হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ৪
হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
(১৮) যার লক্ষ্য তওহীদভ্রষ্ট হয়ে অন্য দিকে চলে গেছে, সে অপদস্থতাঁর কূপে নিমজ্জিত হয়েছে।
(১৯) দাস চার শ্রেনীর। যথা (১) যে চেনে, জানে পেতেও চায়, (২) পেতে চায় কিন্তু পায় না, (৩) পায়, কিন্তু পেয়েও ফায়দা তুলতে পারে না ও (৪) চেনে, জানে, কিন্তু পেতে চায় না।
(২০) প্রতিশ্রুতি রক্ষায় যে বদ্ধপরিকর, পৃথিবীর কোন পরিবর্তনে তাঁর পরোয়া নেই।
(২১) প্রতিটি অস্তিত্বশীল বস্তুর সবচেয়ে বড় পর্দা হল তাঁর অস্তিত্ব।
(২২) হৃদয়ে হক প্রকাশের পর আশা- নিরাশা বিলুপ্ত হয়।
(২৩) যখন হৃদয়ে ওপর প্রভুত্বের আলো পড়ে, তখন পৃথিবীর যাবতীয় বিষয় ধ্বংস হয়।
(২৪) আল্লাহর সঙ্গে এমন একটা সময়ে আমার মিলন হয়, যখন আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকে না।
(২৫) যেকোন সৃষ্ট বস্তু- তা যত বড়ই হোক না কেন- আল্লাহর দরবারে পৌঁছে আর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রে হয়ে যায়।
(২৬) আল্লাহর মাহাত্ম্য এমন বস্তু যে, তাঁর সঙ্গে কেউ প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম নয়,
(২৭) জান্নাতের আশায় যারা এবাদত করে, তাঁরা মনে করে যে, আল্লাহর কাজ করছে। আসলে তাঁরা শুধু নিজেদের কাজ করছে।
(২৮) আল্লাহর যিকির করছেন যিনি তিনি আল্লাহ থেকে দূরে রয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন, যে আল্লাহর সন্ধান পেয়েছে সে একেবারে বোবা হয়ে গেছে।
(২৯) আল্লাহর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের প্রকৃত অর্থ হল , দু’জাহানের যাবতীয় কার্যকারণ ও উসিলার মুখাপেক্ষী না হয়ে শুধু আল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে থাকা।
(৩০) মানুষের শরীর হল অন্ধকার ঘর আর তাঁর অন্তর হল প্রদীপতুল্য। যার ঘরে প্রদীপ নেই, সে চিরকাল অন্ধকারেই বাস করে।
(৩১) আমি এমন আল্লাহর প্রতি খুশী নই, যিনি আমার এবাদতে খুশী এবং আমার নাফরমানীতে অসন্তুষ্ট হন। বরং বন্ধু আযলের দিন থেকেই বন্ধু এবং শত্রু আযলের দিন থেকেই শত্রু।
(৩২) সে ব্যক্তি কোন বস্তুর মুখাপেক্ষী নয়, যে সকলকেই আল্লাহর অধীকার-ভুক্ত বলে মনে করে।
(৩৩) অন্তরের স্থায়ীত্ব আল্লাহর সঙ্গে সুসংবদ্ধ। কাজেই আল্লাহর ভেতরেই বিলীন হওয়া চাই।
(৩৪) প্রবৃত্তির পদস্খলন দেখেন প্রবৃত্তিকে ভৎর্সনা করা শিরকের নামান্তর।
(৩৫) যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবৃত্তিগত কামনা-বাসনা বিরাজমান, ততক্ষণ মোশাহাদার কোন মূল্য নেই। আর আল্লাহর সঙ্গে প্রকৃত ভালোবাসারও সৃষ্টি হয় না। বরং সত্যিকারের প্রেম হল আল্লাহর মোরাকাবা ও মোশাহাদায় মধ্যে এমনভাবে মগ্ন হওয়া যে, সবকিছু ভুলে গিয়ে শুধু আল্লাহর প্রেমে নিজেকে বিলীন করে দেয়।
(৩৬) প্রেম ছাড়া আল্লাহর সমস্ত সেফাতের মধ্যে রহমত নিহিত রয়েছে।
(৩৭) মকবুল তওবা হল সেই তওবা যা পাপের পূর্বে করা হয়।
(৩৮) যার মনে আশা নিরাশা দুইই রয়েছে, সে কখনও বেআদবী করতে পারে না।
(৩৯) নাসুন তওবা হল, তওবাকারীর প্রকাশ্য গুপ্ত কোন দিকেই পাপের আসর বাকী থাকে না। আর যাও তওবা নাসুল হাসিল হয়ে যায় সে সবকিছু থেকে নির্ভয় হয়ে যায়।
(৪০) যে দুনিয়াত্যাগী মানুষের কাছে ত্যাগের বড়াই করে, সে কেবল মুখে ত্যাগের দাবী করে। আসলে ত্যাগী নয়। কেননা, যার মনে পার্থিব গৌরবে লালসা নেই, সে মানুষের সামনে কখনও বড়াই করতে যায় না।
(৪১) যে যাহেদ, তাঁর মুখে এরূপ কথা শোভনীয় ও সঙ্গত নয় যে, আমি অমুক বস্তুকে খুবই খারাপ মনে করি।
(৪২) সে-ই মানুষ, যার অন্তর পরিষ্কার ও কথা নির্ভরযোগ্য।
(৪৩) কারও মধ্যে আল্লাহর মারেফাত ততক্ষণ পর্যন্ত হাসিল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর মধ্যে নমনীয়তা ও বিনয়ের অভ্যাস ফিরে আসে।
(৪৪) যে ব্যক্তি আল্লাহকে চিনেছে, সে অন্য কারও সাথে সম্পর্ক রাখে না। কারও সাথে আলাপও করে না।
(৪৫) এবাদত ও পায়রবী করে তাঁর বদলা কামনা করা আল্লাহর অনুগ্রহ ভুলে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
(৪৬) তত্ত্বজ্ঞানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সদা তৎপর, আর এ পথেই তিনি তাঁর জীবন ব্যয় করেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া