন শিক্ষা দাও এবং তাহার বন্দীকে ছাড়িয়া দাও। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) নবী কারীম (সাঃ) আদেশ পালন করিলেন।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা