হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত আবু বকর ওয়াসেতী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
(৮) যদি কেউ বলে যে, আমি আল্লাহকে জেনেছি ও চিনেছি তবে তা অজ্ঞতার শামিল।
মূলতঃ আল্লাহর অস্তিত্ব ও তওহীদের আবিষ্কার মানুষের শক্তি সাধ্যের বাইরে। কেননা, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক বা সমকক্ষ নেই (ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু)- এর সুসঙ্গত স্বাভাবিক দাবী হল উপাস্য শক্তির সৃষ্ট বস্তুর সঙ্গে যৌন্তিক যা হযরত মূসা (আঃ)-এর লাঠির ছিল ফেরাউনের জাদুকরদের সাপের সঙ্গে।
(৯) আল্লাহর জ্যোতিতে সকল বস্তু নিজের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে এ কথা বলে যাচ্ছে, তাঁর অস্তিত্বের ময়দানে প্রবেশ করতে যেও না। তা হলে কিন্তু তাঁর সম্মানের আগুন তোমাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেবে।
(১০) ইবলীস শয়তান বলে, আমার চেহারাকে আয়না বানিয়ে তোমার সামনে এবং তোমার চেহারাকে আয়না বানিয়ে আমার সামনে রাখা হয়েছে। তাই আমি তোমাকে দেখে কান্নাকাটি করি আর তুমি আমাকে দেখে হাস্যকর। ইবলীসের এ কথা শুনে বলতে হয়, তাঁর কাছ থেকেই তরীকত শেখা দরকার- যে আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করেনি। এ জন্য সে দু’জাহানের অভিশাপ কুড়িয়েছে, কিন্তু কখনও নীতি ভ্রষ্ট হয়নি। কিন্তু তুমি তোমার মনকে জিজ্ঞেস করে দেখ, তুমি তোমার কোন উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে তাঁর মতো দু’জাহানের অভিসম্পাত উপেক্ষা করতে পারবে কি? যদি এ বিষয়ে তুমি নিশ্চিত হও যে, ঐ অভিশাপ কিংবা তিরষ্কার-ভৎর্সনা তোমাকে বিচলিত করতে পারবে না, তা হলে আল্লাহর নাম নিয়ে তওহীদের শরবত পান করে কমর বেঁধে ফেল। আর যদি দুনিয়ার মতো তুচ্ছ বস্তুকে আকর্ষণের দৃষ্টিতে দেখ, তাহলে বুঝে নাও যে, নিশ্চয় তুমি আমি কি তোমাদের প্রভু তুচ্ছ নই- এর জবাবে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেললে। তুমি যদি সামান্যতম নাফরমানীর পথেও অগ্রসর হও, তা হলে আল্লাহর সঙ্গে তোমার পূর্ণ বন্ধুত্ব বহাল থাকল না।
(১১) তুমি তাঁর প্রত্যাশা করো না যে নিজে তোমার প্রত্যাশা করে। (যেমন জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি) বরং আল্লাহর নিকট এমন জিনিস চাও, যা হাসিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু তোমার সামনে হাজির হয়ে যায়।
(১২) আল্লাহর প্রকৃত দাস তিনিই, যার কথাবার্তার মূল উৎস রাসূলুল্লাহর শিক্ষা ও আদর্শ আর তাঁর কথার দ্বারা কারও মনে ব্যাথা বা দুঃখ সৃষ্টি হয় না। এবং তাঁর কথা পক্ষ ও বিপুল উভয় দলের শান্তির কারণ হয়। মোট কথা তাঁর কথা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী হয়ে থাকে। আর যে শক্তি নিজের প্রবৃত্তি ইঙ্গিত অনুযায়ী কথা বলে, তাঁর কথার দ্বারা অহমিকা ও দর্পের ভাব প্রকাশ পেয়ে থাকে। যা মানুষের মনকে আহত করে।
(১৩) শিরক মিশ্রিত এমন এক এবাদত আছে, যা বিষ-মিশ্রত সমিষ্ট শরবত। এর মাধ্যমে কেউ অলৌকিক ক্ষমতা ভাল করে, কেউ হেকমত লাভ করে। কেউ বা অন্য কিছুর অধিকারী হয়। কিন্তু যা আসল লক্ষ্য তা কোনক্রমেই সফল হয় না।
(১৪) সত্য প্রকাশিত হলে জ্ঞানের আর অস্তিত্ব থাকে না। সত্য যত কাছে আসতে থাকে, জ্ঞানও তত দূরে সরতে থাকে। জ্ঞান নিজে দুর্বলের মাধ্যমে যা পাওয়া যায়, তা-ও ততটা দুর্বল হয়।
(১৫) যে তওহীদ উপলব্ধি করেছে, অভীষ্ট পূরণে সে সক্ষম হয়েছে।
(১৬) পাপ ছোট আর বড় যা-ই হোক, এনায়েত আর বেলায়েতের শেকড় কেটে দেয়।
(১৭) আল্লাহ তাঁর দাসকে দুর্বল, দুঃখ ও অভাবগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে চান, ধনে, জনে, বিদ্যা গৌরবে গৌরাবান্বিত দেখতে ভালোবাসেন না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া