হযরত আবু সাঈদ খাযযার (রঃ) – পর্ব ২
হযরত আবু সাঈদ খাযযার (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত আবু সাঈদ (রঃ)-এর দুটি পুত্র ছিল। একজন তাঁর জীবিতকালে মারা যান। মৃত পুত্রকে স্বপ্নে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন। ছেলে বললেন, তিনি আমাকে তাঁর দরবারে ঠাই দিয়েছেন। আবু সাঈদ (রঃ) আবারও বললেন, আমাকে কিছু উপদেশ দাও। পুত্র বলল, কপট অন্তর নিয়ে আল্লাহকে কোন আচরণ প্রদর্শন করবেন না।
আবু সাঈদ (রঃ) বলেন, আরও কিছু বল। পুত্র বললেন, আরও বললেন আপনি তা কাজে পরিণত করতে পারবেন না। পিতা বললেন, কাজে পরিণত করার জন্য আমি আল্লাহর দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করছি। পুত্র বলল, আল্লাহর উপাসনা করার জন্য সর্বদা মনকে স্বাভাবিক রাখবেন। আর একটির বেশী জামা কখনও ব্যবহার করবেন না। শোনা যায়, সেদিন থেকে আমৃত্যু ত্রিশ বছর তিনি কোনদিন একটির বেশী জামা ব্যবহার করেননি।
একবার তাঁর মনে পার্থিব কিছু বস্তুর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু অদৃশ্য বাণীর মাধ্যমে তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, আল্লাহর দরবারে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য প্রার্থনা সমীচীন নয়। তিনি বলতেন, আল্লাহ যখন আমাদের রুজিদাতা, তখন আগামীকালের জন্য কিছু সঞ্চিত রাখা লজ্জার বিষয়।
একবার পথ চলতে চলতে তিনি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। রিপু তাঁকে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করার তাগাদা দেয়। তিনি শুনলেন না। তখন রিপু অন্যভাবে তাঁকে প্রতারিত করে। রিপু বলে, খাদ্য না চাও, অন্তত আল্লাহর কাছে ধৈর্য্য ভিক্ষা কর। তিনি ধৈর্যের প্রার্থনা করতে উদ্যত হয়েছেন। আর তখনই তাঁর মনে ভাবান্তর সৃষ্টি হয়। তিনি অদৃশ্য বাণী শুনতে পেলেন, আমার বন্ধু জানেন যে, আমি তাঁর খুব কাছে আছি। আর এ সত্য যে, যে আমার দিকে এগিয়ে আসে, আমি তাকে ধ্বংসে করি না। আমার নিকট খাদ্য চাইতে তার মন চায় না। কেননা, খাদ্য আমার সাহায্যে ছাড়া সবরও করতে পারে না। আমি এমন লোককে কখনও বিনষ্ট করি না।
এভাবে প্রবৃত্তির সঙ্গে যুঝতে যুঝতে তিনি একটি খেজুরের বাগানে হাজির হলেন। বাগান দেখে প্রবৃত্তি কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করে। কিন্তু তিনি ওদিকে না গিয়ে নেমে পড়লেন মাঠে। এ সময় কাফেলার একটি লোক জোর করে তাকে ধরে নিয়ে এল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি যে এখানে এসছি, তা তুমি জানলে কী করে? সে বলল, আমি অদৃশ্য শব্দের নির্দেশে এখানে এসেছি। ঐ শব্দ আমাকে বলে যে, আল্লাহর এক বন্ধু এক বালুস্তুপের আড়ালে আত্মগোপন করে আছে। তাকে গিয়ে নিয়ে এস।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া