হযরত ওমর ইবনে আঃ আজীজ (রহঃ)
হযরত ইবনে সায়েব (রহঃ) বলেন, হযরত ওমর ইবনে আজীজ (রহঃ) এর স্ত্রী হযরত বিনতে আবদুল মালেকের নিকট একটি মূল্যবান হীরা ছিল। হযরত ফাতেমার পিতা তাকে ওটা প্রদান করেছিলেন। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ একদিন নিজ স্ত্রীকে বললেন, তোমাকে দু’পথের এক পথ অবলম্বন করতে হবে। হয় তুমি ঐ হীরা বাইতুল মালে জমা দিতে হবে, অন্যথায় তোমার কাছ থেকে আমাকে পৃথক হবার অনুমতি দেবে। কেননা ঐ হীরার সাথে তুমি এবং আমি একই ঘরে অবস্থান করব এটা আমার নিকট ভাল লাগছে না। হযরত ফাতেমা সাথে সাথে ঐ হীরা মুসলমানদের বাইতুল মালে জমা করে দিলেন।
খলীফার ইন্তেকালের পর ইয়াজিদ মসনদে এক একদিন সে হযরত ফাতেমা বিনতে আবদুল মালেককে বলল, আপনি যদি ঐ হীরা ফেরত নিতে চান, তবে তা আপনাকে ফেরত দেয়া হবে। তিনি সাথে সাথে ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন, আল্লাহর শপথ তার জীবদ্দশাতেই যখন ঐ অলঙ্কারের উপর আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। সুতরাং তার ইন্তেকালের পর আমি কিছুতেই তা গ্রহণ করব না। হযরত অমর ইবনে আবদুল আজীজ কে কোন এলাকার গর্ভনর লিখিতভাবে জানাল যে, বিভিন্ন কারণে আমাদের শহর বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমীরুল মুমিনন যেন আমাদের শহর পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল হতে কিছু অর্থ বরাদ্দ করেন। আমীরুল মুমিনিন লিখে পাঠালেন, আমার এই পত্র পাওয়ার সাথে সাথে তুমি ইনসাফ ও ন্যায় বিচার দ্বারা শহরকে মজবুত করবে আর শহরের পথ ঘাটকে জুলুম মুক্ত করবে- এটাই শহরের শ্রেষ্ঠ পুনর্বাসন।
হযরত ইব্রাহীম ছাকুনী (রহঃ) বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রহঃ) বলেছেন, যখন হতে আমার এ জ্ঞান হল যে, মিথ্যা বলা একটি জঘন্যতম অপরাধ, তখন থেকেই আমি মিথ্যা বলা ত্যাগ করেছি। হযরত হাছান কাচ্ছাব (রহঃ) বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রহঃ) এর শাসনামলে একবার এক মাঠে বাঘ ও বকরীকে এক সাথে বিচরণ করতে দেখে আমি অবাক হয়ে বলে উঠলাম, সুবহানাল্লাহ! বাঘ ও বকরী এক সাথে নিরাপদে বিচরণ করছে। আমার মন্তব্য শুনে এক রাখাল বলল, মানুষের মাথা যখন ভাল থাকে তখন তার দেহ যাবতীয় বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ থাকে। অর্থাৎ দেশে যখন ন্যায় পরায়ন বাদশাহ থাকেন তখন তার প্রজাকুল একে অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় না সবাই নিরাপদে থাকে।
প্রখ্যাত বুজুর্গ মালেক বিন দিনার (রহঃ) বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রহঃ) এর শাসনামলে এক রাখাল মন্তব্য করল, বর্তমানে দেশে কোন ন্যায় পরায়ন খলীফা নিযুক্ত হয়েছেন। এর ফলেই আমাদের ছাগলপালের উপর বাঘ আক্রমণ করছে না।
মুছা ইবনে আমীন (রহঃ) বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রহঃ)এর শাসনামলে আমরা কিরামান এলাকায় ছাগল চরাতাম। বাঘ ও এদের সাথে বিচরণ করত কিন্তু কোন আক্রমণ করত না। একরাতে আমরা দেখতে পেলাম, নেকড়ে বাঘ আমাদের ছাগলপালের উপর আক্রমণ করেছে। ঐ সময় আমাদের ধারণা হল যে, হয়তো আমাদের ন্যায় পরায়ণ খলীফার (রহঃ) ইন্তেকাল হয়েছে। পরে সংবাদ পেলাম ঐ রাতেই আমীরুল মুমিনিন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রহঃ) মারা গেছেন।