হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ১
মালেকী মাযহাবের বিশিষ্ট তাপস হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) যেমন একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত, তেমনি আল্লাহ্ প্রেমিক সাধক ছিলেন। মানুষকে তিনি শরীয়তের পথ নির্দেশ দিতেন। আর তরীকতের ক্ষেত্রে ছিলেন এক অদ্বিতীয় পুরুষ।
তিনি বহু হাদীস গ্রন্থ পাঠ করেন। নিজেও গ্রন্থকার ছিলেন। তিনি বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন বলে বহুজনের বিশ্বাস। অবশ্য এ বিষয়ে কিছুটা মতানৈক্যও আছে। জন্ম সন হিজরী ৩৪৪। মৃত্যুবরণ করেন ৭৭ বছর বয়সে।
দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তিনি হাদীস ও ফেকাহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শিক্ষার আলো সূর্যরশ্মির মতো তাঁর বুকে আশ্রয় নেয়। অতঃপর আল্লাহকে পাওয়ার ইচ্ছা তীব্রতর হয়। তিনি পর পর বিভিন্ন পীরের কাছে যান। কিন্তু কেউই তাঁকে দীক্ষা দেননি। কেননা, তাঁদের সে পথের সন্ধান জানা ছিল না। আর তিনিই তাঁদের বলেন, আপনারা, রয়েছেন অন্ধকারে। অথচ আমার অবস্থান আলোর মধ্যে। বলাবাহুল্য তাঁরা বিরক্ত হন।
অজ্ঞ লোকের নিগ্রহও সহ্য করতে হয় তাঁকে। বহু শত্রু সৃষ্টি হয়ে গেল। তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। কেননা, তাঁর কিছু কিছু উক্তি ছিল হযরত মানসুর হাল্লাজ (রঃ)-এর উক্তির অনুরূপ। প্রথম দিকে তিনি ছিলেন বাগদাদের খলীফাধীন নেহাওয়ান্দ প্রদেশের শাসক।
বাগদাদে একবার শাহী সম্মেলন হয়। বিভিন্ন প্রদেশের শাসকগণ সম্মেলনে যোগদান করেন। খলীফা তাঁদের মূল্যবান পোশাক উপহার দিয়ে সম্মানিত করেন। কিন্তু একজন শাসক হাঁচির পর ঐ পোশাক দিয়ে নাক-মুখ মুছলে সেটি তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট শাসকও বরখাস্ত হন।
এ ঘটনাটি প্রতাক্ষ করে হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) ভাবতে থাকেন, মানুষের দেয়া উপহারের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে যদি পদচ্যুত হতে হয়, তা হলে সমগ্র সৃষ্টির বাদশাহর সঙ্গে বেআদবী করলে তার অবস্থা যে কিরূপ হবে তা তিনিই জানেন। অতঃপর তিনি বাগদাদের খলীফার সম্মুখীন হয়ে বললেন, আপনার দেয়া উপহারের কেউ অবমাননা করুক এ আপনি চান না, অথচ আপনার উপহারের মূল্য কী, আমি জানি। এবার আমার কথাটা ভেবে দেখুন। বাদশাহরও যিনি বাদশাহ, তিনি আমাকে যে মহার্ঘ প্রেম ও মারেফাত উপহার দিয়েছেন, কোন পার্থিব উপহার গ্রহণ করে প্রভুর সেই মহান উপহারের অবমাননা করতে পারি কি? আমার দ্বারা তা সম্ভব নয় বলে শাহী সম্মেলন থেকে তিনি বেরিয়ে এলেন। আর সরাসরি হযরত খায়র নাসসাজ (রঃ)-এর দরবারে গিয়ে দীক্ষা গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর হযরত খায়রে নাসসাজ (রঃ) তাঁকে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর দরবারে পাঠিয়ে দেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া