হযরত ইবনে আতা (রঃ) – পর্ব ২

হযরত ইবনে আতা (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত ইবনে আতা (রঃ)-এর উপদেশবানীঃ

১. সাধক-দরবেশগণ যে কাজই করুন, তা-ই উত্তম। যে জ্ঞানবিদ্যা শেখার কথা বলেন, তাই উত্তম জ্ঞানবিদ্যা। অতএব, তাঁরা যে কথা বলতে নিষধ করেন, বলো না। আর যা করতে বলেননি, তা করো না।

২. মারেফাতের জ্ঞান যে অনুসন্ধান করে, জ্ঞানের ভেতরেই তার সন্ধান পাবে। যদি না পায়, তবে তা বিজ্ঞানশাস্ত্রে পাবে। তাতেও যদি না পাওয়া যায়, তবে তওহীদ শাস্ত্রে তা খুঁজবে। যদি তাতেও না মেলেন, তবে ধর্মজ্ঞান লাভের আর আশা নেই।

৩. যা মানুষকে আল্লাহ থেকে অলস রাখে, তা-ই জঘন্য।

৪. যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য বস্তু থেকে শান্তি লাভ করতে চায়, শেষ পর্যন্ত তাই তার পক্ষে বিপদ হয়ে দাঁড়ায়।

৫. আল্লাহর আনুগত্যজনিত যে বুদ্ধি, তাই খাঁটি বুদ্ধি। যে জিকিরে মনে অহঙ্কার আসে, তা-ই নিকৃষ্ট, আর যে পাপের পেছনে তওবা নসিব হয় না, তা-ই হল মহাপাপ।

৬. পার্থিব ধন-সম্পদের প্রতি লিপ্সা মনে অহমিকা সৃষ্টি করে।

৭. মানুষের দৃষ্টি বাইরে, আল্লাহর দৃষ্টি ভেতরে। এ জন্য মানুষের দর্শনীয় স্থান অপেক্ষা আল্লাহর দর্শনীয় স্থানকে অনেক বেশী পবিত্র রাখা চাই।

৮. যা মানুষকে পারলৌকিক পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে, তাই হল দুনিয়া। অর্থাৎ পার্থিব মোহ।

৯. মন, রিপু ও আত্মা-এ তিনটির তিন রকম বাসনা। যথাঃ (ক) মন চায় আল্লাহর নৈকট্য, (খ) আত্মা চায় আল্লাহর দীদার, (গ) রিপু চায় পার্থিব সুখ-শান্তি। আর এ জন্য স্বাভাবিকভাবে রিপু

আল্লাহর বিরুদ্ধে পথে ধাপিত হয়। দাসকে আল্লাহর অনুসদ্ধানে বাঁধা দেয়। হতভাগ্যরাই পাপ কর্মে প্রবৃত্তির সঙ্গী হয়।

১০. যার মধ্যে দরবেশগণের রীতি এসে যায়, সে আল্লাহর যিকির ও এবাদতের শক্তি লাভ করে।

১১. খাওয়া-পরার দ্বার কপটদের শক্তি বৃদ্ধ হয়, আর মুমিনদের শক্তি বৃদ্ধি হয়, যিকির ও আল্লাহর প্রশংসা দ্বারা।

১২. রিপুর কারাগারে যে বন্দী, সে আল্লাহর দরবারে পৌঁছতে পারে না।

১৩. মানুষ যখন আল্লাহর অন্তদৃষ্টি লাভ করে তখন তার পক্ষে অহমিকা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সে আল্লাহর প্রেমে এমন বিভোর হয়ে যায়, সে তাতেই বিলীন হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।

১৪. বিদ্যা চার প্রকার। যথাঃ (ক) উপাসনা বিদ্যা, (খ) অবুদিয়াত বিদ্যা, (গ) পরিচর্যা বিদ্যা ও (ঘ) তত্ত্ববিদ্যা।

১৫. মারেফাতের স্তর। তিনটি। যথাঃ ভয়, লজ্জা, ও শান্তি। ইবনে আতা (রঃ) বলেন, হযরত আদম (আঃ) যখন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলেন, আর এই সংবাদ যখন বিশ্বচরাচরে ছড়িয়ে গেল, তখন সোনা ও রূপা ছাড়া সবাই কাঁদল। আল্লাহ এ কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, যে আপনার আদেশ অমান্যকারী, আমরা তার জন্য কান্নাকাটি করব না। আল্লাহ তাঁর শান-শওকত শপথ করে বললেন, সোনা ও রূপার দ্বারাই তিনি সমস্ত জিনিসের মূল্য প্রকাশ করবেন। অর্থাৎ সব বস্তুর মূল্যের মাপকাটি হবে সোনা ও রূপা। আর সমগ্র মানব জাতিকে তাদের দাস বানিয়ে রাখা হবে।

একবার তিনি তাঁর সঙ্গীদের সামনে পা ছড়িয়ে বসলেন। বললেন, নীতিজ্ঞদের নীতি ত্যাগ করাই হল আদব। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আবু বকর (রঃ) ও হযরত ওমর (রঃ)-এর সামনে পা বাড়িয়ে বসে ছিলেন। কেননা, তিনি ছিলেন নীতির ঊর্ধ্বে সম্ভ্রমশীল।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইবনে আতা (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।