হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এর সাধনা
হজরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, হযরত জাকারিয়া (আঃ) এর ছেলে হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) মাত্র আট বছর বয়সে বাইতুল মোকাদ্দাসে গেলেন, তিনি দেখতে পেলেন, মসজিদে অবস্থানরত আবেদরা পশমী কাপড় পরিধান করে আছেন। আবেদদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী মেহনত মোশাককাত করছিলেন। তার অবস্থা ছিল তিনি নিজেই নিজের গলার হাড় চিড়ে তাতে একটি শিকল বেঁধে শিকলের অন্য প্রান্ত দ্বারা মসজিদের এক কোনায় নিজেকে বেঁধে রেখেছিলেন। এ দৃশ্য দেখে হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) মনে মনে বড় শঙ্কিত হলেন। অতঃপর তিনি স্বীয় মাতাপিতার নিকট ফিরে এলেন। বাড়ী ফেরার সময় পথে তিনি কতিপয় বালক কে খেলা করতে দেখলেন। বালকরা তাঁকে ও সে খেলায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলল, আমাদের সাথে খেলা করতে আস। উত্তরে তিনি বললেন, দুনিয়াতে আমাকে খেলা করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বাড়িতে এসে তিনি স্বীয় মাতা পিতাকে বললেন, আমাকে পশমের জামা প্রস্তুত করেদিন। ছেলের কথা অনুযায়ী তারা সে জামা বানিয়ে দিলে তিনি তা পরিধান করে বাইতুল মোকাদ্দাসে চলে গেলেন।
বর্ণনাকারী বলেন, হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) সেই যে বাইতুল মোকাদ্দাসে গেলেন অতঃপর পনের বছর পর্যন্ত সেখানেই কাটিয়ে দিলেন। পরে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে পাহাড় পর্বতে চলে গেলেন। এদিকে তার মাতাপিতা তাঁকে সন্ধান করে ফিরতে লাগলেন। একদিন হঠাৎ তারা দেখতে পেলেন, হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) আবাদান নদীর প্রান্তে বসে পা ভিজাচ্ছেন, আর প্রচন্ড পিপাসার তাড়নায় যেন তার প্রাণে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এ সময় তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, তোমার ইজ্জত ও বুজুর্গীর কসম! যতক্ষণ না আমি একথা জানতে পারব যে, তোমার নিকট আমার পরিণতি কি হবে, ততক্ষন আমি ঠাণ্ডা পানি পান করব না। তার মাতাপিতা সাথে জবের রুটি নিয়ে গিয়েছিলেন। তা বের করে ছেলেকে দিয়ে বললেন, ইহা খেয়ে পানি পানি পান কর। হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) পিতামাতার নির্দেশ পালন করলেন এবং নিজের কসমের কাফফারা দিলেন। এ কারনেই আল্লাহ্ পাক তার তারীফে বলেছেন সে তার পিতামাতার একনিষ্ট সেবক। মোটকথা, তারা হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) কে ফিরিয়ে আনলেন পরবর্তীতে তাঁর নিয়মিত অবস্থা ছিল তিনি যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন এমনভাবে কান্না করতেন যে, তাঁর কান্না দেখে আশে পাশের গাছ এবং তাঁর পাতা ও কান্না করতে থাকত। হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এর কান্না দেখে হযরত জাকারীয়া (আঃ) ও কাঁদতেন এবং শেষে তিনি বেহুশ হয়ে যেতেন। শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থা হল যে, কাঁদতে কাঁদতে হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এর মুখের গোশত খসে পড়ে মুখের চোয়াল বের হয়ে এল। একদিন তাঁর মাতা বললেন, বেটা! তুমি যদি রাজী হও তবে আমি তোমার মুখের চোয়াল মানুষের জানালে তাঁর মা দুটুকরা তুলা ভাজ করে চোয়ালের দু’গালে লাগিয়ে দিতেন। কিন্তু তিনি নামাযে দাঁড়ালে চোখের পানিতে ভিজে পূনরায় যখন তা খসে পড়ার উপক্রম হত তখন তাঁর স্নেহময়ী মাতা পূনরায় তা নিংড়িয়ে যথাস্থানে লাগিয়ে দিতেন। এ সময় তিনি স্বীয় মাতার অশ্রসিক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ্ পাকের দরবারে আরজ করতেন, এলাহী! ইনি আমার মাতা, তাঁর হাতে আমার চোখের পানি আর তুমি আরহামুর রাহেমীন।
একদিন হযরত জাকারিয়া (আঃ) নিজের ছেলেকে বললেন বেটা! আমি তো আল্লাহ্ পাকের দরবারে এ দোয়াই করেছিলাম, যেন তুমি আমার চক্ষু শীতলকারী হও। অথচ তুমি দিনরাত শুধু কান্না করতে থাক, তোমার এ অবস্থা দেখে আমি কেমন করে শান্তি পাই বল? তিনি জবাব দিলেন, আব্বাজান! হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি মাঠ আছে রোদনকারী ব্যতীত অন্য কেহ তা অতিক্রম করতে পারবে না। অতঃপর হযরত জাকারিয়া (আঃ) বললেন, বেটা! আমার দিল এতমিনান হয়ে গেছে; এখন তোমার যা ইচ্ছা কাঁদ।