হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) – পর্ব ৫
হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি কিছুদিন মক্কা শরীফে অবস্থান করেন। তখন তাঁর পার্থিক অনটন ছিল। রাত্রে বই পড়তেন চাঁদের আলোয়। একজন কেউ বললেন, কাবা ঘরের কাছে যে আলো জ্বলছে, আপনি সেই আলোতে পড়াশুনা করতে পারেন। তিনি বললেন, ঐ আলো শুধু কাবার উদ্দেশ্যেই জ্বালানো হয়েছে। সুতরাং তাতে অন্য কিছু করা ঠিক নয়। তাঁর ধর্মনিষ্ঠার এ এক অসাধারণ উদাহরণ।
হযরত শাফেয়ী (রঃ)- এর মর্যাদাহানির জন্য একদিন এক ব্যক্তি খলীফা হারুনুর রশীদকে বললেন, ইমাম শাফেয়ী (রঃ) কোরআন মুখস্থ করেননি। কথাটা বিশ্বাস হল না খলীফার। তবুও তা পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাঁকে রমযান মাসের তারাবির নামাজে ইমাম নিযুক্ত করলেন। কেননা, তারাবীহর নামাজে কোরআন শরীফ খতম করার রীতি বরাবর চলে আসছে।
সেখানে প্রামাণিত হবে, কোরআন তাঁর মুখস্থ কিনা। ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর অবশ্য একটু অসুবিধা হল। কিন্তু তিনি সে বিষয়ে সজাগ ও তৎপর হলেন। প্রতিদিন দিনের বেলায় এক পারা মুখস্থ করতেন আর রাতে তারাবীহর নামাজে তা আবৃত্তি করতেন। এভাবে এক রমযান মাসে পুরো কোরআন শরীফ খতম হয়ে গেল। আল্লাহ তাঁর মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখলেন।
একবার তিনি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কেউ যদি স্বেচ্ছায় নামাজ বাদ দিয়ে কাফের হয়ে যায়, তবে পুনরায় মুসলমান হতে হলে তার কী করতে হবে? ইমাম আহমদ (রঃ) বললনে, আবার নামাজ পড়লেই সে মুসলমান হয়ে যাবে। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) তাঁকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলেন, যখন সে কাফেরই হয়ে গেল, তখন সে অবস্থায় নামাজ পড়লে তা শুদ্ধ হবে কিভাবে? ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর এই সূক্ষ্ণ উত্তরে নিশ্চুপ হয়ে রইলেন।
হযরত শাফেয়ী (রঃ) বলতেন , যার কাছ থেকে আমি নীতিমূলক একটি অক্ষরও শিক্ষা করেছি, তিনিই আমার শিক্ষাগুরু। তিনি আরও বলতেন, যিনি অযোগ্য ব্যক্তিকে বিদ্যা দান করেন, তিনি বিদ্যার মর্যাদা নষ্ট করেন। আবার যিনি যোগ্য ব্যক্তিকে বিদ্যার্জন থেকে বঞ্চিত রাখেন, তিনিও অত্যাচারীর ন্যায় অর্থাৎ তিনি বিদ্যার মর্যাদা রক্ষা করেননি। তিনি একজনকে বলেন, অন্যের মতো ধন-সঞ্চয় করতে পারলে না বলে দুঃখ করো না। কারণ যে ধন সঞ্চয় করেছে সে তা ফেলে রেখেই মৃত্যুবরণ করেছে। তা দিয়ে তার কোন উপকার হয়নি। বরং তুমি ইচ্ছা পোষণ কর যে, অমুক লোক যেরূপ এবাদত করেছে, যদি তেমন এবাদত করতে পারতাম, তাহলে কত না ভালো হত। তিনি আরও বলেন, কেউই মৃত ব্যক্তির ওপর হিংসা করে না। অতএব জীবিতের ওপরও হিংসা করা উচিত নয়। যেহেতু জীবিতও একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া