হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ৮
হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যিনি তপস্বী তাঁর সামনে থেকে তিনটি বিষয় সরে গেলেই পথ প্রশস্ত হল। যেমনঃ (১) দুনিয়ার বাদশাহী লাভ করেও তাতে খুশি না হওয়া, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাজত্বের প্রতি বিমুখ হওয়া, (২) রাজত্ব চলে গেলে দুঃখিত না হওয়া। (৩) মানুষের স্তুতি প্রশংসা বা দানের প্রতি লোভাতুর না হওয়া। কেননা প্রশংসা লোভী মানুষ কাপুরুষের বিশেষ, কাপুরুষের মধ্যে সততা ও সৎসাহসের অভাব থাকে। আর তা আল্লাহ প্রাপ্তির অন্তরায়।
আল্লাহর প্রেমিক হতে চাইলে শরীয়তবিরোধী সব কাজ ছাড়তে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু মন থেকে তাড়াতে হবে। হালাল খাদ্য খেতে হবে। অনুপম ইচ্ছা পূর্ণ করে- রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ ও দিনের রোজা অপেক্ষাও উত্তম হালাল খাদ্য ছাড়া নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি উপাসনা অনুষঙ্গের মাধ্যমে কেউ কোনদিন সাধক হতে পারে না। কোন এক ব্যক্তিকে কথা প্রসঙ্গে হযরত আদহাম (রঃ) হালাল খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে এসব কথা বলেন।
কোন এক সাধকের সাধনা বিষয়ে লোকমুখে নানা কথা শুনে তিনি তাঁকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারপর একদিন চলেই গেলেন সেখানে। তাঁকে পেয়ে দরবেশ খুব খুশী। কম করেও তিন দিন তাঁর আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানালেন। বলামাত্র তিনি রাজি। কেননা, তিনি তাঁকে পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিলেন। দেখলেন সত্যিই তিনি এবাদত বন্দেগীতে অনুরাগী। তাঁর এগুণ বৈশিষ্ট্যের কথা তিনি আগেই শুনেছিলেন। রাতে চলে বিরাম বিশ্রামহীন, এবাদত। নিজেকে তাঁর তুলনায় তুচ্ছ মনে হল আদহাম (রঃ)-এর। তাছাড়া তাঁর আতিথেয়তাও তাঁকে অবাক করে দেয়। নানা ধরণের উপাদেয় ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে তিনি তাঁকে আপ্যায়িত করেন। আর তখনই তাঁর মনে অঙ্কুরিত হয় সন্দেহের বীজ। দরবেশের বাড়িতে খাবার-দাবারের এত তোড়-জোড় কেন? তাও পরীক্ষা করে দেখলেন। আর জানা গেল, না, তাঁর এই খানদানী খানা হালাল নয় আদৌ।
তিনদিন কেটে গেল। এবার বিদায়। যাবার সময় দরবেশকে তিনি মেহমান হওয়ার অনুরোধ করলেন। রাজিও হয়ে গেলেন দরবেশ। মেহমানকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন হযরত আদহাম (রঃ)। আর তাঁকে হালাল খাদ্য খাওয়াতে শুরু করলেন। আশ্চার্য ব্যাপার। দরবেশের উপাসনা বা আল্লাহ-প্রেমের মাত্রা অনেকখানি কমে গেল। আর এর কারণ দরবেশেও বুঝতে পারলেন না। অগত্যা তিনি হযরত আদহাম (রঃ)-কে কারণটা জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আমি কিছু করিনি। সব করার করেছে আমার পরিবেশিত খাদ্য। এতদিন আপনি অবৈধ খাবার খেয়েছেন। তাই শয়তান আপনার মধ্যে যাতায়াতের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে। আর আপনার এবাদত-বন্দেগী ছিল আসলে তারই কারসাজি। এবারে আপনার পেটে পড়েছে হালাল খাবার। আর ইবলিসের আনাগোনাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আপনি যেটুকু উপাসনা করছেন, তারমধ্যে কোন ভেজাল নেই, তাওবা করুন। এখন থেকে হালাল রুজির ওপর নির্ভর করুন। জানবেন, এবাদত-বন্দেগী হালাল রুজির ওপর নির্ভরশীল। হারাম খাবআর খেয়ে যে এবাদত তা মূলত শয়তানি প্ররোচনা।
একবার তিনি হযরত সুফিয়ান (রঃ)-কে কথা প্রসঙ্গে বললেন, আপনি অবশ্যই বিপুল জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু আপনাকে আরও বেশী বিশ্বাসী হতে হবে। অর্থাৎ তাপসগণের ত্রুটি বিচ্যুতি দুর্বলতা সম্বদ্ধে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিফহাল ছিলেন।
হযরত শাকীক বলখী (রঃ) একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি দুনিয়া থেকে এত বেশী দূরে থাকেন কেন? তিনি জবাব দেন, মানুষ যদি আমাকে দেখে কুলি-মজুর বা পাগল মনে করে তো একটু শান্তিতে দ্বীনের সেবা করা যায়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া