হযরত আবু বকর (রাঃ) মদীনায় হিজরত-পর্ব ১
কাফির ও মুশরিকদের অরতাচার দিন দিন বৃদ্ধি পেতে দেখে হযরত আবু বকর (রাঃ) পুনরায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় মদীনায় ইসলামের আলো জ্বলে উঠেছিল এবং সেখানকার অধিবাসীগণ মহব্বত ও নিষ্ঠা সহকারে নির্যাতিত মুসলমানদের আশ্রয় দিচ্ছিল। তাই হযরত আবু বকর (রাঃ) মদীনায় যাবার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত হতে থাকেন, কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আদেশ দিলেন, “এত তাড়াহুড়া করো না। সম্ভবত আমার প্রতিও হিজরতের হুকুম নাযিল হতে পারে।”
হযরত আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমার প্রতিও কি হিজরতের হুমুক নাজিল হবে?” হুজুর (সাঃ) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তিনি আরজ করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমি সে সময় আপনার সঙ্গী হতে চাই। ” হুজুর (সাঃ) বললেন, “হ্যাঁ তুমি আমার সাথে যাবে।” এ সুসংবাদ শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর যাত্রা স্থগিত করলেন এবং চার মাসকাল নির্দেশের অপেক্ষায় রইলেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, “হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যাবেলা হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর বাড়িতে আসতেন। একদিন তিনি তাঁর নিত্যকার অভ্যাসের বিপরীত অসময়ে মুখ ঢেকে আসেন এবং অপর সকলকে দূরে সরিয়ে দিয়ে কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) জানান যে, পরিবার-পরিজন ছাড়া সেখানে অন্য কেউ নেই, তিনি হুজুর (সাঃ) – কে ঘরে যাবার জন্য অনুরোধ করেন। হুজুর (সাঃ) জানান যে, হিজরতের নির্দেশ এসেছে। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর সঙ্গী হওয়ার আবেদন পেশ করেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর তৈরি হবার নির্দেশ দিয়ে তিনি ঝটপট তৈরি হয়ে আসলেন। চার মাস থেকে তো তিনি এ সুযোগেরই প্রতীক্ষায় ছিলেন।”
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এবং হযরত আসমা (রাঃ) সফরের মালপত্র বেঁধে দিলেন। বাঁধার জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে রশি না পেয়ে আসমা (রাঃ) নিজের কোমরবন্দ ছিঁড়ে ব্যাবহার করলেন। তাই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে ‘ইজার বন্দওয়ালী’ বলে উপাধি দান করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) পূর্ব থেকেই দুটি উট হিজরতের জন্য তৈরি করে রেখেছিলেন। একটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – কে পেশ করলেন, অপরটিতে নিজে আরোহণ করলেন এবং এভাবেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) মদীনায় রওনা হলেন।
হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ (রাঃ) – কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি যেন দিনের বেলায় মক্কায় যা যা ঘটে রাতের বেলায় তার বিবরণ জানিয়ে আসেন। তিনি তাঁর গোলাম আমের বিন ফাহীরা (রাঃ) – কে মক্কার চারণ ভুমিতে মেষ চরানো ও রাতের বেলা মেষগুলোকে গুহার কাছে নিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। তাই সকালবেলা হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) গুহা থেকে মক্কায় ফিরে যাবার পর হযরত আমের বিন ফাহীরা (রাঃ) ঐ পথের উপর দিয়ে মেষগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে যেতেন। এর ফলে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) – এর পায়ের চিহ্নগুলো মুছে যেত। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ) রাত্রিকালে বকরীর দুধ পান করতেন। এভাবে তিন দিন ও তিন রাত কেটে গেল। মক্কাবাসী বিন্দুমাত্রও সন্দেহ করতে পারেনি।
এদিকে মক্কার কাফিররাও নিশ্চিত ছিল না। যে রাত্রিতে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হিজরত করেন, সে রাত্রিতেই কুরাইশদের পরামর্শ সভায় তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তাই আবু জেহেল প্রমুখ দুশমন সারারাত হুজুর (সাঃ) – এর বাড়ি ঘিরে রাখে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তারা যখন বাড়িতে প্রবেশ করে তখন তাদের শিকার হাতছাড়া হয়ে গেছে। সেখান থেকে তারা হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর বাসগৃহে গেল এবং আসমা (রাঃ) – এর কাছে তাঁর খবর জিজ্ঞেস করল। তিনি এ বিষয়ে অবজ্ঞা প্রকাশ করলে আবু জেহেল রাগান্বিত হয়ে তাঁকে জোরে একটি থাপ্পড় মারল। তার বিশ্বাস ছিল যে, দু’জন যেখানেই যাক একত্রেই থাকবেন।
হযরত আবু বকর (রাঃ) মদীনায় হিজরত-পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন