হযরত ওমর এর ইসলাম গ্রহন

কুরাইশ সরদারদের মধ্যে হযরত ওমর (রাঃ) ও আবু জাহেল ইসলামের ঘোরতর শত্রু  ছিলেন। এ জন্য হযরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু’জনের জন্য নিম্নবর্ণিত ভাষায় দোয়া করেনঃ হে আল্লাহ্‌! আবু জাহেল অথবা ওমর ইবনে খাত্তাব এ দু’জনের একজন কে ইসলামে প্রবেশ করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ্‌ তায়ালা হযরত ওমর (রাঃ) কেই এ সৌভাগ্যের অধিকারী করার ফয়সালা করেন। 

তাই আবু জাহলের সে সৌভাগ্য  হয়নি। এ দোয়ার বরকতে কিছুদিন পরই ইসলামের ঘোরতর দুশমন ইসলামের জন্য জীবন দান করতেও প্রস্তুত  হয়ে যান। অর্থাৎ হযরত ওমর (রাঃ) ঈমানের ঐশ্বর্যশালী হয়ে যান। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাঁর প্রতিই অনুগ্রহ করেন। জীবনী গ্রন্থগুলোতে হযরত ওমর (রাঃ) এর ইসালামের গ্রহণের কাহিনী সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। 

সাধারণভাবে জীবনী লেখকগণ হযরত ওমর (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে যে কাহিনী বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে, তিনি চরম কঠোরতা অবলম্বন করেও কোন মুসলমানকেই দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। অবশেষে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিজের হাতে হত্যা করার (নাউজুবিল্লাহ) সিদ্ধান্ত নেন। কোমরে  তরবারি ঝুলিয়ে সোজা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ঘটনাচক্রে নাইম বিন আব্দুল্লাহর সাথে পথে দেখা হয়। 

তাঁর ভাব-ভঙ্গিমা দেখে তিনি জিজ্ঞেস করেন, কি ব্যাপার? হযরত ওমর (রাঃ) জবাবে বলেন, মুহাম্মদ সম্পর্কে একটা চূড়ান্ত মীমাংসা করতে যাচ্ছি। তিনি বললেন, আগে নিজের ঘর ঠিক কর। তোমার বোন ভগ্নিপতি উভয়ে মুসলমান হয়ে গেছে। হযরত ওমর (রাঃ) একথা শোনামাত্রই বোনের বাড়িতে পৌঁছে যান। তাঁরা তখন পবিত্র কুরআন পাঠ করছিলেন। ওমরের পায়ের শব্দ শোনামাত্রই তাঁরা নীরব হয়ে যান এবং কুরআন শরীফের হস্তলিখিত অংশগুলো লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ) কুরআন পাঠের শব্দ আগেই শুনতে পেয়েছিলেন। 

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি পড়ছিলে?

তাঁরা বললেন, কই কিছুই না! তিনি বললেন, আমি সবকিছু শুনতে পেয়েছি। তোমরা দু’জনে ধর্ম ত্যাগ করেছ। এ কথা বলেই ভগ্নিপতিকে মার শুরু করেন। বোন স্বামীর সাহায্যে এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করতে দ্বিধা করলেন না।  বোনের শরীরে কয়েক জায়গায় যখম হয়ে রক্তপাত শুরু হয়ে যায় কিন্তু ইসলামের প্রতি মহব্বতের দরুন একাই সহ্য করেন এবং বললেন, ওমর তোমার যা ইচ্ছা করে যাও। কিন্তু আমাদের অন্তর থেকে ইসলামের বাণী মুছে ফেলা যাবে না। 

এ কথা হযরত ওমর (রাঃ) এর অন্তরে তীরের মত বিধে গেল।  তিনি মহব্বতের দৃষ্ঠিতে বোনের দিকে তাকালেন।   তাঁর শরীর থেকে তখনও রক্ত বের হচ্ছিল।  মনে মনে অনুতপ্ত হয়ে তিনি বললেন, তোমরা কি পড়ছিলে, তা আমাকে দেখাও।

ভগ্নি ফাতিমা (রাঃ) কুরআনের লিখিত অংশগুলো সামনে রেখে দিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) কাগজের টুকরার প্রতি তাকিয়ে কুরআনের এ আয়াতগুলো লেখা দেখতে পেলেন।  আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তাঁরা সবাই আল্লাহ্‌ তায়ালার তহবীহ পাঠ করছে। তিনি পরাক্রান্ত ও মহাকৌশলী। এ আয়াতগুলোর প্রতিটি শব্দই তাঁর অন্তরে বসে যাচ্ছিল। তিনি যখন নিচের আয়াত পড়লেন, তখন তাঁর কন্ঠে থেকে বের হয়ে এলঃ এ সময় হযরত সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা পাহাড়ের পেছনে হযরত ইরকাম (রাঃ) এর গৃহে আশ্রিত ছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) সেখানে পৌঁছে দরজায় করাঘাত করেন। তাঁর হাতে তরবারি দেখে সাহাবায়ে কিরাম দরজা খুলে দিতে ইতস্তত করলেন, হযরত হামজা (রাঃ) বললেন, তাঁকে আসতে দাও। যদি সদুদ্দেশ্যে এসে থাকে তাহলে তো ভালই।  অন্যথায় এ তরবারি দিয়েই তাঁর মস্তক দুখণ্ড করে দেব।  

হযরত ওমর (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই মুহাম্মদ (সাঃ) এর সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাঁর জামার কোন ধরে টেনে জিজ্ঞেস করলেন, ওমর কি উদ্দেশ্য এসেছ? নবুয়তের তেজস্বিতাঁর প্রভাবে হযরত ওমর (রাঃ) কেঁপে উঠলেন এবং নম্রস্বরে বললেন, ঈমান আনার উদ্দেশ্যে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম আল্লাহ্‌ আকবর ধ্বনিতে মক্কার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তোলেন। 

দার-কুতনী, আবুল ঈলা, হাকিম ও বায়হাকী সামান্য পরিবর্তিত আকারে এ ঘটনাই হযরত আনাস (রাঃ) এর হাওলায় বর্ণনা করেছেন, পার্থক্য শুধু এটুকু যে, প্রথমোক্ত বিবরণে হাদীসে উল্লেখিত আয়াতগুলো শামিল করা হয়েছে এবং শেষোক্ত বিররণগুলোতে সূরায়ে তোয়াহার প্রথম দিকের আয়তগুলোর উল্লেখ রয়েছে। এ বিবরণ অনুসারে হযরত ওমর (রাঃ) নিচের আয়াতটি পড়েই লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, বলে চিৎকার করে উঠেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। এবং আল্লাহ স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। 

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।