হযরত আবু সাঈদ খাযযার (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত আবু সাঈদ খাযযার (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি দিনে মাত্র একবার খেতেন। কিন্তু একবার দিনে অনাহারে থাকেন। আর দুর্বলতাবশতঃ এক জায়গায় বসে পড়েন। তখন অদৃশ্য আওয়াজ শোনা যায়, তুমি খাদ্য চাও না শক্তি? শক্তি কামনা করলেন। আর সত্যিই তাঁর মধ্যে এমন প্রবল শক্তি অনুভূত হল যে, অভুক্ত অবস্থায় তিনি বারো মঞ্জিল পথ পার হয়ে গেলেন।
এক নদী তীরে একজনের সঙ্গে তাঁর দেখা। লোকটির পরনে দরবেশী জোব্বা। হাতে দোয়াত-কলম। হয়ত কোন সাধক হবেন। অথবা কোন ধর্মতত্ত্ববিদ। এরূপ ধারণা করে তিনি তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, আল্লাহকে পাওয়ার মতো পথ কি? সে বলল, দুটি পথ আছে। একটি সাধারণ লোকের জন্য, অন্যটি বিশেষ লোকদের জন্য। তবে আপনি যে পথের অনুসারী, তা সাধারণ জনতার পথ। কেননা, আপনি এবাদতকেই মিলনের উপলক্ষ্য ও ধন-সম্পদকে তার পর্দাস্বরূপ মনে করেন।
একবার এক বনে দশটি শিকারী কুকুর তাঁকে ধরে। উপায়ন্তর না দেখে তিনি মোরাকাবায় বসে গেলেন। তখন কোথা থেকে একটি সাদা কুকুর এসে অন্য কুকুরগুলিকে তাড়িয়ে দিয়ে তাঁর কাছে দাঁড়ায়। তারপর তিনি যখন গন্তব্য স্থানের দিকে রওয়া দিলেন, তখন সে তাঁকে কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
হযরত আবু সাঈদ (রঃ) বলেন, আল্লাহ যখন কাউকে বন্ধুরূপে মনোনীত করেন, তখন তার জন্য ধ্যানের দুয়ার খুলে দেন। তারপর তাকে তওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। আর তাঁর ওপর নিজের মহত্ত্ব প্রকাশ করেন। আর বন্ধু যখন তা দর্শন করেন, তখন আমিত্ব ভুলে গিয়ে তিনি তাঁর মধ্যেই শরণ নেন।
তিনি বলেন, সাধনার প্রথম স্তর ছিল দীনতা। বিনয়ের সঙ্গে অস্থির চিত্ততা, তারপর পরম বন্ধুর মিলন লাভের আনন্দ। তারপর সচেতন দৃষ্টি নিয়ে প্রেমিকের প্রেমে হারিয়ে যাওয়া। অবশেষে প্রেমিকের সঙ্গে স্থায়ী মিলনের প্রতীক্ষায় থাকা। এই স্তরের ওপরে কেউ পৌঁছাতে পারেননি। রাসূল (সাঃ) ও কী নয়? হ্যাঁ, তিনি পৌছেছে তবে তা হল শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার পরিমাণ। যেমন বলা হয়, নিখিল বিশ্বের ওপর আল্লাহর জ্যোতি একবার মাত্র পতিত হয়। কিন্তু হযরত আবু বকর (রঃ)-এর প্রতি পতিত হয়েছিল একশ বার।
একবার তাঁর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে হযরত আব্বাস মুহতাদী (রঃ) বলেন, প্রভুর পৃথিবীতে বাস করে, পৃথিবীর নদী-নালার পানি ব্যবহার করে ধর্মনিষ্ঠার কথা উচ্চারণ করতে লজ্জা করে না? তাঁর কথা শুনে হযরত আবু সাঈদ খাযযার (রঃ) লজ্জায় মাথা নিচু করে বললেন, আপনি সত্যিই খাঁটি কথা বলেছেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া