হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর একবার তিনি সশিষ্য এক নির্জন এলাকায় ভ্রমণ করেন। রাতে তাঁরা আশ্রয় নেন এক পর্বত গুহায়। কিছুক্ষণ পর পাহাড়ের গর্ত থেকে অসংখ্য সাপ বেরিয়ে এল। ভয়ে অস্থির হয়ে পড়লেন সবাই। কিন্তু হযরত আবু ইসহাক (রঃ)-এর নির্দেশে সবাই আল্লাহর নাম জপ করতে শুরু করলেন। সাপগুলি আবার গর্তে ঢুকে গেল। ভোর হলে দেখা গেল, একটি বিরাট সাপ আবু ইসহাক (রঃ)-এর পাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে। একজন শিষ্য তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বললেন, এমন সুন্দর রাত আর কখনও আমার জন্য আসেনি। কিন্তু পরিতাপ তার জন্য, যে এই উত্তম রাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য বস্তুর খবর রাখে।
এক লোক হযরত আবু ইসহাকের (রঃ) পরনের কাপড়ে একটি বিছা দেখতে পেয়ে মারতে গেল। তাকে বাধা দিয়ে তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, কেননা তিনি আমাদের কারও মুখাপেক্ষী করেননি, কিন্তু অনেকেই আমাদের মুখাপেক্ষী।
একবার এক নির্জন এলাকায় তাঁর পথ ভুল হয়। কয়েকদিন ধরে সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে তিনি এদিক ওদিক বেড়ান। অবশষে একদিন ভোর রাতে মোরগের ডাক শুনতে পেলেন। ভাবলেন, ঐ দিকে হয়ত জনবসতি আছে। অতএব তিনি সেদিকে অগ্রসর হলেন। কয়েক পা যেতেই একটাই প্রবল ঘুষি এসে পড়ল তাঁর ঘাড়ের ওপর। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলেন আবু ইসহাক (রঃ)। আল্লাহর ওপর নির্ভর করে যারা পথে নামে আল্লাহ গো, এই কী তার পুরষ্কার। তখনই অদৃশ্য শব্দ কানে এল, তুমি যতদিন আমার ওপর নির্ভরশীল ছিলে, ততদিন তুমি সম্মান পেয়েছে। কিন্তু আজ তুমি নির্ভর করতে গেলে মোরগের ওপর, তাই তুমি আজ মানুষের কাছে অপদস্থ হলে।
হযরত আবু ইসহাক (রঃ) বলেন, ঘুষির আঘাতে আমার শরীরে এত বেশী চোট লাগে যে, তখন পথ চলতেও কষ্ট হচ্ছিল। বহু কষ্টে কোন রকমে পা ফেলছিলাম। তখন আবার শুনতে পেলাম গায়েবী আওয়াজঃ দেখ তো, যে লোক তোমাকে লোকটির মরা লাশ পড়ে আছে মাটির ওপর।
একবার তিনি শাম সফরে যান। পথে এক সুশ্রী তরুণ তাঁর সঙ্গী হবার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তাঁর সঙ্গে চলতে গেলে অনাহারে থাকতে হবে, এ শর্তে যুবককে সঙ্গী করে নিলেন। চার দিন উপবাসে কেটে গেল। পরদিন এক গেরস্ত তাঁদের দাওয়াত করে নিলেন। নানা রকমের খাবারও প্রস্তুত। হযরত ইসহাক (রঃ) তাঁর তরুণ সাথীকে ঐ বাড়িতে খেতে বললেন, কিন্তু সে বলল, আল্লাহর কোন উসিলা ছাড়া সে কিছু খাবে না, এ রকমই তাঁর ইচ্ছা। তিনি বললেন, এ ইচ্ছা অবশ্যই কঠিন। সফল হওয়া শক্ত। কিন্তু যুবক বলল, আল্লাহ যে কোনভাবে রুজি দেন। তবে তাঁর দাসদের পরীক্ষাও করেন। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, দুঃখ-কষ্ট ও অনশন-উপবাস অবস্থায় নির্ভরতার ওপর অবিচল থাকতে হবে। কোন কৌশল অবলম্বন করা চলবে না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন