হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ২
হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ লোকটির কথায় জানা যায়, তাঁরা যখন এক নির্জন প্রান্তরে পৌঁছলেন, তখন প্রতিদিন দুটুকরো রুটি ও এক পেয়ালা পানি পেতে লাগলেন। আবু ইসহাক এক টুকরো রুটি তাঁর সঙ্গীকে দিয়ে অন্যটি নিজের জন্য রাখতেন। এমন সময় এক বৃদ্ধের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। হযরতকে দেখে বৃদ্ধ ঘোড়া থেকে নেমে এলেন। দুজনের মধ্যে কথাবার্তা কুশল বিনিময় হল। তারপর বৃদ্ধ ঘোড়ায় চড়ে গেলেন। লোকটি জিজ্ঞেস করল, ইনি কে হুযুর! তিনি বললেন, তোমার প্রশ্নের জবাব হয়ে গেছে। তাঁর এ কথার মর্ম অনুধাবন করতে না পারায় হযরত ইসহাক (রঃ) বললেন, ইনি হযরত খিজির (আঃ)। উনি আমার সঙ্গী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমি রাজি হইনি। কেননা, আমার ভয় হল, তাতে আমার তাওয়াক্কুলের ক্ষতি হবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য প্রভুর ওপর নির্ভর করতে হবে।
একবার হযরত খিযির (আঃ)-কে তিনি মোরগের মতো উড়তে দেখে মাথা নিচু করেন। কারণ, যেন তাঁর তাওয়াক্কুলের কোন ক্ষতি না হয়। একটু পরে অবশ্য নিচে নেমে এসে হযরত খিযির (আঃ) বললেন, আপনি যদি আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করতেন তাহলে আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসতাম না। এমনকি তাওয়াক্কুল রক্ষা করার জন্য তিনি হযরত খিযির (আঃ)-কে সালাম পর্যন্ত করেননি।
একবার ভ্রমণপথে তৃষ্ণার কাতরতায় তিনি সঙ্গহীন হয়ে পড়েন। যখন জ্ঞান ফিরে এল, তখন দেখলেন, এক লোক তাঁর চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছেন। তিনি তাঁকে পানি পান করিয়ে মদীনায় নিয়ে গেলেন। সেখানে ঘোড়া থেকে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে বললেন, আপনি যখন রওজা মুবারকে রাসূল (সাঃ)-এর কবর শরীফ যিয়ারত করবেন, তখন আমার পক্ষ থেকে তাঁর দরবারে সালাম জানাবেন।
এক প্রান্তরে তিনি বাঘের পাল্লায় পড়েন। কিন্তু ভীত না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে দাঁড়িয়ে রইলেন এক গাছের তলায়। বাঘটি ধীরে ধীরে এসে তাঁর সামনে শুয়ে কাতরাতে লাগল। তিনি দেখলেন, বাঘটির সামনের পা ফুলে গেছে এবং একটি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এক টুকরো কাঠের সাহায্যে ক্ষতস্থানের পুঁজ ও ময়লা বের করে দিয়ে কাপড়ের পট্টি বেঁধে দিলেন। বাঘ খুশী হয়ে তখনকার মতো চলে গেল বটে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দুটি বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে এসে লেজ নেড়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করল।
আর একবার এক বনের মধ্যে তিনি বাঘের গর্জন শুনতে পান। সঙ্গে একজন শিষ্য ছিলেন। ভয়ে তাঁর প্রাণ উড়ে গেল। তড়িঘড়ি তিনি উঠে বসলেন এক গাছের ওপরে। হযরত আবু ইসহাক (রঃ) তখন নামাজ পড়ছিলেন। বাঘটি কাছে এসে তাঁকে কিছুক্ষণ দেখল, পায়চারী করল, তারপর আপন আপন মনে চলে গেল। আর গাছ থেকে নেমে এলেন শিষ্যটি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে এক ভয়ঙ্কার মশার কামড়ে তিনি আর্তনাদ করে উঠলেন। তখন শিষ্যটি বললেন, কিছুক্ষণ আগে আস্ত একটি বাঘ দেখে বিচলিত হলেন না। অথচ সামান্য একটি মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন।
এর রহস্য কী হুযুর? তাঁর উত্তর, তখন আমি নিজেকে ভুলে ছিলাম। কিন্তু এখন আবার ফিরে এসেছি নিজের মধ্যে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন