হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বন্দী জীবন-২য় পর্ব

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বন্দী জীবন-১ম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন

জেলের প্রহরীরা কয়েদীদের এ আমূল পরিবর্তন দেখে অবাক হল। তারা সকল কয়েদীদের সম্মানের চক্ষে দেখতে আরম্ভ করল। তাঁদের সাথে একত্রে চলাফেরা করতে আর তাঁদের দ্বিধা বোধ হত না। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হবার পরে জেলখানার দরজায় আর পাহারার প্রয়োজন হল না। দিবারাত্র জেলখানার দরজা খোলা থাকত। কিন্তু কোন কয়েদী পালিয়ে যাওয়ার মনবৃত্তি আর থাকল না। কয়েদীদের আত্নীয়-স্বজনেরা অবাধে জেলে ঢুকে তাঁদের আপনজনদের সাথে সাক্ষাৎ করে যেত। খাবার দাবার পরিবেশন করত। এতে কোন বাধা বিপত্তি ছিল না।

 এই সুযোগে রাজমহলের রমনিবৃন্দ হযরত ইউসুফ (আঃ) কে দর্শন লাভের আশায় প্রতিদিন তাঁর জন্য বিভিন্ন রকম খাবার নিয়ে জেলের মধ্যে আসতেন এবং খাবার পরিবেশন করে এক নজর হযরত ইউসুফ (আঃ) কে দেখে যেতেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) উহা থেকে সামান্য নিজে গ্রহণ করে বাকিটা অন্য লোকদিগকে দিয়ে দিতেন। জেলখানার বন্দীরা বন্দীরা কেউ যদি পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করত তবে তা ছিল খুবই সহজ। কিন্তু মেয়াদপূর্ণ না করে চলে যাওয়া অন্যায় ভেবে এ ধরনের পদক্ষেপ নেবার মানসিকতা কারো মধ্যে ছিল না। মাত্র দুই বছরের মধ্যে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অন্যায়কারীদের বসবাসস্থাল জেলখানা রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হল মহৎ লোকদের এবাদাত খানায়। এটা ছিল একমাত্র হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মহান চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য ও আদর্শ প্রচারের ফল।

তখনকার দিনে মিশর রাজ্যের রাজার নাম ছিল রাজা রায়হান। তিনি মুসলমান ছিলেন না, কিন্তু ন্যায় অন্যায়ের প্রতি তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্ঠি ছিল। তাঁর জানা মতে দেশে কোন রূপ অন্যায় বিচার হতে দিতেন না। প্রজাদের সুখশান্তির প্রতি তাঁর সর্বদা সতর্ক নজর থাকত। অন্যায় প্রতিরোধে তিনি ছিলেন সর্বদা সোচ্চার।

একদা তিনি বিষ প্রয়োগের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে দুটি চাকরকে কারাগারে প্রেরণ করেন। চাকর দুটির একটি ছিল রাজাকে শরাব পরিবেশক, অন্যটি ছিল তাঁর বাবুর্চি। এরা উভয়ই রাজাকে বিষ প্রয়োগের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে হাজতে গিয়েছে। এদের মামলা ছিল বিচারাধীন। এরা জেল হাজতে গিয়ে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ন্যায় একজন মহৎ ব্যক্তির সাক্ষাৎ লাভ করে। তারা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও অনন্য গুণাগুণ দেখে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। অতপর তারা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট দ্বীনের তালীম গ্রহণ করতে থাকে।

কিছু দিন পরে উক্ত চাকরদ্বয় দুটি স্বপ্ন দেখতে পেল। তারা স্বপ্ন দেখে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট বলল, হুজুর ! আমরা দুজনে দুটি স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু উহার বিশ্লেষণ ও তাবির আমরা কিছুই বুঝি না। অতএব আপনি দয়াপূর্বক আমাদেরকে উহার রহস্য বলে দিন। হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, হ্যাঁ, স্বপ্নের বিশ্লেষণের জ্ঞান আল্লাহ্‌ তা’য়ালা আমাকে ছোটবেলায় দান করেছেন। অতএব বল, তোমরা কে কি স্বপ্ন দেখেছ? তখন চাকর বলল, আমি কতগুলো আঙ্গুর ফল নিংড়িয়ে রস বের করে পেয়ালা ভর্তি করতে দেখেছি। অপর জন বাবুর্চি বলল, আমি দেখেছি এক ঝুড়ি রুটি মাথায় নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছি। এমন সময় কতক পাখি এসে আমার মাথার ঝুড়ি থেকে রুটিগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। হযরত ইউসুফ (আঃ) উভয়ের স্বপ্ন শুনে বললেন, আগামী দিন তোমাদেরকে এ স্বপ্নের বিশ্লেষণ দিব। এর পূর্বে দ্বীন ও শরিয়তের বিষয় তোমরা প্রয়োজনীয় তালীমটুকু গ্রহণ কর। উভয়ে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর উপদেশ অনুসারে শরিয়তের হুকুম আহকাম শিক্ষা করা আরম্ব করে দিল এবং হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ধর্ম সন্বন্ধে বিস্তারিত অবগত হবার প্রার্থনা জানাল।

হযরত ইউসুফ (আঃ) চাকরদ্বয়ের প্রশ্নের জবাব দিলেন, আমি এমন আল্লাহর দাসত্ব করি জিনি জমিন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন, উহার অভ্যন্তরে বসবাসকারী সকল জীব জানোয়ারকে প্রতিপালন করেছেন। তিনি মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ। এই দ্বীনের নবী হযরত ইব্রাইম (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ) ও হযরত ইয়াকুব (আঃ)- এরা হলেন আমার পূর্বপুরুষ। আমি এদের ধর্ম মনে প্রানে গ্রহণ করে ধন্য হয়েছি।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বন্দী জীবন-৩য় পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।