হযরত আলী (রাঃ) এর জন্ম, বংশ ও শৈশবকাল – শেষ পর্ব
একদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে মহান আল্লাহ এ ত্রিভুবন সৃষ্টি করেছেন এবং লালন-পালন করছেন, আমরা সে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতয়া প্রকাশ করলাম। আচ্ছা আলী, তুমি কি আমাকে একান্তভাবে বিশ্বাস কর? হযরত আলী (রাঃ) বললেন, হযরত! আমি আপনাকে অন্তরের সঙ্গে সব সময় বিশ্বাস করি এবং আজীবন বিশ্বাস করবো।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খুশি হয়ে সে মুহূর্তেই তাঁকে কালেমা পাঠ করালেন, আলী (রাঃ)-এর মুখে বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এভাবে হযরত আলী (রাঃ) ইসলাম ধর্মে সর্বপ্রথম বালক মুসলমান হলেন। হযরত আলী (রাঃ) শৈশব হতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তত্ত্বাবধানে রেখে তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানে-মহত্ত্বে সুযোগ্য করে তুলেছিলেন এবং তার দ্বারাই পিতৃব্যের অপরিশোধ্য দানের কিছুটা প্রতিদান দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি হযরত আলী (রাঃ)-এর প্রতি একান্তভাবে নির্ভরশীল ছিলেন। তাই সহজেই তিনি সত্য ধর্মে দীক্ষা পেয়েছিলেন। দীক্ষা গ্রহণের পর হতেই তাঁর নতুন জীবন শুরু হয়েছিল। শিক্ষা-দীক্ষার চর্চায় ও রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপ্রেরণা ও উপদেশে তিনি চরিত্রে এবং মহত্ত্বে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। অল্প বয়সেই তিনি আরবে অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেমে পরিণত হয়েছিলেন। জ্ঞান গরিমায়, ত্যাগে মহত্ত্বে, ইবাদতে উপসনায় হযরত আলীর জুড়ি ছিল না। সাহসে, বিক্রমে বীরত্বের বল বীর্যে তিনি আরবের বিখ্যাত বীরদের জন্য ভীতি ও ত্রাসের পাত্র ছিলেন। এ জন্যই শেরে খোদা বা আল্লাহর সিংস বলে তাঁর খ্যাতি ছিল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে এক সময় বলেছিলেন, আলী, তুমি আমার সঙ্গে বেহেশতে প্রবেশ করবে। কারণ আমার বন্ধুজনের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠতম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সর্ব সময়ের সঙ্গী ও বন্ধু হযরত আলী (রাঃ)। হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন ইসলামের শেষ ও চতুর্থ খলিফা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সর্বদা একত্রে থাকার সুযোগ এবং সুনিপণভাএব তাঁকে জানার সৌভাগ্য একমাত্রই হযরত আলী (রাঃ)-এর সর্বাপেক্ষা বেশি ছিল।
হযরত আলী (রাঃ) জীবনভর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে ও সাহচর্যে উতসর্গ করেছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) অত্যন্ত সমরকুশলী ও সাহসী ছিলেন। তাঁর মত সাহসী ও নির্ভিক যোদ্ধা, বীর শক্তিমান মানব তখনকার দিনে আরবে আর কেউ ছিল না। যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাঁর হুঙ্কার, বাহুবল, অত্যন্ত সাহসিকতার ও অস্ত্রের চাকচিক্য বিধর্মী শত্রুরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরাজয় স্বীকার করেছিল এবং বাধ্য হয়ে তারা পরাজয়বরণ করত। হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন ইসলাম ধর্মের একজন মহান খাদেম।
ইসলামের স্বার্থের জন্য তিনি জীবনের সকল স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ছিলেন। জীবনের যা কিছু ক্রোদ্ধ, হিংসা ও জিজ্ঞাসা বৃত্তি চরিত্রার্থ করেছিলেন, তা সবই ইসলামের জন্য। ইসলামের ক্ষতি সাধনে বা স্বার্থ ব্যাঘাত যদি কখনো কেউ কোথাও প্রবৃত্ত হতো, তখনই তিনি সিঙ্ঘের ন্যায় গর্জে কঠোরতা অবলম্বন করে তার বিরুদ্ধে এগিয়ে যেতেন। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বহু জায়গায় বহু বিধর্মী রাজ্যের রাজা উজির, বাদশাহর সাথে অকুতোভয়ে যুদ্ধ করেছেন, তাদেরকে পরাজিত করে বন্দী করে, সত্য ধর্ম দীক্ষিত করে স্মরণীয় হয়ে আছে।
যার তুলনা তিনি নিজেই ইসলামের জন্য করেছেন। ইসলামের মঙ্গল প্রসারের কথা অধিক ভাবতেন বলে পারিবারিক জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দের কাছে তার উদারনীতি ও সরলতার বহুবিধ নজীর তুলনাহীন। কুরআন, হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে তিনি ছিলেন বিষ্ময়কর জ্ঞানের অধিকারী। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যদি জ্ঞান নগরী হয়ে থাকি তবে আলী হবে সে নগরীর দরজা। কাব্য চর্চা ও সাহিত্য চর্চা অনেক আগে থেকেই আরব রাজ্যে প্রচলিত ছিল। আক্ষরিক শিক্ষা ও দীক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকলেও আরবে বহু নামকরা কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন।
হযরত আলী (রাঃ) এর জন্ম, বংশ ও শৈশবকাল – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন