হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ১

প্রচণ্ড শীত। চারপাশে জমে উঠেছে বরফের পাহাড়। এক তরুণ প্রেমিক দাঁড়িয়ে আছেন ঘরের এক দেওয়ালের পাশে। এক সুন্দরী যুবতীকে একনজরে দেখবেন তিনি। তাঁর রূপের ফাঁদে তিনি আটকা পড়েছেন। দাঁড়িয়ে আছেন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত। ঠাণ্ডায়, বরফে তাঁর শরীর জমে গিয়েছে। তিনি অবশ। হুঁশও নেই। ফজরের আযান শুনে তাঁর মনে হল, বুঝি এশার আযান হচ্ছে।

ক্রমশঃ রাতের আঁধার সরে যায়। পূবালী সূর্যের আলো এসে পড়ল তাঁর চোখে-মুখে। এ আলো যেন পৌঁছে যায় তাঁর চেতনার ভেতরে। চমকে ওঠেন তিনি। এক যুবতীর আশায় তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন বরফের রাজত্বে, অতিবাহিত হয়েছে একটি সুদীর্ঘ শীতার্থ রাত!

আত্মধিক্কারে তিনি ক্লিষ্ট হলেন। ছিঃ ছিঃ! প্রবৃত্তির তাড়নায় একটি পুন্যময় রজনী এইভাবে কেটে গেল? এর বদলে যদি এবাদতে নিমগ্ন হতাম।

তীব্র অনুশোচনায় তরুণ যেন নতুন হয়ে গেছেন। তাঁর নারীপ্রেম রূপান্তরিত হল আল্লাহ প্রেমে। গভীর সাধনায় তিনি মগ্ন হলেন। আর আল্লাহর অশেষ করুণায় তিনি সিদ্ধিলাভও করলেন।

এই রূপান্তরিত আলোকিত মানুষটি হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ)। সাধনাবলে তিনি জাহেরী ও বাতেনী, শরীয়ত ও তরীকতের গভীর প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানলাভ করেন। বহু অমূল্য দ্বীনী গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি। তাঁর সাধনা মাহাত্ম্য সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেছেন হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ) প্রমুখ বিদগ্ধজন। তাঁর জীবনেও প্রচুর অলৌকিক ঘটনার সমাবেশ ঘটেছে। এই গ্রন্থ রচয়িতা শেখ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রঃ) বলেন, হযরত ফোজায়েল (রঃ)-এর ন্যায় জ্ঞানী ব্যক্তি যখন তাঁর গুণকীর্তন করেছেন, তখন আমার দ্বারা তাঁর আর কতটুকু প্রশংসা করা সম্ভব?

যাই হোক, সাধনাইয় তিনি যে সিদ্ধিলাভ করেন, তা একটি ঘটনায় প্রমাণিত হয়ে যায়।

একদিন তাঁকে খুঁজতে গিয়ে তাঁর মা দেখেন, তিনি একটি গোলাপ গাছের তলায় ঘুমাচ্ছেন। আর একটি সাপ নার্গিস গাছের ডাল দিয়ে মশা, মাছি তাড়াচ্ছে।

হযরত আবদুল্লাহ (রঃ)-এর জন্ম বাগদাদের কাছাকাছি মেরু নামক স্থানে। বাগদাদে বেশ কিছুদিন জ্ঞানী-গুণীর সান্নিধ্যে থেকে তিনি মক্কায় যান। মক্কা থেকে ফিরে আসেন মেরুতে। এখানে তখন ধর্মবেত্তাদের দুটি দল ছিল। তাঁদের সঙ্গে আবদুল্লাহ (রঃ)-এর সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাঁরা তাঁকে ভালোবাসতেন। কোন মত-দ্বন্দ্ব ঘটলে তিনি তার মীমাংসাও করে দিতেন। পরে তিনি আবার মক্কায় যান ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর জীবন-পঞ্জী বড় বিচিত্র। তিনি এক বছর হজ্জ আদায় করতেন, পরের বছর যোগ দিতেন ধর্মযুদ্ধে এবং তারও পরবর্তী বছরে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। আর তাতে যে লাভ হত, তা দান করতেন শিষ্যদের। কিছু অংশ দিয়ে গরীব-দুঃখীকে খেজুর কিনে দিতেন। খেজুর খেতে হত তাঁর সামনেই। কেননা, পরে তিনি

আঁটিগুলো গুণে দেখে সংখ্যানুসারে তাদের অর্থ দান করতেন। অর্থাৎ, যে যত বেশী খেজুর খেত, সে তত বেশী টাকা পেত।

সূত্র: তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

গাধার সংগীতচর্চা

এক গাঁয়ে এক ধোপার ছিল একটা গাধা। তার নাম অদ্ভূত। দিনভর গাধা ধোপার কাপড়ের বোঝা…

গাধা ও ব্যবসায়ী

এক লবণের ব্যবসায়ী সস্তায় পেয়ে একদিন বাজার থেকে প্রচুর লবণ কিনল। বোঝা বইবার জন্য ব্যবসায়ীর…

পায়রা ও পিঁপড়া

একদিন এক পিঁপড়ে পিপাসায় কাতর হয়ে নদীতে জল পান করতে গেল। এমন সময় আচমকা বাসাতের…

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ১

প্রচণ্ড শীত। চারপাশে জমে উঠেছে বরফের পাহাড়। এক তরুণ প্রেমিক দাঁড়িয়ে আছেন ঘরের এক দেওয়ালের পাশে। এক সুন্দরী যুবতীকে একনজরে দেখবেন তিনি। তাঁর রূপের ফাঁদে তিনি আটকা পড়েছেন। দাঁড়িয়ে আছেন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত। ঠাণ্ডায়, বরফে তাঁর শরীর জমে গিয়েছে। তিনি অবশ। হুঁশও নেই। ফজরের আযান শুনে তাঁর মনে হল, বুঝি এশার আযান হচ্ছে।

ক্রমশঃ রাতের আঁধার সরে যায়। পূবালী সূর্যের আলো এসে পড়ল তাঁর চোখে-মুখে। এ আলো যেন পৌঁছে যায় তাঁর চেতনার ভেতরে। চমকে ওঠেন তিনি। এক যুবতীর আশায় তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন বরফের রাজত্বে, অতিবাহিত হয়েছে একটি সুদীর্ঘ শীতার্থ রাত!

আত্মধিক্কারে তিনি ক্লিষ্ট হলেন। ছিঃ ছিঃ! প্রবৃত্তির তাড়নায় একটি পুন্যময় রজনী এইভাবে কেটে গেল? এর বদলে যদি এবাদতে নিমগ্ন হতাম।

তীব্র অনুশোচনায় তরুণ যেন নতুন হয়ে গেছেন। তাঁর নারীপ্রেম রূপান্তরিত হল আল্লাহ প্রেমে। গভীর সাধনায় তিনি মগ্ন হলেন। আর আল্লাহর অশেষ করুণায় তিনি সিদ্ধিলাভও করলেন।

এই রূপান্তরিত আলোকিত মানুষটি হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ)। সাধনাবলে তিনি জাহেরী ও বাতেনী, শরীয়ত ও তরীকতের গভীর প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানলাভ করেন। বহু অমূল্য দ্বীনী গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি। তাঁর সাধনা মাহাত্ম্য সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেছেন হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ) প্রমুখ বিদগ্ধজন। তাঁর জীবনেও প্রচুর অলৌকিক ঘটনার সমাবেশ ঘটেছে। এই গ্রন্থ রচয়িতা শেখ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রঃ) বলেন, হযরত ফোজায়েল (রঃ)-এর ন্যায় জ্ঞানী ব্যক্তি যখন তাঁর গুণকীর্তন করেছেন, তখন আমার দ্বারা তাঁর আর কতটুকু প্রশংসা করা সম্ভব?

যাই হোক, সাধনাইয় তিনি যে সিদ্ধিলাভ করেন, তা একটি ঘটনায় প্রমাণিত হয়ে যায়।

একদিন তাঁকে খুঁজতে গিয়ে তাঁর মা দেখেন, তিনি একটি গোলাপ গাছের তলায় ঘুমাচ্ছেন। আর একটি সাপ নার্গিস গাছের ডাল দিয়ে মশা, মাছি তাড়াচ্ছে।

হযরত আবদুল্লাহ (রঃ)-এর জন্ম বাগদাদের কাছাকাছি মেরু নামক স্থানে। বাগদাদে বেশ কিছুদিন জ্ঞানী-গুণীর সান্নিধ্যে থেকে তিনি মক্কায় যান। মক্কা থেকে ফিরে আসেন মেরুতে। এখানে তখন ধর্মবেত্তাদের দুটি দল ছিল। তাঁদের সঙ্গে আবদুল্লাহ (রঃ)-এর সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাঁরা তাঁকে ভালোবাসতেন। কোন মত-দ্বন্দ্ব ঘটলে তিনি তার মীমাংসাও করে দিতেন। পরে তিনি আবার মক্কায় যান ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর জীবন-পঞ্জী বড় বিচিত্র। তিনি এক বছর হজ্জ আদায় করতেন, পরের বছর যোগ দিতেন ধর্মযুদ্ধে এবং তারও পরবর্তী বছরে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। আর তাতে যে লাভ হত, তা দান করতেন শিষ্যদের। কিছু অংশ দিয়ে গরীব-দুঃখীকে খেজুর কিনে দিতেন। খেজুর খেতে হত তাঁর সামনেই। কেননা, পরে তিনি

আঁটিগুলো গুণে দেখে সংখ্যানুসারে তাদের অর্থ দান করতেন। অর্থাৎ, যে যত বেশী খেজুর খেত, সে তত বেশী টাকা পেত।

সূত্র: তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরো পড়তে পারেন...

খৃষ্টান মহিলার প্রেমে পাগল হওয়ার ঘটনা

বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, একদা আমি হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এর দরবারে বসেছিলাম। এমন সময় আমাদের…

এক বুজুর্গের কসমের উছিলায়

হযরত আবূ আব্দুল্লাহ কাররাশী (রাঃ) বলেন, একবার মুশরিক সৈন্যরা স্পেন শহরে প্রবেশ করে বিনা যুদ্ধে…

স্বপ্ন যোগে রাসূলের দিদার।

ইমাম কাফেলায় হাবীবের ঈমানী চেতনার প্রকাশ্য শক্তি যেন কয়েকগুণ বাড়াল। ইমাম হোসাইন (রাঃ) গভীর রাতে…