হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) – পর্ব ৪

হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তাঁর একটি অভ্যাস ছিল, কেউ পার্থিব বা সংসার সম্বন্ধীয় কোন প্রশ্ন করলে তিনি নিজে তাঁর সদুত্তর দিতেন। কিন্তু সেটি আধ্যাত্মিক প্রশ্ন হত, তাহলে প্রশ্নকারীকে পাঠিয়ে দিতেন হযরত বিশর হাফী (রঃ)-এর কাছে। তিনি বলতেন, আল্লাহ পাক আমার প্রতি ভয়ের দরজা খুলে দেওয়ায় আমি তাঁর কাছে দোয়া করেছি। এর ফলে আমার অবস্থা এমন হয়েছে যে, আমি যেন একেবারে নির্বোধ হয়ে চলেছি।

ইমাম আহমদ (রঃ) বাগদাদে বাস করতেন কিন্তু বাগদাদের মাটি ওয়াকফ করে গিয়েছেন। তিনি মুসেল থেকে আটা এনে রুটি তৈরি করে দিতেন। তাঁর পুত্র সালেহ এক বছর স্পেনের কাজী ছিলেন। সালেহ খুবই ধর্মনিষ্ট ছিলেন। রাত্রে মাত্র দু’ঘণ্টার বেশি ঘুম যেতেন না। এবাদতে কাটিয়ে দিতেন। বাড়ির সামনে একখানি ঘর তৈরি করে সেখানেই থাকতেন। কেননা কেউ যেন কোন নালিশ জানাতে এসে ফিরে না যায়। কিন্তু তবুও হযরত ইমাম আহমদ (রঃ) পুত্রের এই পদ গ্রহণে কোন দিন খুশী হননি। বরং ঘৃণার চোখে দেখেছেন।

তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহর দীদার লাভ কিভাবে সম্ভব?

তাঁর উত্তরঃ কোরআনে শরীফের মাধ্যমে।

প্রশ্নঃ ইখলাস কি?

উত্তরঃ কাজকর্মের বাধা-বিঘ্ন, তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাজ করাই ইখলাস।

প্রশ্নঃ তাওয়াক্কুল কাকে বলে?

উত্তরঃ আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও নির্ভরতাই তাওয়াক্কুল।

প্রশ্নঃ রোজা কাকে বলে?

উত্তরঃ যেকোন কিছু আল্লাহ পাকের খুশীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা।

প্রশ্নঃ ভালোবাসা কি?

উত্তরঃ এই প্রশ্নটি হযরত বিশর হাফীকে জিজ্ঞেস করা হোক। তাঁর বর্তমানে আমি এর জবাব দেব না।

প্রশ্নঃ যোহদ বা সংসার বিরাগ কি?

উত্তরঃ এটি তিন প্রকার। যথা-

(ক) অবৈধ জীবিকা বর্জন। এটি সাধারণ সংসারবিরাগ।

(২) বৈধ জীবিকা থেকেও লোভ সংবরণ। এটি হল বিশেষ সংসার বিরাগ।

(৩) যে বিষয় বস্তুগুলো আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন, তা অর্জন করা। এগুলো হল আরেফগণের সংসারবিরাগ।

প্রশ্নঃ যেসব মুর্খ সুফী তাওয়াক্কুল করে মসজিদে অবস্থান করছে তাদের সম্পর্কে কি বলা যায়?

উত্তরঃ তারা মুর্খ নয়। বরং জ্ঞানই তাদের এরূপ করেছে।

প্রশ্নঃ মনে হয় এরা শুধু রুজি-রুটির মুখাপেক্ষী নয়।

ইমাম আহমদ (রঃ)-এর অন্তিম মুহূর্তে ঘনিয়ে এলে তাঁর কথা বলতে বড় কষ্ট হয়। শুধু হাতের ইশারা চলে। এক সময় তাঁর পুত্র জিজ্ঞেস করেন, আপনার অবস্থা কিরূপ ?

তিনি বললেন, এখন জবাব দেবার সময় নয়। সঙ্কটকালে উপস্থিত। এখন কেবল দোয়া করার সময়। আমার চারপাশে এখন যারা বসে রয়েছে, তাদের মধ্যে ইবলিসও আছে। সে আফসোস করে বলছে, আমি বুঝি তার হাত থেকে নিরাপদে পার হয়ে গেলাম। ওর কথা শুনে এখনও আমার ভয় হয়। যদি আল্লাহর অনুগ্রহে মুক্তি পেয়ে যাই- তো এতটুকু শুধু ভরসা। কথাগুলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) –শেষ পর্ব  পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।