হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ ) ও তাঁহার পরিবারের কষ্ট সহ্য করা

হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, আম্মার (রাঃ) ও তাঁহার পরিবারের উপর ভীষণ নির্যাতন করা হইতেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদের নিকট দিয়া যাওয়ার সময় বলিলেন, হে ইয়াসিরের বংশধরগণ, সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের জন্য বেহেশতের ওয়াদা রহিল।

হযরত ওসমান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত প্রস্তরময় ভূমির উপর দিয়া যাইতে ছিলাম। এমন সময় দেখিলাম, হযরত আম্মার (রাঃ) ও তাঁহার পিতা মাতাকে ইসলাম হইতে ফিরিয়া যাইবার জন্য প্রখর রৌদ্রের মধ্যে শাস্তি দেওয়া হইতেছে। হযরত আম্মার (রাঃ) এর পিতা বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, সারাজীবন কি এই রকমই চলিবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, সবর কর, হে ইয়াসিরের বংশধরগণ। আয় আল্লাহ্‌, আপনি ইয়াসিরের বংশধরকে মাফ করিয়া দিন। আর অবশ্যই আপনি তাহা করিয়াছেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফর (রাঃ) বলেন, হযরত ইয়াসির, আম্মার ও উন্মে আম্মার (রাঃ) কে আল্লাহ্‌ তায়ালার (উপর ঈমান আনার) কারণে কষ্ট দেওয়া হইতেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদের নিকট দিয়া যাইবার সময় বলিলেন, হে ইয়াসিরের পরিবার, তোমরা সবর কর, হে ইয়াসিরের পরিবার তোমরা সবর কর, তোমাদের জন্য বেহেশতের ওয়াদা রহিল।

অপর এক রেওয়ায়তে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসিরেরও উল্লেখ রহিয়াছে এবং ইহাও উল্লেখ করা হইয়াছে যে, আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর লজ্জাস্থানে বর্শা মারিলে তিনি ইন্তেকাল করিলেন, আর হযরত ইয়াসির (রাঃ) নির্যাতন ভোগ করিতে করিতে মৃত্যুবরণ করিলেন এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসির (রাঃ)কে তীর নিক্ষেপ করা হইলে তিনি পড়িয়া গেলেন।

মুজাহিত (রঃ) হইতে বর্ণিত রেওয়ায়াতে আছে যে, ইসলামের প্রথম যুগে সর্বপ্রথম শহীদ হইলেন হযরত আম্মার (রাঃ)এর মা হযরত সুমাইয়া (রাঃ)। আবু জেহেল তাঁহার লজ্জাস্থানে বর্শা দ্বারা আঘাত করিয়াছিল। (বিদায়াহ)

আবু ওবাইদাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আম্মার (রাঃ) বলেন, মুশরিকগণ হযরত আম্মার (রাঃ) কে ধরিয়া এমন কষ্ট দিল যে, (প্রাণের খাতিরে) বাধ্য হইয়া তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে বেয়াদবীমূলক কথা বলিলেন এবং তাহাদের মা’বুদ্গুলির প্রশংসা করিলেন তখন ছাড়া পাইলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হইলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কি করিয়া আসিয়াছ? হযরত আম্মার (রাঃ) বলিলেন, খুবই খারাপ কাজ করিয়াছি।

আপানার সম্পর্কে অবাঞ্ছিত কথা ও তাহাদের মা’বুদ্গুলির প্রশংসা না করা পর্যন্ত আমাকে তাহারা ছাড়িল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার দিলের অবস্থা কিরূপ পাইতেছ? তিনি বলিলেন, আমার দিলকে ঈমানের উপর স্থির ও অবিচল পাইতেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তবে কোন অসুবিধা নাই। যদি তাহারা তোমার সহিত পুনরায় এইরূপ ব্যবহার করে তবে তুমিও এইরূপ করিও।

অপর এক রেওয়ায়াতে আছে, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত হযরত আম্মার (রাঃ) এর সাক্ষাৎ হইল। হযরত আম্মার (রাঃ) কাদিতেছিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁহার চক্ষুদ্বয় মুছিয়া দিতেছিলেন এবং বলিতেছিলেন, তোমাকে কাফেরগণ ধরিয়া পানিতে ডুবাইয়াছে আর তুমি এই এই অবাঞ্ছিত কথা বলিতে বাধ্য হইয়াছ। (তোমার দিল যখন ঈমানের উপর শান্ত ছিল তখন কোন অসুবিধা নাই।) যদি তাহারা তোমার সহিত আবারও এইরূপ ব্যবহার করে তবে তুমিও এইরূপ কথা বলিও।

আমর ইবনে মাইমুন (রঃ) বলেন, মুশরিকগণ হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) কে আগুনে পোড়াইয়াছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁহার নিকট দিয়া যাওয়ার সময় মাথায় হাত বুলাইয়া দিতেন এবং বলিতেন, হে আগুন, আম্মারের জন্য ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হইয়া যাও, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্য হইয়াছিলে। (হে আম্মার) তোমাকে এক বিদ্রোহীদল হত্যা করিবে।(অর্থাৎ তুমি শাহাদাত বরণ করিবে।)

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।