হযরত ওমর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের হিজরত – শেষ পর্ব
কিন্তু তিনি আমার কথা শুনিলেন না এবং তাহাদের সহিত যাওয়ার উপর অটল হইয়া রহিলেন। তিনি যখন তাহাদের সহিত যাওয়ার পাকা সিদ্ধান্ত করিলেন তখন আমি তাহাকে বলিলাম যাহা করিবার করিয়াছ। তাহাদের সহিত যখন যাওয়ারই সিদ্ধান্ত করিয়াছ, আমার এই উটনী লইয়া যাও। ইহা নিতান্ত উন্নত বংশজাত ও অত্যন্ত অনুগত। তুমি ইহার উপর হইতে অবতরণ করিও না। যদি ইহাদের ব্যপারে তোমার মনে কোন সন্দেহ জাগে তবে এই উটনীতে বসিয়া পালাইয়া আসিও। অতএব হযরত আইয়াশ উটনীতে সওয়াব হইয়া তাহাদের দুইজনের সহিত রওয়ানা হইলেন। পথে এক জায়গায় আবু জেহেল হযরত আইয়াশকে বলিল, ভাই, খোদার কসম, আমার এই উট অত্যন্ত ধীরগতি হইয়া পড়িয়াছে।
তুমি কি আমাকে তোমার উটের পিছনে বসাইয়া লইবে? হযরত আইয়াশ বলিলেন, হাঁ অবশ্যই। অতঃপর তিনি নিজের উট বসাইলেন। তাঁহার উটে উঠিবার জন্য আবু জেহেল ও হারেসও তাহদের উট বসাইল। হযরত আইয়াশ উট হইতে নামিতেই তাঁহার উপর ঝাঁপাইয়া পড়িল এবং রশি দ্বারা তাহাকে মজবুত করিয়া বাঁধিয়া ফেলিল। তারপর মক্কা লইয়া গিয়া তাহাকে ইসলাম হইতে ফিরাইবার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাইল। তিনি শেষ পর্যন্ত ইসলাম হইতে ফিরিয়া গেলেন।
আমরা পরস্পর আলোচনা করিতাম যে, যাহারা ইসলাম গ্রহণের পর পুনরায় কুফুরিতে ফিরিয়া যাইবে আল্লাহ্ তায়ালা তাহাদের তওবা কবুল করিবেন না। যাহারা ইসলাম পরিত্যাগ করিত তাহারাও এরূপ ধারণা পোষণ করিত। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করিবার পর আল্লাহ্ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করিলেন—
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (53)
وَأَنِيبُوا إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ (54)
وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ (55)
অর্থঃ বলিয়া দিন, হে আমার বান্দাগণ, যাহারা নিজেদের উপর জুলুম করিয়াছ তোমরা আল্লাহ্র রহমত হইতে নিরাশ হইও না, নিশ্চয় আল্লাহ্ সকল গুনাহ ক্ষমা করিয়া দিবেন, তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের নিকট আযাব আসিবার পূর্বে, অতঃপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে না। তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর, তোমাদের নিকট অতর্কিতে ও অজ্ঞাতসারে আযাব আসিবার পূর্বে।
হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, আমি এই আয়াত লিখিয়া হযরত হিশাম ইবনে আসেব নিকট পাঠাইয়া দিলাম। হযরত হিশাম বলেন, আমার নিকট যখন এই আয়াতসমূহ পৌছিল তখন আমি যিতুআ নামক স্থানে যাইয়া উহা পড়িতে লাগিলাম এবং (উহার অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝিবার জন্য) উপর হইতে নীচ পর্যন্ত দেখিতে লাগিলাম। কিন্তু আমি উহার উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিলাম না। অবশেষে আমি দোয়া করিলাম, আয় আল্লাহ্, আমাকে উহার অর্থ বুঝাইয়া দিন। অতঃপর আল্লাহ্ তায়ালা আমার অন্তরে ঢালিলেন যে, এই আয়াত আমাদের সম্পর্কেই নাযিল হইয়াছে। (অর্থাৎ আমরা নিজেদের সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করিতাম এবং আমাদের সম্পর্কে লোকেরা যাহা বলাবলি করিত যে, যাহারা ইসলাম পরিত্যাগ করিয়া কাফের হইয়া গিয়াছে, তাহাদের তওবা আল্লাহ্ তায়ালা কবুল করিবেন না। আল্লাহ্ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করিয়া এই কথাই বুঝাইয়াছেন যে, তওবা কবুল হইবে।) অতএব আমি আমার উটের নিকট আসিয়া উহাতে আরোহণ করিলাম এবং মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আসিয়া হাজির হইলাম। (বিদায়াহ)
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
হযরত ওমর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের হিজরত – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন