হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে গমন-পর্ব ৩
হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে গমন-পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ঈসা (আঃ) তখনই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফাতেহা পাঠ করলেন। অতঃপর তিনি সিরিয়া যাত্রার পরিকল্পনা ত্যাগ করে বাইতুল মোকাদ্দাসে ফেরে আসলেন। সেখানে মানুষের নিকট দ্বীনের দাওয়াত দিতে আরম্ব করেন। এভাবে বেশ কিছু দিন অতিক্রম হওয়ার পরে তাঁর প্রতি অহী নাযিল। তাঁর নিকট আল্লাহ তায়ালা ইঞ্জিল কিতাব প্রেরণ করলেন। একদিন এক জনসমাবেশে তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী বিধান অনুসারে আমার নিকট নতুন কিতাব ও শরীয়ত নাজিল করেছেন। অতএব তোমরা এখন থেকে পুরাতন কিতাবের হুকুম বর্জন করে নতুন কিতাব অনুসারে জীবনযাপনের অঙ্গীকার গ্রহন কর।
হযরত ঈসার মুখে এ কথা শুনা মাত্র ইহুদী ও বনি ইস্রাইলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তারা বলল, এ যাবত তোমাকে আমরা ভাল লোক হিসেবে মান্য করতাম। এখন তুমি সে সুযোগে আমাদের পূর্ব পুরুষের ধর্ম নষ্ট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছ। নিজে শরীয়ত তৈরী করে আমাদের উপর চাপিয়ে দিবার চেষ্টায় মেতে উঠেছ। তোমার এ অপরাধ আমরা ক্ষমা করব না। তুমি এ ষড়যন্ত্র পরিত্যাগ কর। না হয় আমরা তোমাকে হত্যা করব। নবী তাদের জবাবে বললেন, তোমরা আমাকে হত্যার ভয় দেখাচ্ছ, সেটা আমার নিকট অতি তুচ্ছ ব্যাপার। আমি আল্লাহর নবী। সে হিসেবে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুসারে জাতিকে দ্বীনের দাওয়াত প্রদান করাই আমার দ্বায়িত্ব। অতএব আমি তোমাদেরকে এ পথ গ্রহণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় আল্লহর গজব জমিনে নেমে আসবে। যেমন গজব এসেছে পূর্বকার নবীদের জমানায়।
বনি ইস্রাইলের মধ্যকার মুসলমানেরা নবীর দাওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে দু’ভাগ হয়ে গেল। কতক পূর্ববর্তী নবীর প্রচারিত ধর্মকে আকড়িয়ে ধরল। আর কতক হযরত ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত গ্রহণ করতে সম্মত হল। হযরত ঈসা (আঃ) এর অনুসারীরা বনি ইস্রাইলদেরকে বলল, তোমরা হযরত জাকারিয়া ও হযরত ইয়াহহিয়া (আঃ) কে হত্যা করেছ আবার এখন হযরত ঈসা (আঃ) কে হত্যা করতে চেষ্টা করছ। এটা জাতির জন্য এক বিপজ্জনক তৎপরতা। তোমরা এ ধরনের পরিকল্পনা থেকে বিরত থাক। হযরত ঈসা (আঃ) অবশ্যই আল্লাহর একজন খাস নবী। তিনি যে সব মোজেযা তোমাদেরকে প্রদর্শন করেছেন তন্মধ্যে মৃত্যুকে জীবিত করা, চির অন্ধকে আরোগ্য করা ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করা ইত্যাদি প্রমাণই তাঁর নবী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
অতএব তোমরা ঘৃনিত পরিকল্পনা ত্যাগ করে তাঁর প্রতি ঈমান আন। তাঁর শরীয়তকে গ্রহণ কর। বনি ইস্রাইলেরা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা শুনে তাদেরকে শাসন করতে দ্বিধা করল না। উপরন্তু নবীকে হত্যা করার পরিকল্পনা আরো জোরদার করল।
নবীর নতুন শরীয়তের কথা প্রচার হওয়ার সাথে সাথে বনি ইস্রাইলদের মধ্যে বিভিন্ন রকম আলোচনা, সমালোচনা আরম্ভ হল। কতক লোক বিরোধীতায় মেতে উঠল।
আবার কতক লোক হযরত ঈসা (আঃ) এর নিকট কালেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করল।
হযরত ঈসা (আঃ) আর একদিন এক জনসভায় বললেন, আল্লাহ তায়ালা হযরত মুছাকে শনিবার দিন এবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। আর আমাকে দিয়েছেন রবিবার দিন। অতএব রবিবার দিন কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য করা হারাম। ঐ দিন আল্লাহর এবাদত করে তার প্রেরিত কিতাব তেলাওয়াত করে এবং মানুষকে সৎ কাজের উৎসাহ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।